হাফিজুল ইসলাম চৌধুরী :
অবাধে বাড়ছে পলিথিনের ব্যবহার। আইন থাকলেও বাস্তবায়নে কোন পদক্ষেপ নেই। এজন্য সরকারের দায়িত্বহীনতাকেই দায়ী করছেন পরিবেশবাদীরা।
কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সরেজমিনে দেখা গেছে মুদি দোকান, কাঁচাবাজার, মাছ-মাংসের বাজার সর্বত্রই পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করছে ব্যবসায়ীরা। এর ব্যবহার সবচেয়ে বেশি হচ্ছে মাছ ও মাংসের বাজারে। ব্যবসায়ীরা নিষিদ্ধ পলিথিন বিক্রিতে যেমন পিছিয়ে নেই, স্বাভাবিকভাবে ক্রেতারাও অতি সস্তা হওয়ায় এটি ব্যবহারে অধিক আগ্রহী।
নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারী বাজারের মাছ বিক্রেতা আজিজুল হক বলেন, বাজারে যারা মাছ কিনতে আসে তারা পলিথিন ছাড়া মাছ নিতে চায় না। অন্যদিকে জালের ব্যাগে মাংস দিতে চাইলেও পলিথিন ব্যাগে দিতে বলেন ক্রেতারা।
আরেক বিক্রেতা জসিম উদ্দিনও জানালেন একই কথা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব দোকানে নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যাগ পৌঁছে দেয়ার জন্য কিছু অসাধু ব্যবসায়ী রয়েছেন। তারা চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন স্থান থেকে পলিথিন সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করে। মুদি ও কাঁচাবাজারের সঙ্গে সমান পাল্লা দিয়ে বিভিন্ন কাপড়ের দোকানেও পলিথিন ব্যবহার করছেন দোকানিরা।
তাছাড়া অধিকাংশ ক্রেতা ও বিক্রেতা জানেন না কোন ধরনের পলিথিন বিক্রয়, মজুদ ও ব্যবহার নিষিদ্ধ। এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোন প্রচার প্রচারণাও নেই।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রামু উপজেলার বৃহত্তর গর্জনিয়া বাজারে পলিথিন ব্যবসা জমজমাট। এক শ্রেণির কিছু অসাধু ব্যক্তি স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এ ব্যবসা পরিচালনা করছেন।
গর্জনিয়া বাজারের হাট বসে সোমবার ও বৃহস্পতিবার। আর এ সময় প্রকাশ্যে বাজারের খোলা সেডের ৩টি দোকানে অবাধে বিক্রি করা হয় পলিথিন ব্যাগ। এ ব্যবসা বড়রা পরিচালনা করলেও প্রায় সময় শিশুদেরকে ব্যবহার করছেন তারা।
কাঁচা ও শুকনো মাছ বাজার সহ বিভিন্ন মুদি দোখানেও চলছে পলিথিনের অবাধ ব্যবহার। এতে পরিবেশ চরম ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বলে স্বীকার করেছেন সচেতন মহল। তারা অতি দ্রুত পলিথিন ব্যবসা বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের শেষের দিকে আইন অনুযায়ী বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়। এরপর ১৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে আইন বাস্তবায়ন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এ বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কোন বাস্তব উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আইন অমান্যকারীদের ব্যাপারে শাস্তির বিধান থাকলেও ভ্রাম্যমাণ আদালতের কোন কার্যক্রম না থাকায় আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কোন ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। এর ফলে বর্তমানে বান্দরবান ও কক্সবাজরের বিভিন্ন উপজেলায় পলিথিনের অবাধ ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
১৯৯৫ সালের পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের ৬(ক) (সংশোধিত ২০০২) ধারার প্রদত্ত বলে ঘোষিত সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ‘যেকোন প্রকার পলিথিন ব্যাগ অর্থাৎ পলিথাইলিন, পলিপ্রায়ইলিন বা উহার কোন যৌগ বা মিশ্রণের তৈরি কোন ব্যাগ, ঠোঙা বা যেকোন ধারক যাহা কোন সামগ্রী ক্রয়-বিক্রয় বা কোন কিছু রাখার কাজে বা বহনের কাজে ব্যবহার করা যায় না, উহাদের উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাতকরণ, বিক্রয়, বিক্রয়ের জন্য প্রদর্শন, মজুদ, বিতরণ বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিবহন বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার সমগ্র দেশে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হইল।’
প্রজ্ঞাপনটিতে আরও উল্লেখ করা হয়, সাময়িকভাবে বিস্কুট চানাচুরসহ বিভিন্ন রকম খাদ্যদ্রব্য, ওষুধ, সিমেন্ট, সার শিল্পসহ মোট ১৪টি পণ্যে পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করা যাবে। তবে ১০০ মাইক্রোনের কম পুরুত্বের পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন করা যাবে না।
এই আইনের ১৫(১) এর ৪(ক) ধারা অনুযায়ী উৎপাদন, আমদানি ও বাজারজাতকরণের জন্য অপরাধীদের সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা ৬ মাসের কারাদন্ডের বিধান করা হয়।
২০০২ সালে নিষিদ্ধ আইন হওয়ার পর বিভিন্ন জেলা ও উপজেলাতে জোরালো অভিযান ও আইনের কঠোর প্রয়োগ করার ফলে পলিথিনের ব্যবহার শূন্যের কোটায় এসেছিল। কিন্তু পরবর্তীতে ২০০৬ সালের শেষ দিকে দেশের রাজনৈতিক অবস্থা পরিবর্তন হয়। তখন থেকে এ ব্যাপারে তদারকিও শিথিল হয়ে পড়ে। ফলে পুনরায় পলিথিন ব্যবহার আগের অবস্থায় ফিরে যায়।
মাঝেমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে কারাদন্ড ও অর্থদন্ড প্রদান করলেও পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ হচ্ছে না।
এজন্য আইন বাস্তবায়নে সরকারের দায়িত্বহীনতাকেই দায়ী করেছেন কক্সবাজার ও বান্দরবানের পরিবেশবাদীরা। তাদের দাবি, বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোন ধরণের হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে না।
তাছাড়া দীর্ঘদিন ধরে বাজার মনিটরিং বন্ধ রয়েছে।
পূর্বে আইনগতভাবে কঠোরতা থাকলেও তা এখন আর নেই। সার্বিকভাবে পলিথিন ব্যবহার রোধে তারা বলেন, সরকারের যে আইন আছে তার সুষ্ঠু ব্যবহার, মোবাইল কোডসহ আইন অমান্যকারীদের শাস্তি বাস্তবায়নে কঠোরতা বজায় রাখতে হবে।