আমার দূরবেশী
আমার দূরবেশীর চোখ বৃষ্টির পবিত্রতায় কাঁদে
আমার দূরবেশীর বুক আগুনের শিখা হাতে হাসে
আর আমি তার বিস্ময়ে জাগিয়ে রাখি অধিক সত্য
সুন্দর আমার স্বপক্ষে জ্বালিয়ে গেলো সুনিপুণ আলো
স্বপ্ন আমার বিপরীতে রেখে গেছে চিরন্তন অন্ধকার
যেন পৃথক দেয়ালে বেঁচে থাকা পরস্পর ভুল
যেন বৃত্তের বাইরে গেঁথে রাখা সময়ের শপথ…
আমার দূরবেশীর ঠোঁটে লেগে আছে ঘামের গন্ধ
আমার দূরবেশীর ঘুমে ফুটে থাকে অলৌকিক প্রেম
আর আমি তার মুগ্ধতায় কাঁপিয়ে দিই অধিক অহংকার
দূরত্ব আমার পক্ষে মুখর করলো অহর্নিশ হাহাকার
মৃত্যু আমার বিপরীতে গড়ে গেলো মৌন ইতিহাস
যেন অনাদিকাল বহমান রক্তের ভেতর রক্তপাত
যেন ঘুমহীন ঘুমের ভেতর যাযকের শুভ্রপাপ…।
*****************************************************************************************************************
স্নান
ভেঙে ফেলো ভেদমন্ত্র, জোছনার মর্মজ্ঞানে একাত্ম হও
শরৎশুভ্রতায় শুদ্ধ করো আত্মাসকল
আমাদের রাতজুড়ে নক্ষত্রের ব্যবচ্ছেদ দেখে
পাঠ করো চুড়ান্ত সঙ্গমের গান
যে পথে সপ্রতিভ সমুদ্রের উত্তেজনা প্রায়শ: মুখর
প্রসিদ্ধ আঁধার ভেঙে তাতেই আবিষ্কার করো নব্য জলপথ
শয্যা পাতো এখানে, এখানেই সমস্নানে জ্বালিয়ে রাখো
তৃষ্ণার প্রমুগ্ধ আগুন।
******************************************************************************************************************
ভাষাচিত্র
আমার চোখে মেঘের জড়তা দেখে মুনিয়ার রাত স্থিরতা পায়
এবং ক্রমশ: নিবিড় হয় নির্বোধ অন্ধকার
আমি বুঝে গেছি তার বুকের অনুবাদ,
নিশ্বাসের রেখা ধরে ভীষণ বাঁধভাঙা
সে শুধু জানলো, পাহাড়ের নিরবতা ছেয়ে ভেসে গেছে
আসন্ন ঘামের এপিটাফ!
তাই হৃদয় জুড়ে চাঁদের কীর্তন,
হাওয়ার নৃত্য ও জোছনার নীল র্নিঝর
আমার বুকে উনুনের ঐর্শ্বয মেখে মুনিয়ার ভোর দীর্ঘ হলে
উষ্ণ জলে ভিজে যায় গোপন সড়ক
ফলে অক্লান্ত ঘোড়ার তীর্যকতায় ফুঁসে ওঠে নদীঅন্ধ প্রেমের চিত্রভাষা।
******************************************************************************************************************
সন্ধ্যার সৈকতে
যেদিন শামুকের খোলে কেঁদেছিল সুবর্ণ জন্মের তীর
স্বপ্নচূর্ণ ঢেউয়ের বুকে অজস্র গুহার অন্ধকার আমাকে
ভয়ানক বন্ধুত্বের লোভ দেখিয়েছিল স্নানের আগে
সেইসব বালিরঙ সন্ধ্যার সৈকতে
বিষণ্ণ সুন্দরের উড়াউড়ি দেখে আমি
নীল আর গোধুলির মর্মার্থ করেছিলাম
আহত জলের ঢেউখেলায় বুঝতে পারিনি
আমার চোখে জমে থাকা অশ্রুর দুঃখ পরিচিতি
অথচ প্রতিদিন সমুদ্রসভায় জলের ভিতর আগুন দেখে কেঁপে উঠি
নক্ষত্র খসে পড়ার বিকল্প বেদনারাতে মাপতে গিয়ে শুন্যতা
পৃথিবীর সব অবসাদ এখানে গেঁথে আছে দৃষ্টির কাঁচে…
******************************************************************************************************************
মা
আমার শোবার ঘরে টাঙানো আছে বাবার কোমল পোর্ট্রেট
ধুলোমাখা জীবন নিয়ে মা রক্তশুন্য দৃষ্টি ফেলে তা তে রোজ
তীরে ভীড়া নতুন জাহাজ দেখার মতো তাকিয়ে থাকে অবাক চোখে
প্রতিদিন ভোরে আমি অনুবাদ করি সেইসব শোকের মাতম
মায়ের কাছে ঘনিষ্ট ছায়ার আকুতি জানিয়ে গেলে আগুনের শিরোনাম
বেঁচে থাকার তুমুল দর্শণে আমার চোখে ভেঙে পড়ে অন্ধ অক্ষরের আয়ু
কতদিন নদীসন্ধ্যার পাহাড় ঘেঁষে নরম সূর্যের বিস্মৃত মুখ দেখে
ভুলে থাকা যায় স্নেহসিক্ত শীতের বিষণ্ণ রোদ !
এখনো পাখিরা ডাকলে মনে হয় তাঁর উজ্জ্বল পায়চারি
সুদূরের আত্মমগ্নতায় মা’কে পার করতে দেখেছি অসহ্য প্রহর
আর মৃত্যুর কাছ থেকে আমিও শিখে গেছি শব্দহীনতার ভাষা
দেখেছি ঘরময় জেগে থাকা শ্মশানের মতো করুণ সুন্দর
নিয়তিমধুর আঘাত সয়ে আমি যদিও বেড়ে উঠি উত্তরপ্রেমে
মায়ের চোখে শবযাত্রার দৃশ্যগুলো
এখনো পাথরের মতো রঙিন বিষাদ।
==================================================================================
লেখক পরিচিতিঃ
আলী প্রয়াস
জন্ম: ২৬ মার্চ ১৯৭৯, লম্বরী, টেকনাফ, কক্সবাজার।
প্রকাশিত গ্রন্থ:
নুড়িপাথরের ঘ্রাণ ২০০৭ (কাব্য)
জলপাহাড়ের ভূগোল ২০১৫ (কাব্য)
গ্রন্থাগার ভাবনা ২০১৫ (প্রবন্ধ)
বালক ও বুলেট ২০১৬(উপন্যাস)
সম্পাদনা :
তৃতীয় চোখ
লেখাপড়া:
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর
তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনায় স্নাতকোত্তর
পেশা:
গ্রন্থাগার ও তথ্য কর্মকর্তা।