যে কোন দেশের পরিবেশের উপাদানগুলোর মধ্যে মাটি, পানি, বায়ু ও গাছপালা অন্যতম। যেসব এলাকায় এই চারটি উপাদান দূষণমুক্ত ও সুরক্ষিত থাকে সেসব এলাকার পরিবেশ ও প্রতিবেশকে সুন্দর ও সুস্থ পরিবেশ বলা হয়। একটা সময় গোটা বাংলাদেশটাই সুস্থ, সুন্দর ও বৈচিত্র্যেময় পরিবেশে সমৃদ্ধ ছিল। কিন্তু কালক্রমে আধুনিক কৃষি ও উন্নয়নের নামে আমাদের দেশের প্রাকৃতিকভাবে সমৃদ্ধ পরিবেশ আজ বিপর্যস্ত। কৃষির উন্নয়নের নামে অধিক অধিক লাভের আশায় কৃষকরা তামাক চাষ করছে।
তামাক ব্যবহার করছে অতিমাত্রায় রাসায়নিক সার, কীটনাশক, হরমোন, আগাছানাশক এবং জমিতে অনেক সেচের প্রয়োজন হচ্ছে। বিগত প্রায় এক দশক ধরে মুনাফা লোভি ব্যবসায়ীরা ব্যাপকভাবে কৃষি জমির মাটি কেটে, ইটভাটা ও অপরিকল্পিত ভবন,হাট-বাজার তৈরির ফলে দেশের জলাশয়, কৃষি জমি ও গাছপালা দিন দিন সংস্কুচিত হয়ে পড়ছে। আরও অতিরিক্ত কীটনাশক ও সার ব্যবহারের ফলে পানি ধুয়ে মুছে নদীর পানি গিয়ে দূষণ ও গভীরতা হারাচ্ছে। জলাশয়ের জীবৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে। আজ আমাদের দেশের প্রকৃতি ও পরিবেশ হুমকির সন্মূখীন।
এদিকে গ্রীষ্মের খরতাপে জীবন প্রায় ওষ্ঠাগত,আরেকদিকে দক্ষিণের ঝিরিঝিরি বাতাস। সেই বাতাসের কিছুটা স্বস্তি খোঁজে মানুষ, শরীর জুড়ায়, কিন্তু জলবায়ু পরর্বতনে বাংলাদেশের আবহাওয়া বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে।
যে কারনে বন্যা,খড়া,জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড় সহ নানা প্রাকৃতিক দূর্গোগ হচ্ছে।
লামা পৌর এলাকার হরিণঝিরি ব্যবসায়ি ও বনায়ন নার্সারি উদ্যোক্তা মোঃ নুরুজ্জামান “বনায়ন নার্সারি” নামে সরেজমিনে দেখা যায়, লামা পৌর এলাকার দক্ষিণ দিকে (৯নং ওয়ার্ড) হরিণঝিরি ও শীলেরতোয়া মার্মা পাড়ার মেইন রোড়ের পাশে শ্রমিক জাহেদুল ইসলাম ও দেখাশুনা তদারকির দায়িত্ব থাকা হাসিনা বেগম নার্সারীতে দেখা যায়। (৪ ও ৫ জুন) সেখানে তারা চারা গাছের পরিচর্যাসহ পানি দিচ্ছে। প্রায় এক একর জায়গা বিভিন্ন জাতের বনজ,ফলজ ও ঔষধি গাছের পসরা বা সমাহার। এটি সে ২০০১ সালে ছোট পরিসরে শুরু করে এখন বড় আকারে পরিণত হয়েছে। এতে কিছু মানুষের কর্মসংস্থানও হয়েছে। নিজের নার্সারী ব্যবসার লাভের পাশাপাশি এলাকায় সবুজ বনায়নে ভূমিকা রাখছে। এটি অনেক বৈচিত্র্যময় সুন্দর ও সুস্থ ও স্বস্তির নির্মল অক্সিজেন উপভোগ্য।
বর্তমানে এই নার্সারিতে ফলজ চারাঃ উন্নত জাতের বিভিন্ন জাতের আম,পেয়ারা,জাম্বুরা,আমড়া, কমলা,মালটা,লেবু বরই আপেল, বেদনা, ডালিম, লকটন, লিচু, কাঠাঁল,সফেদা প্রভৃতি।
ঔষধি চারাঃ হরিতকি,কটবেল, বহেরা,আমলকি,জলপাই,তেতুঁল,জাম,বেল,কাঠ বাদামসহ বিভিন্ন ধরনের ফুলের চারা।
বনজ চারাঃ মিনজিয়াম,আকাশমনি,দেশীনিম,রেইট্টি,বকাইন নিম,গর্জন,হাইব্রিড কাঞ্চন প্রভৃতি।
পাহাড়ি এলাকা উপযোগি বনজ, ফলদ ও পানি সহনশীল গাছের চারা উৎপাদনের জন্য তিনটি নার্সারি স্থাপনের ফলে পার্বত্যঞ্চলের প্রকৃতিপ্রেমিদের নিকট পানি সহনশীল গাছের চারা, বৈচিত্র্যময় ফল ও সবজির চারা অনেকটা সহজলভ্য হয়েছে। এলাকার স্থানীয় মানুষসহ বাইরে লোক, প্রতিষ্ঠান পছন্দমত ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছে।
সেক্ষেত্রে লামা উপজেলা ও আশপাশের এলাকার জন্য চারার উপর এবং বৈচিত্র্যময় সবজি ও ফলের চারার জন্য বাজারের উপর অনেকটাই নির্ভর করতে হয় না।
বনায়ন নার্সারির মালিক মোঃ নুরুজ্জামান জানান, প্রকৃতির প্রতি ভাললাগায় আমি এটি ২০০১ সালে শুরু করেছি। আমি বৃক্ষরোপণ মেলায় কয়েকবার জেলা, উপজেলায় পুরস্কার অর্জন করেছি। আর এখানে বনায়নের পাশাপাশি সহজলভ্য উন্নত জাতের ফলজ,বনজ ও ঔষধি গাছের চারা পাওয়া যাচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) লামা উপজেলার সভাপতি ও মানবাধিকার কর্মী মো. রুহুল আমিন ও যুগ্ন সম্পাদক ও লামা সাংবাদিক ইউনিটির সভাপতি সাংবাদিক মোঃ নাজমুল হুদা বলেন, নার্সারিগুলো স্থাপনের পর থেকে এলাকার কৃষক-কৃষাণী, প্রতিষ্ঠান, যুব ও সাধারণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে বৈচিত্র্যময় বনায়ন চাষ এবং ফলদ ও পানি সহনশীল গাছের চারা রোপণের আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তারা আরও বলেন, চাহিদানুযায়ী হাতের কাছে ফলজ, বনজ ও পানি সহনশীল গাছের চারা পাওয়ায় পাহাড়ি একাকার জনগোষ্ঠীর মধ্যে চারা রোপণের আগ্রহ আরও পুরোদমে বৃদ্ধি পাবে বলে।
লামা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ আরিফুল হক বেলাল বলেন, এ ধরনের ব্যক্তিগত উদ্যোগে নার্সারীকে আমরা স্বাগত জানাই। এতে করে স্থানীয় অধিবাসীরা সুযোগ- সুবিধা পাবে। সর্বোপরি দেশের পরিবেশ- প্রতিবেশ, প্রাণ-প্রকৃতি সুস্থ, সুন্দর ও সমৃদ্ধ রাখার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।