রামু পাবলিক লাইব্রেরীতে ৪০ বছরে সংগৃহীত সব বই চুরি হয়ে গেছে। কবে কখন কিভাবে এই লাইব্রেরীর বই গুলো চুরি বা উধাও হয়ে গেলো জানা যায়নি। পেছনের জানালা ভেঙ্গে কয়েক মাস আগেই লাইব্রেরীর দুই-আড়াই হাজার বই চুরি করা হয়েছে বলে ধারনা করা হচ্ছে। ওই সময়ে লাইব্রেরীর দুইটি বৈদ্যুতিক লাইট ও একটি পাখা চুরি হয়। রামু উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্ত্বরে, টিনে চালের আধাপাকা রামু পাবলিক লাইব্রেরীটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
এদিকে বিষয়টি জানাজানি হলে উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও রামু থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
দায়িত্ব নিয়ে এই পাবলিক লাইব্রেরীকে আধুনিকতার ছোঁয়ায়, আবারও পূণঃজীবিত করতে হবে। লাইব্রেরী হলো শ্রেষ্ঠ আত্মীয়, যার সাথে সর্বদাই ভালো সর্ম্পক থাকে। আলোকিত মানুষের সব জ্ঞান জমা থাকে বইয়ের ভেতরে। অচিরেই রামু উপজেলা প্রশাসনে উদ্যোগে পাবলিক লাইব্রেরীটি পূণঃজীবিত হবে বলে বিশ্বাস করেন, রামুর কবি-সাহিত্যিক, শিক্ষক, সাংবাদিক ও শিক্ষার্থীরা।
রামু পাবলিক লাইব্রেরী থেকে বই চুরি বা উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনা জানাজানি হয় বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) দুপুরে। এ সময় রামু পাবলিক লাইব্রেরীতে আসেন, ঢাকার ‘মধুপোক’ প্রকাশনা সংস্থার সম্পাদক ও প্রকাশক আবুল খায়ের মোহাম্মদ আতিকুজ্জামান।
তিনি জানান, চার দশক আগের পুরোনো লাইব্রেরীটিতে দুষ্প্রাপ্য বই থাকার সম্ভাবনা থাকবে। যে বই গুলো অনেক পুরোনো এবং আমার গবেষণা কর্মে লাগতে পারে। যে বই গুলো হয়তো আমি অন্য জায়গায় দেখি নাই। সেই অভিপ্রায়ে বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে, একজন স্থানীয় শিক্ষককে সাথে নিয়ে রামু পাবলিক লাইব্রেরীতে যাই। লাইব্রেরীতে গিয়ে আমরা হতভম্ব হয়ে পড়ি। ৪০ বছরেরও আগে প্রতিষ্ঠিত রামু পাবলিক লাইব্রেরীতে একটি পৃষ্ঠাও নেই। লাইব্রেরীর পেছনের একটি জানালা ভাঙা। ৬/৭টি বুকশেলফ গুলোর দরজা খোলা। টেবিল, চেয়ার, বুকশেলফ, এমনকি ভাঙা জানালাতেও ধুলোর আস্তরণ। সেই ধুলো দেখেই মনে, কয়েক মাস আগেই বই চুরির ঘটনা ঘটেছে। ৬/৭টি বুকশেলফে অন্তত দুই থেকে আড়াই হাজার বই থাকার কথা। তবে রামু পাবলিক লাইব্রেরীর সংশ্লিষ্টজন থেকে জেনেছি, পুরোনো এই লাইব্রেরীতে ১১শত বই ছিলো। কোন উদ্যোগ ও ব্যবস্থাপনা না থাকার কারণেই পুরোনো এই লাইব্রেরী থেকে বই চুরির ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করেন, গবেষক ও লেখক একেএম আতিকুজ্জামান রাসেল।
রামু প্রেসক্লাবের সভাপতি নীতিশ বড়ুয়া বলেন, গত বছরের ১৯ জুলাই রামু পাবলিক লাইব্রেরী পরিচালনা পরিষদের শেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার সভাপতি ইউএনও প্রণয় চাকমা, রামু পাবলিক লাইব্রেরীকে মেধাচর্চার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘রামুর আলোকিত মানুষদের নিয়ে আবারও পুরোদমে সরগরম হয়ে উঠবে এই মেধাচর্চার কেন্দ্রটি। অচিরেই রামুবাসি পাবে প্রযুক্তি নির্ভর আধুনিক একটি পাবলিক লাইব্রেরী’। পদন্নোতি নিয়ে ইউএনও প্রণয় চাকমা চলে যাওয়ায়, কোন সভাও হয়নি, লাইব্রেরীটি সরগরমও হয়নি। নতুন প্রজন্মকে আলোকিত মানুষ করার জন্য দরজাও খোলা হয়নি। দীর্ঘ বন্ধ রাখা সময়ে মেধাচর্চা কেন্দ্রটির মেধার উপকরণ সমস্ত ‘বই’ চুরি হয়ে গেছে।
