প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ধর্মের নামে কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে বরদাশত করা হবে না।’
শরিবার বিকেলে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপন উপলক্ষে রাজধানীর লালবাগের ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির পরিদর্শনে এসে একথা বলেন তিনি। খবর রাইজিংবিডির।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে কোনো সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের স্থান হবে না। আমাদের মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম-মুক্তিযুদ্ধে এদেশের প্রতিটি ধর্ম, বর্ণ, গোত্রের মানুষ এক হয়ে যুদ্ধ করে এদেশকে স্বাধীন করেছে। সবার রক্ত একাকার হয়ে মিশে গেছে এ দেশের মাটিতে। মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ সকলে এদেশের স্বাধীনতার জন্য রক্ত দিয়েছে। তাই সকল ধর্মের মানুষ তাদের এই দেশটাতে ঐক্যবদ্ধভাবে বসবাস করবেন- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব প্রদানকারী দল। তাই এই দল যখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসে তখনই দেশের উন্নয়ন হয়। কারণ মানুষের কল্যাণ চিন্তাটাই আমাদের কাছে সব থেকে বড়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গিবাদ এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমাদের সরকার সবসময়ই কঠোরভাবে ব্যবস্থা নিয়েছে এবং আগামীতেও নেবে। কারণ এই দেশে কোনো সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের স্থান হবে না।
শেখ হাসিনা বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম, সৌহার্দ্যরে ধর্ম, ভ্রাতৃত্বের ধর্ম। এখানে জঙ্গিবাদের কোনো জায়গা নাই। কিন্তু যারা এই সন্ত্রাস সৃষ্টি করে তারা ধর্মবিরোধী কাজ করে। ধর্মের অবমাননা করে।
তিনি বলেন, এখানে সকলে যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে এবং করে। সেই পরিবেশটাই আমরা তৈরি করতে চাই- ধর্ম যার যার উৎসব সকলের। আমরা বাংলাদেশিরা সেটাই মানি এবং সকলে মিলে যে কোনো উৎসব উদযাপন করি। কাজেই সকলের তরে সকলে আমরা, আমরা মানবের তরে। তাই সকলে মিলে আসুন আমরা এই দেশকে গড়ে তুলি। এই দেশ যত উন্নত হবে, সমৃদ্ধশালী হবে বিশ্ব সভায় ততই আমরা মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হবো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সংঘাত চাই না সমৃদ্ধি চাই, উন্নতি চাই। যে উন্নতির ছোঁয়া গ্রামের তৃণমূল মানুষ পর্যন্ত পাবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ইসলাম ধর্মে স্পষ্ট বলা রয়েছে- ‘লাকুম দিনুকুম ওয়ালিয়াদিন’ অর্থাৎ যার যার ধর্ম তার তার কাছে। সবাই নিজস্ব মত ও পথ অনুযায়ী শান্তিপূর্ণভাবে ধর্মকর্ম পালন করবে।
তিনি আরো বলেন, সব ধর্মেই শান্তির কথা বলা হয়েছে, মানবতার কথা, মানবকল্যাণ, মানব উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে। কাজেই এটা আমাদেরও মেনে চলতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বাংলাদেশটা সকল ধর্মের জন্য, সবাই এখানে শান্তিপূর্ণভাবে বাস করবে। যার যার ধর্ম সম্মানের সাথে পালন করবে, একজন অপরজনের ধর্মের প্রতি যথাযথ সন্মান প্রদর্শন করবে। সুন্দরভাবে মানুষ বাঁচবে, উন্নত জীবন পাবে- সেটই আমি আশা করি।
প্রধানমন্ত্রী দুর্গাপূজার মহাসপ্তমীর দিনে দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, দেশে বিপুল উৎসাহের সঙ্গে দূর্গাপূজা উদযাপিত হচ্ছে। আমি চাই আপনারা প্রার্থনা করবেন আমাদের এই দেশটার যেন উন্নতি হয়। দেশের মানুষ যেন শান্তিতে বসবাস করে। বাংলাদেশ যেন দক্ষিণ এশিয়ায় একটি উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বঙ্গবন্ধুর ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে পারি।
প্রধানমন্ত্রী পরে রাজধানীর টিকাটুলীর রামকৃষ্ণ মিশন পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন।
অনুষ্ঠানে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি ডিএন চ্যাটার্জী, কমিটির সাধারণ সম্পাদক শ্যামল কুমার পাল, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তাপস কুমার পাল, হাজী মো. সেলিম এমপি, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জয়ন্ত সেনগুপ্ত বক্তব্য রাখেন।
এতে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ঢাকেশ্বরী মন্দিরের সেবায়েত প্রদীপ কুমার চক্রবর্তীসহ মন্দিরে আগত ভক্তরা উপস্থিত ছিলেন।