নেই স্রোত, নেই ঢেউ – তবুও ভাঙছে নদী। বিলীন হয়ে যাচ্ছে সবকিছু। নিঃস্ব হচ্ছে নদী তীরের মানুষ, কাঠালিয়ার বিষখালী নদীতে ড্রেজার মেশিন দিয়ে ভাঙন কবলিত এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় তীব্র হচ্ছে নদী ভাঙন। এ জন্য দায়ি করা হচ্ছে অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদেরকে। সন্ধ্যা হলেই নদীতে ড্রেজার নামিয়ে অবৈধ বালু ব্যবসায়ীরা বালু উত্তোলন করছে। কাঠালিয়ার ছৈলার চর এর পাসে থেকে” বিষখালী নদীতে ২০ থেকে ২৫ টি ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে শনিবার সন্ধ্যায় সরেজমিনে এ চিত্র দেখা গেছে।
গনমাধ্যম কর্মীদের ক্যামেরা দেখে বালু উত্তোলন বন্ধ করে পালাতে শুরু করে অবৈধ বালু ব্যবসায়ীরা। বালু উত্তোলনের ফলে কাঠালিয়া সদর ইউনিয়নের দহ্মিন আউরা গ্রামসহ আসে পাশের তিন থেকে চারটি গ্রামে তীব্র নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
নদী তীরের বাসিন্দারা জানান, ড্রেজার মেশিন দিয়ে সুগন্ধা ও বিষখালী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে প্রকাশ্যে। দিনে লুকোচুরি করলেও, রাতে প্রকাশ্যে চলছে ড্রেজার মেশিন। চোখের সামনে মানুষের সহায়-সম্পত্তি বিলীন হতে দেখেও তারা বালু উত্তোলন থেকে বিরত থাকছে না। বসত ভিটা, জলাশয় ও মাঠ ভরাটসহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি হচ্ছে এসব বালু। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে কাঠালিয়ার বিষখালী নদী তীরবর্তী গ্রামগুলো” নদীতে ভেঙে যাচ্ছে শহরের বিভিন্ন স্থাপনা, সড়ক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, ফসলী জমি ও বসতঘর। একদিকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন, অন্যদিকে ভাঙন কবলিত এলাকা থেকে মাটি কেটে ব্যবসা করছে এক শ্রেণির অসাধু লোক। এতে নদীতে অসময়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
বিষখালী নদীর পাড়ে বেড়িবাঁধ এলাকায় বেশ কয়েকটি গ্রামের অসংখ্য পরিবার ভিটেবাড়ি হারিয়েছে। নতুন করে ভাঙন দেখা দেওয়ায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন ওইসব এলাকার বাসিন্দারা। প্রশাসনিকভাবে বার বার নিষেধ করা সত্ত্বেও ক্ষমতার অপব্যবহার করে চলছে বালুর ব্যবসা। অবৈধ ড্রেজার মেশিন বন্ধের জন্য দফায় দফায় অভিযান করেও থামানো যাচ্ছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, ঝালকাঠি জেলায় বিষখালী নদীর ভাঙনে স্বাধীনতার পর থেকে বিলিন হয়েছে শত শত একর জমি।
জাতীয় পার্টির সভাপতি (জাপা) জাকির হোসেন মজনু বলেন, নদীতীরে গড়ে ওঠা কাঠালিয়া শহর ও আশেপাশে গ্রাম নদীতেই ভাঙছে। অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে দিন রাত অবাধে বালু উত্তোলন করছে একটি চক্র। তাদের কোনভাবেই থামানো যাচ্ছে না। প্রতিদিন ২০-২৫টি ড্রেজার দিয়ে নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে বালু উত্তোলন করায় ভেঙে যাচ্ছে নদী। অসংখ্য পরিবার গৃহহীন হয়েছে। শুধু জরিমানা করেই এদের ঠেকানো যাবে না। ড্রেজার জব্দ করে মালিককে বেশিদিন কারাদণ্ড দিলে বালু উত্তোলন থামানো যেতে পারে।
জাতীয় পার্টি জেপি সভাপতি এনায়েত হোসেন খসরু বলেন, আমাদের বাড়ি-ঘর সব নদীতে বিলিন হয়ে গেছে শুধু ড্রেজার দিয়ে বালু কাটায়। নদীতে কোন ডেউ নেই, স্রোত নেই এরপরেও কেন নদী ভাঙছে তা পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ দেখছেন না কেন। একমাত্র অবৈধভাবে ভাঙন এলাকা থেকে বালু উত্তোলন করায়ই নদী ভাঙছে। এটা প্রতিরোধ করা না হলে নদী ভাঙতেই থাকবে।
দক্ষিণ আউরার বাসিন্দা মোঃ বেলাতে পঞ্চায়েত বলেন, বালু উত্তোলনের সঙ্গে প্রভাবশালী একটি চক্র জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে কথা বলে না কেউ। তাদের টাকা আছে, আমরা গরিব মানুষ, কথা বললে বিপদে ফেলবে। আমরা নদী ভাঙন রোধে পদক্ষেপ চাই, পাশাপাশি অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।
ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী সাংবাদিকদের বলেন, ড্রেজার দিয়ে দিনের বেলায়ই নয়, প্রশাসনের নজর এড়াতে রাতেও বালু তোলা হচ্ছে নদী থেকে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। যাতে নদী থেকে অবৈধভাবে কেউ বালু উত্তোলন করতে না পারে, সেজন্য কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব হাসান বলেন, ইতোমধ্যে কয়েকটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। অল্প দিনের মধ্যেই ভাঙনকবলিত বেশকিছু এলাকায় কাজ শুরু হবে।