সৌদি আরবের আকাশে বৃহস্পতিবার ইসলামি ক্যালেন্ডারের দশম মাস পবিত্র শাওয়ালের চাঁদ দেখা গেছে। ফলে এ বছর দেশটিতে আজ (শুক্রবার) পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করা হচ্ছে।
স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সৌদি আরবে পবিত্র শাওয়াল মাসের অর্ধচন্দ্র দেখা গেছে। তাই দেশটিতে ২০২৩ সালের ঈদুল ফিতরের প্রথম দিন ২১ এপ্রিল পালিত হবে। আর এই তারিখ ইসলামিক ক্যালেন্ডারের শাওয়াল মাসের প্রথম দিনটিকেও চিহ্নিত করে।
সৌদি আরবের মানবসম্পদ ও সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রণালয় বলেছে, ২১ এপ্রিল শুক্রবার থেকে ঈদুল ফিতরের ছুটি শুরু হবে। ছুটি চার দিন থাকবে এবং ২৫ এপ্রিল (মঙ্গলবার) থেকে অফিস শুরু শুরু হবে।
এদিকে, বৃহস্পতিবার পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা না যাওয়ায় আগামী ২২ এপ্রিল শনিবার ঈদুল ফিতর উদযাপনের ঘোষণা দিয়েছে বিশ্বের অন্তত ৭টি দেশ। এই দেশগুলো হলো— অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ব্রুনেই, থাইল্যান্ড এবং জাপান।
মালয়েশিয়ার স্থানীয় সংবাদমাধ্যম মালয় মেইল বলছে, মালয়েশিয়ায় বৃহস্পতিবার পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যায়নি। এর ফলে পবিত্র রমজান মাস ৩০ দিনে শেষ হবে। আর মালয়েশিয়ার মুসলিমরা আগামী শনিবার পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির ‘দ্য কিপার অব দ্য রুলারস সিল’ সৈয়দ দানিয়াল সৈয়দ আহমদ।
সিএনএন ইন্দোনেশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইন্দোনেশিয়ায় ১৪৪৪ হিজরির শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যায়নি বলে ঘোষণা দিয়েছে ইন্দোনেশিয়ার সরকার। এর ফলে ইন্দোনেশিয়ায় ২২ এপ্রিল (শনিবার) ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে।
আগামী শনিবার দেশে পবিত্র ঈদুল ফিতরের প্রথম দিন ঘোষণা করেছে ব্রুনেই। বৃহস্পতিবার দেশটির আকাশে শাওয়াল মাসের অর্ধচন্দ্রাকার চাঁদ দেখা যায়নি। যে কারণে শনিবার অর্থাৎ ২২ এপ্রিল ইসলামী উৎসবের প্রথম দিন পালন করবে দেশটি।
এর আগে, আরব বিশ্বের ১৩টি দেশের ২৫ জন বিশেষজ্ঞ জ্যোতির্বিদ যৌথভাবে দেওয়া এক ঘোষণায় বলেন, আজ (২০ এপ্রিল) আরব এবং ইসলামিক বিশ্বের কোথাও খালি চোখে পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা নেই।
আবুধাবিভিত্তিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সেন্টারের (আইএসি) জ্যোতির্বিদদের বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, বর্তমানে চাঁদ দেখা যাওয়া ও দেখা না যাওয়া নিয়ে পরস্পরবিরোধী মত দেওয়া হচ্ছে এবং এ নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে বলে জ্যোতির্বিদদের এই দল স্বীকার করেছে।
এছাড়া কেন্দ্র বিবৃতিতে আবারও পরিষ্কার করে জানিয়েছে, ‘ঈদুল ফিতরের তারিখ ও দিন ঠিক করার জন্য এ বিবৃতি দেওয়া হয়নি। এই তারিখ নির্ধারণের জন্য আইনগত ও বৈজ্ঞানিক কিছু ভিত্তি আছে। আর তাদের বিবৃতি দেওয়ার কারণ হলো— চাঁদ দেখার বিষয়টি পরিষ্কার করা।’
আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিদ্যা কেন্দ্র বলছে, রমজান ও ঈদের চাঁদ দেখার কিছু মাণদণ্ড বা নির্ণায়ক রয়েছে। যেগুলো বিশ্বব্যাপী এখনও অনুসরণ করা হয় এবং চাঁদ ওঠার বিষয়টি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এটিই স্বীকৃত পন্থা।
আইএসি বলেছে, চাঁদ দেখার ক্ষেত্রে পুরোনো এবং নতুন যেসব মানদণ্ড রয়েছে, সেগুলো প্রয়োগ করলেও আজ আরব ও ইসলামিক বিশ্বে চাঁদ দেখা যাবে না। আর এ বিষয়টি শুধুমাত্র একজনের মতামত না। একটি বিশেষজ্ঞ দলের মতামত। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের এই মত সৌদি আরবে চাঁদ দেখা যাওয়ার মধ্য দিয়ে ভুলই প্রমাণিত হলো বলা যায়।
ইসলামিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী প্রত্যেক আরবি মাস ২৯ নাকি ৩০ দিনের হবে, তা নির্ভর করে চাঁদ দেখতে পাওয়ার ওপর। সৌদি আরবের আকাশে আজ চাঁদ দেখা যাওয়ায় দেশটিতে পবিত্র রমজান মাস ২৯ দিনে হবে। পরের দিন (শুক্রবার) দেশটিতে পবিত্র ঈদুল ফিতর পালন করা হবে।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে সাধারণত বাংলাদেশ ও এশিয়ার অন্যান্য দেশে ঈদ উদযাপন করা হয়। এদিকে, শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির বৈঠকে বসার কথা রয়েছে। যদি শাওয়ালের চাঁদ দেখা যায় তাহলে শনিবার বাংলাদেশেও ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে।
সূত্র : ঢাকা পোস্ট