লামার মিরিঞ্জা পর্যটন কমপ্লেক্স নয়ন জুড়ানো সবুজ স্নিগ্ধ বনানী ঘেরা নৈসর্গিক সৌন্দর্য ও বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর অরন্যরানী লামা। এখানে রয়েছে সর্পিল ঢেউ খেলানো অসংখ্য ছোট-বড় পাহাড় ও পাহাড়ের বুক চিড়ে বহমান নদী। মনোরম দৃশ্যের সমাহার ও বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারে সমৃদ্ধ লামা, ঠিক যেন শিল্পীর মানসপটে আঁকা ছবির মতন। সর্বত্র সবুজ-শ্যামল গিরি শ্রেনীর এক অপরূপ চিত্র বৈচিত্রময় হাতছানি।
বাঙ্গালী ও উপজাতির মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন এ উপজেলার অন্যতম বৈশিষ্ঠ্য। ভৌগলিক অবস্থানগত দিক থেকে পাহাড় ও নদী বেষ্টিত হওয়ায় দেশের অন্যান্য জেলা উপজেলার চেয়ে পুরোপুরি বৈচিত্র্যময় বলা চলে। উপজেলার দক্ষিণে- আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা, পশ্চিমে- কক্সবাজারের রামু ও চকরিয়া এবং চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলা, উত্তরে- বান্দরবানের সুয়ালক ইউনিয়ন, পূর্বে- বান্দরবানের থানছি ও রুমা উপজেলা। ৬৭১.৮৪ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের মধ্যে নদী এলাকা ৭৮.১৭৩ বর্গ কিলোমিটার, সংরক্ষিত বনভূমি ৩৩২.৮২৭ বর্গ কিলোমিটার ও চাষাবাদযোগ্য ভূমির আয়তন ২৬০.৮৪৫ বর্গ কিলোমিটার। বর্তমানে যার অধিকাংশই আবাদ করে গড়ে উঠেছে বসতি।
লামা উপজেলাটি ২১.৩৬ হতে ২১.৫৯ উত্তর আংশ এবং ৯২.০৪ হতে ৯২.২৩ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে ও সমুদ্র পৃষ্ট থেকে ২৯.৮৭ মিটার উপরে অবস্থিত। এখানকার পাহাড় সমুহের উচ্চতা ২ শ’ থেকে ৩ শ’ মিটার। এক সময়ের দুর্গম পাহাড়ি লামা বর্তমানে কোলাহলপূর্ণ বিকাশমান পর্যটন এলাকা।
এখানের অপরম্নপ প্রাকৃতিক শোভা, বয়ে চলা পাহাড়ি আঁকা-বাঁকা মাতামুহুরী নদী, দুঃখি ও সুখি পাহাড়ের উঁচু চুড়া, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের তীর্থমান হিসেবে পরিচিত সাবেক বিলছড়ি মহামুনি বৌদ্ধ বিহার ও কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন ইত্যাদি দেশ-বিদেশের ভ্রমন বিলাসী পর্যটকদের সহজে আকৃষ্ট করে। তাছাড়া এ উপজেলায় বসবাসরত নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠির রয়েছে আলাদা ভাষা ও সংস্কৃতি। এদের অনেক রীতিনীতি কৃষি, সামাজিক জীবনাচার ও গৌরবময় সাংস্কতিক ঐতিহ্য বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে মহিমান্বিত এবং বৈচিত্র্যময় করেছে।
আছে নির্জনে চলার রাস্তা, এখানে পর্যটকদের সুবিধার কথা ভেবে নির্মাণ করা হয়েছে সুরম্য গিরি-দ্বার,টাইটানিক, কল্পতরু ও রেস্ট হাউস-কাম ওয়েটিং শেড বনরত্না। আপনজনকে নিয়ে নির্জনে বসে গল্প করার জন্য আছে দুই স্তরের গোলঘর মালঞ্চ। আছে টেলিস্কোপ ঘর ও প্ল্যাটফর্ম। জোছনারাতে পূর্ণ চাঁদ দেখা যাবে গোলঘর থেকে। শিশুদের জন্য রয়েছে মিনি শিশু-পার্ক। খাওয়া-দাওয়া করা যাবে শিশু-পার্কের সাথেই থাকা রেস্তোরাঁয়। ভ্রমণের সময় দেখা মেলে বনমোরগ, খরগোশ কিংবা মায়াবী বুনো হরিণের ছোটাছুটি। দিনের প্রথম ভাগে এলে এক-দেড় ঘণ্টার মধ্যে মিরিঞ্জা পর্যটন কমপ্লেক্স ঘুরে যে কেউ চাইলেই চলে যেতে পারেন ডুলা-হাজরা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক অথবা কক্সবাজার ভ্রমণে। আবার যদি মনে চায়, তাহলে দিনভর থেকে সন্ধ্যায় ফিরতে পারেন নিরাপদে অবস্থান করতে পরেন লামা বাজারের পৌর শহরের হোটেল -মোটেল গুলোতে।
এবারের ঈদুল আযহার স্কুল ছুটিতে দলগতভাবে ভ্রমণ করতে আসা দর্শনার্থীদের মধ্যে শিক্ষক শহীদ ও নুর হোসাইন জানান, এখানকার প্রকৃতিক পরিবেশ খুবই সুন্দর,মাঝে মধ্যে আমরা পাহাড়ের প্রাণ প্রকৃতি, প্রকৃতির সাথে একাত্ম হতে আসি। আসলে খুবই ভালো লাগছে।
আরও সেখানে পরিবার -পরিজন নিয়ে ঘরতে আসা মিনি শিশু পার্ক এ ছোট ছোট শিশুরা খেলা করতে দেখা গেছে।
এ বিষয়ে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মোস্তফা জাবেদ কায়সার বলেন,মোঃ মোস্তফা জাবেদ কায়সার বলেন, মিরিঞ্জা পর্যটন কমপ্লেক্স এর জন্য আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সরকারি দপ্তর থেকে পাওয়া বরাদ্দ থেকে কল্পতরু,টাইটানিকসহ বিভিন্ন পর্যটন স্পর্ট এ আকর্ষণীয় উন্নয়ন করেছি।
পাশাপাশি ফুলের চারারোপণসহ কিছু স্পট পরিত্যক্ত ছিল,এগুলোকে নতুনভাবে ডেলে সাজানো হচ্ছে। আরও পর্যটনের পাশে দুই পাহাড়ের মধ্যে নিচে একটি আধুনিক মানের একটি লেক তৈরী করার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবও পাঠানো হয়েছে।