৪০ বছর আগে রামুর আলোকিত মানুষরাই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এই পাবলিক লাইব্রেরী। এই লাইব্রেরীর প্রতিটি ধুলোকণায় মিশে আছে তাদের শ্রমের সার্থকতা। রামু পাবলিক লাইব্রেরী ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অংশ ছিলো। রামু পাবলিক লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠার অন্যতম সদস্য রামু উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এডভোকেট আবুল মনসুর।
চুরির ঘটনাটি দুংখজনক। বর্তমানে যারা দায়িত্বে আছেন, তাদের অবহেলার কারনে এ ঘটনা ঘটেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দীর্ঘ ২০/২২ বছর এই লাইব্রেরীতে যাওয়া হয় না।
স্থানীয় সাংবাদিক কফিল উদ্দিন রামু পাবলিক লাইব্রেরী সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন জানিয়ে বলেন, লাইব্রেরীর সবকিছু অক্ষত আছে। বুকশেলফ গুলো ঘুনে ধরা। লাইব্রেরীর চেয়ার, টেবিল গুলো নষ্টের পথে। লাইব্রেরীর পুর্ব পাশের একটি জানালা ভাঙা। তার পিছনে একটি সীমানা প্রাচীর। লাইব্রেরীর পেছনে ওই প্রাচীর ঘেষে দুই-আড়াই হাজার বই (অনুমান ৩০ বস্তা) নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তবে দরজায় লাগানো ছিল একটি বড় তালা। দুইটি বৈদ্যুতিক লাইট এবং একটি পাখা ছিলো লাইব্রেরীতে। সেগুলোও উধাও। লাইব্রেরী সংশ্লিষ্টদের চরম উদাসীনতায়, অন্তত মাস দুয়েক আগে এ ঘটনা ঘটেতে পারে।
কবি-অধ্যাপক নীলোৎপল বড়ুয়া জানান, মুলত অবহেলার কারনে রামুর পাবলিক লাইব্রেরীর চুরির ঘটনাটি ঘটেছে। গত ৭/৮ বছর ধরে এটি প্রায় অকেজো হয়ে পড়েছিলো। বইগুলো আসলে চুরের দল কখন চুরি করল বুঝা যাচ্ছে না। বিষয়টি খুবই দুংখজনক।
পাবলিক লাইব্রেরীর সহ-সভাপতি উপজেলা প্রকৌশলী মঞ্জুর হাছান ভুইঁয়া বলেন, আমরা চুরির বিষয়টি অবগত হওয়ার সাথে সাথে সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। কে বা কারা করেছে কখন করেছে, সঠিক বলা যাচ্ছে না। ধারনা করা হচ্ছে এটি অনেকদিন আগে চুরির ঘটনা ঘটেছে। রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাহমিদা মুস্তফা দেশের বাইরে আছেন, উল্লেখ করে উপজেলা প্রকৌশলী বলেন, ইতিমধ্যে ইউএনও মহোদয়কে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে।
ভারপ্রাপ্ত ইউএনও সহকারি কমিশনার (ভূমি) নিরুপম মজুমদার জানান, বিষয়টি আসলে দুংখজনক। আমি চুরির ঘটনাটি অবগত হওয়ার সাথে সাথে পরিদর্শন করেছি। কে বা কারা করেছে সঠিক বলা যাচ্ছে না। এটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ ছিল। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে বিষয়টি তদন্তে কাজ করছে রামু থানা পুলিশের একটি টিম।