দুর্দান্ত বোলিং-ফিল্ডিংয়ে পাকিস্তানি ব্যাটিংকে ধসিয়ে দিল ভারত। সবুজ উইকেটে মোহাম্মদ আমিরের বোলিং ঝাঁজে ভালো শুরু করেছিল পাকিস্তানও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভারত জিতল মোটামুটি সহজেই।
মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে এশিয়া কাপে পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে ভারত। ১৭.৩ ওভারে ৮৩ রানেই গুটিয়ে গিয়েছিল পাকিস্তান। ভারত লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলে ২৭ বল বাকি রেখে।
ছোট্ট পুঁজি নিয়েও পাকিস্তানকে খানিকটা আশা দেখিয়েছিলেন আমির। গতি আর সুইংয়ে কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন ভারতের টপ অর্ডার। কিন্তু এই ম্যাচ জিততে হলে পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিল আমিরের মতো আরও ২-৩ জন বোলার।
ওয়াহাব রিয়াজ, মোহাম্মদ ইরফানরা পারেননি আমির হয়ে উঠতে। বরং প্রতিকূল উইকেট আর প্রচণ্ড চাপে মাঝে অসাধারণ ব্যাটিংয়ে ভারতকে জিতিয়েছেন বিরাট কোহলি। স্রেফ ৪৯ রানের রানের একটি টি-টোয়েন্টি ইনিংসেও যে কতটা সাহসিকতা, কতটা স্কিল ও কতটা নান্দনিকতা দেখানো যায়, সেটি প্রমাণ করেছেন তারকা এই ব্যাটসম্যান।
আমির উইকেট পেতে পারতেন প্রথম বলেই। তার দুর্দান্ত ইয়র্কার কিছু বুঝে ওঠার আগেই ছোবল দেয় রোহিত শর্মার পায়ে। প্রবল আবেদনেও আউট দেননি রচিরা পালিয়াগুরুগে। কিন্তু ওই ওভারেই শ্রীলঙ্কান আম্পায়ারকে দুবার আঙুল তুলতে বাধ্য করেন আমির। একইরকম ভেতরে ঢোকা দুই বলে আউট রোহিত (০) ও শিখর ধাওয়ানের চোটে সুযোগ পাওয়া অজিঙ্কা রাহানে (০)।
নিজের পরের ওভারে আমির ফিরিয়ে দেন সুরেশ রায়নাকেও (১)। ভারত তখন ৩ উইকেটে ৮, ম্যাচে ফিরেছে প্রাণ। ওই সময়টুকু দাঁতে দাঁত চেপে কাটিয়ে দেন কোহলি ও যুবরাজ সিং। আমিরের শেষ ওভারে দারুণ দুটি চার মারেন কোহলি।
আমিরের চার ওভারের টানা স্পেল শেষ হতেই আরও হাত খোলেন দুজন। ওয়াহাব রিয়াজের প্রথম ওভারেই তিনটি চারে চাপটাকে দূরে ঠেলে দেন কোহলি-যুবরাজ। প্রাপ্য অর্ধশতকটি কোহলি পাননি আম্পায়ার পালিয়াগুরুগের ভুল সিদ্ধান্তে। ব্যাটে লেগে বল প্যাডে লাগার পরও দেওয়া হয় এলবিডব্লিউ (৪৯)।
এক বল পর হার্দিক পান্ডিয়াকেও (০) ফিরিয়ে দেন সামি। তবে ভারত তখন জয়ের নাগালে। ওয়াহাবকে বাউন্ডারি মেরে দলকে জয় এনে দেন ধোনি। যুবরাজ অপরাজিত ছিলেন ১৪ রানে।
উইকেট যথারীতি ছিল সবুজাভ। তবে ম্যাচের স্কোরকার্ড যেমন বলছে, ততটা ‘মাইনফিল্ড’ অবশ্যই নয়। টস হারার পর পাকিস্তান অধিনায়ক শহিদ আফ্রিদিও বলেছিলেন, টস জিতলে ব্যাটিংই করতেন তারা।
ম্যাচের দ্বিতীয় বলে আশিস নেহরাকে দারুণ এক স্কয়ার ড্রাইভে চার মেরে শুরু করেছিলেন মোহাম্মদ হাফিজ। এক বল পরই শোধ তুলে নেন নেহরা। বাড়তি লাফানো ডেলিভারিতে কটবিহাইন্ড হাফিজ (৪)।
এরপর দুই ওভারের ‘বিরতি’, পাল্টা আক্রমণের ইঙ্গিতও দিতে শুরু করেছিলেন শারজিল খান ও খুররম মনজুর। চতুর্থ ওভার থেকেই শুরু পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়ার মিছিল।
জাসপ্রিত বুমরাহর বলে স্লিপে ধরা পড়েন শারজিল (৭)। শোয়েব মালিকের সঙ্গে হাস্যকর ভুল বোঝাবুঝি আর বিরাট কোহলির সরাসরি থ্রোতে রান আউট মনজুর (১০)। হার্দিক পান্ডিয়ার অনেক বাইরের বল তাড়া করে আউট অভিজ্ঞ মালিক (৪)।
পেস-উৎসবের মাঝেই হুট করে যুবরাজ সিংয়ের হাতে বল তুলে দেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। প্রথম বলেই স্কিড করে একটু ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিতে লাইন মিস করে এলবিডব্লিউ উমর আকমল (৪)।
পাকিস্তানের রান তখন ৫ উইকেটে ৩৫। রবীন্দ্র জাদেজার গুলির বেগে থ্রোতে আফ্রিদি রান আউট হলে স্কোর হয়ে যায় ৬ উইকেটে ৪২!
বিপর্যয়ে যা একটু লড়েন সরফরাজ আহমেদ। ২৫ রান করে এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান আউট জাদেজার বলে বাজে এক শটে।
দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে পান্ডিয়া মুড়িয়ে দেন লেজ। ৮ রানে ৩ উইকেট নিয়ে সফলতম বোলার নবীন এই পেস বোলিং অলরাউন্ডারই। ১১ রানে দুটি উইকেট নিয়েছেন জাদেজা। নেহরা, বুমরাহ ও যুবরাজ একটি করে।
এই ৮৩ রান, আগে ব্যাট করে টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানের সর্বনিম্ন ইনিংস। আমিরের সৌজন্যে লড়াই হয়েছে শুরুতে। কিন্ত ম্যাচ জেতার জন্য পুঁজিটা বড্ড কম ছিল। টানা দ্বিতীয় জয়ে তাই ফাইনালের পথে রয়েছে ভারত।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাকিস্তান: ১৭.৩ ওভারে ৮৩ (হাফিজ ৪, শারজিল ৭, মনজুর ১০, শোয়েব ৪, আকমল ৩, সরফরাজ ২৫, আফ্রিদি ২, ওয়াহাব ৪, সামি ৮, আমির ১, ইরফান ০*; পান্ডিয়া ৩/৮, জাদেজা ২/১১, বুমরাহ ১/৮, যুবরাজ ১/১১, নেহরা ১/২০)
ভারত: ১৫.৩ ওভারে ৮৫/৫ (রোহিত ০, রাহানে ০, কোহলি ৪৯, রায়না ১, যুবরাজ ১৪*, পান্ডিয়া ০, ধোনি ৭*; আমির ৩/১৮, সামি ২/১৬)
উৎস: বিডিনিউজ