রামুতে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে চৈত্র মাসের শেষদিনে ও বৈশাখের প্রথম দিনে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে ২৬তম চৈত্র মেলা ও শুভ বাংলা নববর্ষ বরণ। বাংলা মাসের সর্বশেষ দিনটিকে বলা হয় সংক্রান্তির দিন। চৈত্রের শেষ আর বৈশাখের শুরু। রামুতে এই দুই দিন জাঁকজমকপূর্ণ উৎসবের মাধ্যমে উদযাপন করবে, শিল্পী বিনয় বড়ুয়া স্মৃতি সংসদ। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় রামুর মানুষ এই দিনকে উৎসবের মাধ্যমে পালন করে। ধর্মীয় বিশ্বাস ও আবহমান বাংলার ঐতিহ্য আর লোক লোকায়িত উৎসবের ধ্বনি পাওয়া যায় এই উৎসবে।
বাঙালির ঐতিহ্য ও সংষ্কৃতি ধরে রাখার প্রত্যয়ে কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের মেরংলোয়া গ্রামের রামু কেন্দ্রীয় সীমা মহাবিহার মাঠে বিগত ২৫ বছর ধরে চৈত্র মেলা ও শুভ বাংলা নববর্ষ বরণ উৎসব উদযাপিত হয়ে আসছে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক ‘সুজন’ রামু উপজেলার সভাপতি মাস্টার মোহাম্মদ আলম বলেন, রামুর চৈত্রমেলা বৌদ্ধরা আয়োজন করলেও, এটি একটি অসাম্প্রদায়িক উৎসব। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পরিবার, আত্মীয়-পরিজন ও গ্রামের মানুষের মধ্যে একটি সুন্দর সম্পর্ক তৈরি হয়। চর্চা হয় বাঙালির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। আবহমান গ্রামবাংলার হারিয়ে যাওয়া অনেক ক্রীড়া রামুর চৈত্রমেলার মাধ্যমে নতুন করে চর্চা হচ্ছে।
এ আয়োজনের মুল উদ্যোক্তা শিল্পী বিনয় বড়ুয়া স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক পলক বড়ুয়া আপ্পু বলেন, চৈত্র সংক্রান্তির দিনে আমরা চৈত্র মেলা এবং পরদিন বাংলা নববর্ষ বরণ অনুষ্ঠান আয়োজন করেছি বিগত ২৫ বছর ধরে। বৌদ্ধ ধর্মীয় উৎসবের আমাজে হলেও গ্রামের সকল ধর্মের মানুষ অসাম্প্রদায়িক চেতনায় খুব আনন্দের সাথে পালন করেন। এই উৎসবকে গ্রামের মানুষেরা ‘আনন্দমেলা হাউজফুল’ নামেও আনন্দের সাথে বলে থাকেন।
তিনি আরো বলেন, এই উৎসবকে কেন্দ্র করে ভাই আসে বোনের বাড়িতে। মেয়েরা শ্বশুরবাড়ী থেকে বাপের বাড়িতে এসে এই অনুষ্ঠান উপভোগ করে থাকে। তখন বাড়িতে সকলের মধ্যে একটি আনন্দঘন পরিবেশ বিরাজ করে।
ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব পলক বড়ুয়া আপ্পু আরো বলেন, আবহমান বাংলার ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক চেতনাকে বাঙ্গালীর মনে চির জাগরুক রাখার মানসে প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও ২৬ তম চৈত্রমেলা ও বাংলা নববর্ষ বরণ উদযাপন করতে যাচ্ছি। দুই-চারজন মানসিক প্রতিবন্ধীদেরকে নিয়ে শুরু করা হয় রামুর এ উৎসব। তারা মঞ্চে উঠেই দর্শকদের উদ্দেশ্য ভুলে ভরা গান পরিবেশন, নাম বানান, সংখ্যা গণণা করে উপস্থিত সবাইকে মাতিয়ে রাখতেন। আজ তাদের অনেকে নেই।
সুশাসনের জন্য নাগরিক ‘সুজন’ রামু উপজেলার সভাপতি মাস্টার মোহাম্মদ আলম বলেন, রামুর চৈত্রমেলা বৌদ্ধরা আয়োজন করলেও, এটি একটি অসাম্প্রদায়িক উৎসব। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পরিবার, আত্মীয়-পরিজন ও গ্রামের মানুষের মধ্যে একটি সুন্দর সম্পর্ক তৈরি হয়। চর্চা হয় বাঙালির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। আবহমান গ্রামবাংলার হারিয়ে যাওয়া অনেক ক্রীড়া রামুর চৈত্রমেলার মাধ্যমে নতুন করে চর্চা হচ্ছে।
সনাতন ধর্মীয় পুরোহিত সুবীর চৌধুরী বাদল বলেন, রামুর চৈত্রমেলা চলমান থাকুক। আমাদের পরম্পরায় প্রবাহিত অসাম্প্রদায়িক চেতনার ধারক বাহক হিসেবে। এ উৎসব রম্যভূমি রামুর ঐতিহ্য।
শিল্পী বিনয় বড়ুয়া স্মৃতি সংসদের সভাপতি সুবীর বড়ুয়া বুলু জানান, বৃহস্পতিবার চৈত্রমেলায় দিনব্যাপী এ উৎসবে গ্রামীন ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, বাংলার সংস্কৃতি নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠান, শিশুদের ‘আনন্দ উৎসব’, প্রতিবন্ধী ও গ্রামের মানুষের অংশগ্রহণে ‘আনন্দমেলা হাউজফুল’ এবং আতশবাজি উৎসবের মাধ্যমে বাংলা নববর্ষকে বরণ করা হবে এ অনুষ্ঠানে।
চৈত্রমেলা উৎসবের সমন্বয়কারী রামু ব্রাদার্স ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ নবু আলম বলেন, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব সাবেক সংসদ সদস্য ও রাষ্ট্রদূত ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী, শিল্পী বিনয় বড়ুয়া, রাইমোহন বড়ুয়া, সমীর বড়ুয়া, শিশির বড়ুয়া, সুধীর বড়ুয়া, প্রবীর বড়ুয়া, কবি আশীষ কুমার বড়ুয়া, সমাজসেবক সুরঞ্জন বড়ুয়া মিস্ত্রী, সাংবাদিক ও ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব আবীর বড়ুয়া, ইউপি সদস্য অরুপ বড়ুয়া কালু, সাংস্কৃতিক কর্মী শাক্যমিত্র বড়ুয়া, ব্যাংকার অলক বড়ুয়া, শিল্পী হিরক বড়ুয়া নাংকু, লুলু বড়ুয়া, শিক্ষানুরাগী মংক্যারী বড়ুয়া সহ যাদের আমরা হারিয়েছি, রামুর ২৬তম চৈত্রমেলা ও বাংলা নববর্ষ বরণ উৎসব বিনম্র শ্রদ্ধায় তাদের প্রতি উৎসর্গ করা হবে।