শুভ মাঘী পূর্ণিমা আজ। এটি বৌদ্ধদের অন্যতম একটি তাৎপর্যময় পূর্ণিমা তিথি। এই পূর্ণিমা দিনেই ভারতের উত্তর প্রদেশের বৈশালীর চাপাল চৈত্যে তথাগত বুদ্ধ নিজেই তার মহাপরিনির্বাণ লাভের দিনক্ষণ ঘোষণা দেন। যাকে বৌদ্ধ পরিভাষায় বলা হয় আয়ু সংস্কার।
বৌদ্ধরা দিনটি উপোসথ শীল পালন, বুদ্ধপূজা দান, সংঘদান, বিহারে ধর্মীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন, প্রদীপ প্রজ্জলন, বিহারে আলোকসজ্জা, দেশ ও বিশ্বশান্তি কামনায় সমবেত উপাসনাসহ বিভিন্ন আয়োজনের মধ্য দিয়ে পুণ্যময় উদযাপন করে থাকেন।
আজকের এই দিনে তথাগতের মহাপরিনির্বাণ দিবস ঘোষণার পাশাপাশি আরো একটি অনন্য ঘটনা হলো আজকে বুদ্ধ ভিক্ষুসংঘকে প্রাতিমোক্ষ দেশনা করেছিলেন। প্রাতিমোক্ষ হলো বৌদ্ধ ভিক্ষুদের বিনয়-বিধান সম্বলিত একটি গ্রন্থ।
বুদ্ধ এই দিনে নিজের আয়ু বিসর্জনের ঘোষণা দেয়ার পেছনেও কারণ আছে। বৌদ্ধধর্মে মারের কথা উল্লেখ আছে। মার সবসময় বুদ্ধ শাসনের বিরুদ্ধে থাকেন। কারণ জগতে বুদ্ধ আবির্ভূত হলে মারেরা তেমন সুবিধা করতে পারে না। মানুষ পাপে, অধর্মে রমিত হওয়ার চাইতে পুণ্যে-ধর্মে বেশি রমিত হন। কারণ বুদ্ধ স্বয়ং সত্ত¡গণকে সেই হিতোপদেশ দিয়ে থাকেন। তখন জগতে মাররা অরাজকতা সৃষ্টি করতে পারে না। তারা কোনঠাসা হয়ে থাকে। তাই মার (অপশক্তি) সবসময় বুদ্ধ শাসনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। সিদ্ধার্থের গৃহ ত্যাগ, বুদ্ধত্ব লাভ, বুদ্ধত্ব লাভের পরপর সকল সময়ে মার বুদ্ধের পেছনে ছায়ার মতো লেগে থেকেছিল। সেদিনও বুদ্ধত্ব লাভের পরপর মার এলো বুদ্ধের কাছে। সুযোগ বুঝেই বুদ্ধকে মহাপরিনির্বাণ লাভের জন্য প্রার্থনা করে বসে। কিন্তু তখন সুবিধা করতে পারেনি। বুদ্ধ সেবারও তথাগতের এখনো পরিনির্বাণ লাভের সুযোগ নেই বলে কারণ দেখিয়ে মারকে ফিরিয়ে দিলেন। কিন্তু শেষবার বুদ্ধ যখন বৈশালীর চাপাল চৈত্যে অবস্থান করছিলেন তখন সেবক আনন্দ স্থবিরের অনোপস্থিতির সুযোগে মার তৃতীয় বারের মতো এসে আবার বুদ্ধকে প্রার্থনা জানালে বুদ্ধ মারের প্রার্থনা (মহাপরিনির্বাণ লাভের প্রার্থনা) গ্রহণ করলেন। মারকে লক্ষ্য করে বুদ্ধ ঘোষণা করলেন যে, “হে মার, তুমি নিশ্চিত হও, আজ থেকে তিনমাস পরে তথাগত বৈশাখী পূর্ণিমা তিথিতে মহাপরিনির্বাণ প্রাপ্ত হবেন।” সেদিন ছিল মাঘী পূর্ণিমা।
মাঘী পূর্ণিমা দিবসটি বিশ্ববৌদ্ধদের কাছে খুব একটা আনন্দের দিন নয়। আবার বৌদ্ধধর্মে শোকের পরিবর্তে প্রয়াত ব্যক্তির উদ্দেশে পুণ্যদান (সৎকর্ম) করতে বলা হয়েছে। শোকের পরিবর্তে আছে আত্মদর্শনের নির্দেশনা। আজ মরি কি মরি কাল, মরণের কি আছে কাল/ ঐ দেখ মৃত কায়, মম দশা হবে তায়, ভীষণ মরণ দায়/ ভেঙ্গে যাবে ভবখেলা, রবে না আনন্দ মেলা, কেন রে আপন ভোলা/ জন্মিলে মরিতে হবে, অমর নাহিক ভবে/ বাল-বৃদ্ধ-ধনীগণ, মানী-জ্ঞানী-অভাজন, মরিবে সকলজন/ অহোরাত্র আয়ু ক্ষয়, সবে যায় যমালয়, মৃত্যু কারো বশে নয়- বুদ্ধের এসব বাণী মূলত আত্মদর্শনের মর্মবাণী।