নীল জল আর পাহাড়ের হাতছানি উপেক্ষা করা কঠিন, রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদ তাই পর্যটকদের প্রিয় স্থান। ছবিটি কাপ্তাই হ্রদের সার্কিট হাউস এলাকা থেকে ৬ সেপ্টেম্বর তোলা l প্রথম আলোজলে ডোবা পাহাড়ের ওপর ছায়াচ্ছন্ন মাচাং ঘর দেখতে চাইলে ঈদের টানা ছুটিতে চলে যেতে পারেন রাঙামাটি। ৭০০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের কাপ্তাই হ্রদের স্বচ্ছ জলরাশি হাতছানি উপেক্ষা করা সত্যি কঠিন। সারা দিন নৌকায় ঘুরে ঘুরে দেখুন পানকৌড়ি আর গাঙচিলের লুকোচুরি। এখন হ্রদের বুকে বেশ কিছু রেস্তোরাঁ ও রিসোর্ট গড়ে উঠেছে। সেসব স্থানে ভিড় করছেন পর্যটকেরা। তবে অনেকেই জানেন না, নৌকায় হ্রদে ঘুরতে কত ভাড়া গুনতে হবে? কোন রিসোর্টেই বা যাবেন?
রাঙামাটির পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সে রয়েছে তালিকাভুক্ত নৌযান। এসব নৌযানের ভাড়া নির্ভর করে নৌযানের আকার এবং ভ্রমণের সময়ের ওপর। রাঙামাটির হলিডে কমপ্লেক্সের ঝুলন্ত সেতুসংলগ্ন ঘাটে গেলেই এসব নৌযানের দেখা মিলবে।
এখানে তিন ধরনের নৌযান রয়েছে। ফাইবার গ্লাসের তৈরি বড় নৌযানে আসন আছে ১৬টি, মাঝারি নৌযানে আসন আছে ১২টি এবং ছোট কাঠের নৌকায় ছয়টি। ঘণ্টা হিসাবে এসব বোটের ভাড়া বড় নৌকায় ৫০০, মাঝারি নৌকায় ৪৫০ এবং ছোট নৌকায় ৩৫০ টাকা। তবে এসব নৌযানে নির্ধারিত এলাকার বাইরে যাওয়া যাবে না। এ ছাড়া পর্যটনকেন্দ্র দেখার জন্য রয়েছে ছয়টি প্যাকেজ। প্যাকেজে অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি পর্যটন স্পট দেখতে হবে ২৫ মিনিটে।
প্যাকেজ-১: এই প্যাকেজে ছয় ঘণ্টায় ঘোরা যাবে সুবলং ঝরনা, সুবলং সেনাবাহিনী বিনোদনকেন্দ্র, পাহাড়ি গ্রাম, পেদা টিংটিং, চাংপাং রেস্টুরেন্ট, গরবা রেস্টুরেন্ট ও মেজাং রেস্টুরেন্ট। এ প্যাকেজে বড় নৌযানে গেলে ভাড়া ২ হাজার ৭৫০ টাকা, মাঝারি নৌযানে ২ হাজার ৫০০ টাকা এবং ছোট নৌযানে ১ হাজার ৯৫০ টাকা।
প্যাকেজ-২: দিনব্যাপী এই প্যাকেজে রয়েছে সুবলং ঝরনা, রাজবাড়ি, সুবলং সেনাবাহিনী বিনোদনকেন্দ্র, পাহাড়ি গ্রাম, পেদা টিংটিং, চাংপাং রেস্টুরেন্ট, গরবা রেস্টুরেন্ট, মেজাং রেস্টুরেন্ট, টুকটুক ইকো ভিলেজ ও স্বর্গছড়া ইকো পার্ক। এ প্যাকেজের ভাড়া বড় ৩ হাজার ৫০০ টাকা, মাঝারি ৩ হাজার টাকা এবং ছোট ২ হাজার ৫০০ টাকা।
প্যাকেজ-৩: চার ঘণ্টাব্যাপী এই প্যাকেজের আওতায় যাওয়া যাবে সুবলং ঝরনা, চাংপাং রেস্টুরেন্ট ও গরবা রেস্টুরেন্টে। এই প্যাকেজে বড় নৌকায় ভাড়া পড়বে ২ হাজার, মাঝারি নৌকায় ১ হাজার ৮০০ টাকা এবং ছোট নৌকায় ১ হাজার ৪০০ টাকা।
প্যাকেজ-৪: এই প্যাকেজে সাড়ে পাঁচ ঘণ্টায় বেড়ানো যাবে সুবলং ঝরনা, রাজবাড়ি, পেদা টিংটিং, চাংপাং ও গরবা রেস্টুরেন্টে। ভাড়া বড় ২ হাজার ৭৫০ টাকা, মাঝারি ২ হাজার ৫০০ এবং ছোট ১ হাজার ৯৫০ টাকা।
