কবি আসাদ মান্নান বলেছেন, জ্ঞানের অনুসন্ধানে, জ্ঞানের গভীরে যিনি যান, তিনি এক জায়গায় থাকেন না শূণ্যতায় মিলিয়ে যান। তিনি শূণ্যতায় সবকিছুকে ধারণ করেন। জ্ঞান অনেষণে জ্ঞানের গভীরে যেতে হবে। অন্ধেরও চোখ আছে। তাঁর ভিতরে যে আলো আছে, সেটা জ্ঞানের শক্তি। বুধবার রাতে রামুর জ্ঞানান্বেষণ পাঠাগার মাঠে অনুষ্ঠিত ‘হেমন্ত উৎসবে’ তিনি এ কথা বলেন।
হেমন্ত বাঙালি কৃষকের ঘরে সোনালি ধান ও আনন্দ এনে দেয়। এই ঋতু কন্যাকে বরণ করতে বুধবার (১৬ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টায় রামুতে অনুষ্ঠিত হয় হেমন্ত উৎসব। রামু উপজেলার রাজারকুল ইউনিয়নের ‘জ্ঞানান্বেষণ পাঠাগার এ উৎসবের আয়োজন করে। কক্সবাজারের বরেণ্য শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সোমেশ্বর চক্রবর্তী হেমন্ত উৎসব উদ্বোধন করেন। সন্ধ্যা ৭টায় দলীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করা হয়।
উৎসবে ক্রেস্ট দিয়ে ছড়াকার ধনিরাম বড়ুয়া, ছড়াকার ও সাংবাদিক দর্পন বড়ুয়া, কবি নিলোৎপল বড়ুয়া, চিত্রশিল্পী সংগীত বড়ুয়া, কবি সজল দে, ইতিহাস লেখক শিরুপন বড়ুয়া, গল্পকার কান্তু শর্মা ও ছড়াকার কামাল হোসেনকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাংলাদেশ টেলিভিশনের সাবেক মহাপরিচালক কবি আসাদ মান্নান বলেন, মানুষ মানুষের ভয়ে আতংকগ্রস্থ। সারা পৃথিবীব্যাপী আতংক-অস্থিরতা। সবকিছু নিয়েই চলছে রাজনীতির খেলা। আজকের দিনে মায়েরা প্রতিনিয়ত প্রার্থনা করেন, আমার সন্তান যেন নিরাপদে থাকে।
জ্ঞানান্বেষন পাঠাগারের সভাপতি আব্দুল মান্নানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শিপ্ত বড়ুয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত হেমন্ত উৎসবে বিশেষ অতিথি ছিলেন, রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাহমিদা মুস্তফা, কন্ঠশিল্পী নাজমা মান্নান, ছড়াকার ধনিরাম বড়ুয়া, কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাহেদ সরওয়ার সোহেল। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তৃতা করেন, কক্সবাজার বেসরকারি গণপাঠাগার পরিষদের উপদেষ্টা কবি মানিক বৈরাগী।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধক অধ্যাপক সোমেশ্বর চক্রবর্তী বলেন, একটি পাঠাগার একটি আলোর মশাল, দিকে দিকে যে মশাল আলোর পথ দেখায়। আর তাদের উদ্যোগে হেমন্ত উৎসব পাড়াগাঁয়ে অনন্য সাধারণ আয়োজন।
তিনি বলেন, প্রজন্মের জ্ঞান, পরবর্তী প্রজন্ম সেই জ্ঞানের উপর দাঁড়িয়ে আরও বৃহত্তম জ্ঞান, ভিন্নতর জ্ঞান সংযোজন করে। এরও পরবর্তী প্রজন্ম যুগের পর যুগ জ্ঞানের পর জ্ঞান সঞ্চিত করে। কোনটা অবলুপ্ত হয়নি। তার একমাত্র কারণ হলো। লিপি আবিষ্কৃত হলো, ভাষা আবিষ্কৃত হলো। বই আসলো এবং জ্ঞান অনেষণের পরিধি বৃদ্ধি পেলো। যুগে যুগে এই জ্ঞান অবলুপ্ত হয়নি। গ্রন্থাগার হলো প্রকাণ্ড এক জ্ঞানের ভান্ডার।
বিশেষ ইউএনও ফাহমিদা মুস্তফা বলেন, আমরা পথ হারাবো না, আমরা পিছু হটবোনা। সকল বাঁধাবিঘ্নের মধ্যে, কষ্টের মধ্যে দিন শেষে, আমরা সবাই একসাথে হাঁসতে পারি। এই হাসিটা আমরা কখনো ভুলে যাবোনা। এই হেমন্ত উৎসব, তারই প্রমান দেয়।
কবি আসাদ মান্নান বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বড় বড় উৎসবে অংশ নেয়া হলেও এ উৎসবে নিজেকে খুঁজে পাওয়া গেলো। এ সময় তিনি জ্ঞানান্বেষণ পাঠাগার সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, জ্ঞানের দ্বীপ কখনই নিভে না। এ সময় তিনি পাঠাগারটির জন্যে বই প্রদানসহ বিভিন্ন সহযোগিতার কথা জানান।
আলোচনা সভা শেষে কবি কন্ঠে কবিতা, গান, নৃত্য ও নাটক মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে শেষ হয় রামুর জ্ঞানান্বেষণ পাঠাগারের হেমন্ত উৎসব।
উল্লেখ্য রামু উপজেলার বাঁকখালী নদী তীরবর্তী রাজারকুল ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম পূর্বরাজারকূল বড়ুয়া পাড়ায় ২০১৭ সালে কয়েকজন তরুন গড়ে তোলে জ্ঞানান্বেষণ পাঠাগার। বর্তমানে ৫ হাজারের অধিক বই আছে পাঠাগারটিতে।