প্যাকেজ-৫: চার ঘণ্টাব্যাপী এই প্যাকেজে রয়েছে রাজবাড়ি, পেদা টিংটিং, চাংপাং রেস্টুরেন্ট, টুকটুক ইকোভিলেজ ও মেজাং রেস্টুরেন্ট পরিদর্শন। ভাড়া বড় ২ হাজার, মাঝারি ১ হাজার ৮০০ টাকা ও ছোট ১ হাজার ৪০০ টাকা।
প্যাকেজ-৬: এই প্যাকেজে তিন ঘণ্টায় ঘুরতে পারবেন পেদা টিংটিং, টুকটুক ইকোভিলেজ ও চাংপাং রেস্টুরেন্ট। ভাড়া বড় নৌযানে ১ হাজার ৫০০ টাকা, মাঝারিতে ১ হাজার ৩৫০ টাকা ও ছোট নৌকায় ১ হাজার ৫০ টাকা।
এ ছাড়া পর্যটন ঘাট থেকে কাপ্তাই জেটিঘাট পর্যন্ত যেতে চাইলে ভাড়া পড়বে বড় নৌকায় তিন হাজার টাকা, মাঝারি নৌকায় ২ হাজার ৭০০ টাকা ও ছোট নৌকায় ২ হাজার ১০০ টাকা। কাপ্তাই নেভি ক্যাম্প পর্যটনকেন্দ্রে বড় নৌকায় যেতে চাইলে গুনতে হবে ২ হাজার ৫০০ টাকা, মাঝারি নৌকায় ২ হাজার ২৫০ টাকা ও ছোট নৌকায় ১ হাজার ৭৫০ টাকা। পর্যটন ঘাট থেকে বোট ভাড়ার জন্য যোগাযোগ করতে পারেন মো. রমজান আলী, ব্যবস্থাপক, পর্যটন নৌযান ঘাট, মুঠোফোন ০১৮২৩-০৭০৭৫২।
পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্স ঘাট ছাড়াও শহরের বনরূপা সমতাঘাট, রিজার্ভ বাজার ও তবলছড়ি লঞ্চঘাট থেকে নৌযান পাওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে দর-কষাকষি করে ভাড়া ঠিক করা দরকার। না হলে অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হতে পারে।
পর্যটন নৌঘাটের ব্যবস্থাপক মো. রমজান আলী বলেন, পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সের তালিকাভুক্ত নৌযানের সংখ্যা ১০০–এর বেশি। পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমণের জন্য এসব নৌযানে প্রশিক্ষিত চালক রয়েছেন। এ ছাড়া প্রতিটি নৌকায় লাইফ জ্যাকেট ও বয়া রয়েছে। তবে দুর্ঘটনায় পড়লে কী করা উচিত, সেসব বিষয়ে পর্যটকদের অবহিত করার ব্যাপারে নৌযানগুলোতে কোনো ব্যবস্থা নেই।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে রাঙামাটি ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, নৌযানে ভ্রমণের আগে অবশ্যই পর্যটকদের সতর্ক থাকতে হবে। সাঁতার না জানলে নৌযানে ভ্রমণ করা ঠিক নয়। এ ছাড়া চালক সনদপ্রাপ্ত কি না, লইফ জ্যাকেট আছে কি না দেখতে হবে। এ ছাড়া প্রতিটি নৌযানে পর্যটকদের জন্য লিখিত সতর্কবার্তা এবং প্রয়োজনীয় ফোন নম্বর, আগুন নেভানোর যন্ত্র, রশি, চাকু ও টর্চলাইট অবশ্যই রাখা উচিত বলে তিনি জানান।
নৌকায় ভ্রমণের সময় নিরাপত্তার জন্য রাখতে পারেন রাঙামাটি কোতোয়ালি থানা (০৩৫১-৬২০৬০), রাঙামাটি ফায়ার সার্ভিস (০৩৫১-৬২০২০) এবং রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের (০৩৫১-৬৩০৩০) ফোন নম্বর।
প্রতিবেদন: প্রথম আলো।