ডেঙ্গু আতংক ছড়িয়ে পড়েছে রামুতেও। গত সাত মাসে রামু উপজেলায় ৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময়ে ২৪৩ জনের ডেঙ্গু পরীক্ষা করানো হয়েছে। সর্বশেষ গত বুধবার (১৯ জুলাই) রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের শ্রীকুল গ্রামের ৩২ বছরের এক নারীর ডেঙ্গু সনাক্ত হয়েছে। তার বাড়ি রামু উপজেলার প্রাণকেন্দ্র চৌমুহনী স্টেশনের পাশে শ্রীকুল গ্রামে। তিনি শারীরিকভাবে সুস্থ আছেন। ডেঙ্গু আক্রান্ত ওই নারী চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিজ বাড়িতেই অবস্থান করছেন বলে জানান, রামু উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নোবেল কুমার বড়ুয়া।
রামু স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, জুন থেকে সেপ্টেম্বর, চারমাস ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকে সবচেয়ে বেশি। এ সময়ে বাড়ির আশপাশে, ফুলের টবে, অব্যবহৃত কৌটা বা ডাবের খোসা, পরিত্যক্ত পাত্রের জমে থাকা পানিতে জন্ম নেয় ডেঙ্গু জীবাণু বহনকারী এডিস মশা। এ মাসে (১-২২ জুলাই) রামু স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৪৭ জনের ডেঙ্গু পরীক্ষা করানো হয়েছে। তৎমধ্যে গত ১৯ জুলাই একজন নারীর ডেঙ্গু সনাক্ত হয়। এর আগে গত জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত ৯৬ জন ডেঙ্গু পরীক্ষা করেন। তৎমধ্যে ৪ জনের ডেঙ্গু সনাক্ত হয়। ডেঙ্গু পরীক্ষায় ১০০ টাকা করে নেয়া হয়। তবে বিশেষ বিবেচনায় রামু স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা করানো হয় বলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।
রামুতে ডেঙ্গুর সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে ডা. নোবেল কুমার বড়ুয়া বলেন, রামুতে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি নয়। তবে রামু উপজেলার পাশে উখিয়া উপজেলার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এবং পর্যটন শহর কক্সবাজারে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। কক্সবাজার শহরে পর্যটক আসা-যাওয়া এবং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অরক্ষিত স্বাস্থ্যবিধির কারণে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এ কারণে রামুতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার আশংকা রয়েছে।
রামু উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া থেকে সতর্ক থাকতে রামু উপজেলার এগার ইউনিয়নের গ্রামে গ্রামে মাইকিং, প্রচারপত্র বিতরণ করা হয়েছে। রামু উপজেলার ২৮টি কমিউনিটি ক্লিনিক, দুইটি ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে বিনামূল্যে ম্যালেরিয়া পরীক্ষা করানো হয়। ম্যালেরিয়া সনাক্ত না হওয়ার পরও যদি জ্বরের লক্ষণ থাকে, ওই রোগিকে দ্রুত রামু উপেজলা স্বাস্থ্যে কমপ্লেক্সে ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। উপেজলা স্বাস্থ্যে কমপ্লেক্সে ২৪ ঘণ্টা ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া পরীক্ষা ও চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়। এ হাসপাতালে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া রোগীকে আলাদাভাবে রাখা হয়।
ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গু থেকে রক্ষা পেতে রামু উপজেলার গর্জনিয়া, কচ্ছপিয়া, রশিদনগর, জোয়ারিয়ানালা, কাউয়ারখোপ, রাজারকুল, খুনিয়াপালং ইউনিয়নে বিনামূল্যে ২১ হাজার কীটনাশকযুক্ত দীর্ঘস্থায়ী মশারি বিতরণ করা হয়েছে। এ সাত ইউনিয়নের বাসিন্দাদের অনেকে পাহাড়ি এলাকায় বসবাস করেন। বাকি আরও চার ইউনিয়নে মশারি বিতরণ করা হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মল কর্মসূচির আওতায়, ব্রাক ও মুক্তি কক্সবাজারে সহযোগিতায় উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ এ সব মশারি বিতরণ করছে বলে জানান ডা. নোবেল কুমার বড়ুয়া। তিনি বলেন, জ্বর হলে অবহেলা করা যাবে না। ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত সপ্তাহখানেকের মধ্যেই সেরে যায়। তবে পরিস্থিতি জটিল হলে সুস্থ হতে দুই-তিন সপ্তাহ পর্যন্ত লেগে যেতে পারে। শুরুতেই সচেতন হলে মৃত্যুঝুঁকি ও অন্যান্য জটিলতা এড়ানো সম্ভব। আর অবহেলা করলে, বিভিন্ন জটিলতার কারণে রোগির অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে। আমাদের বার্তা হলো, যদি জ্বর হয়। দ্রুত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গিয়ে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শে ঔষধ সেবন করতে হবে। ডেঙ্গুর উপসর্গ দেখা দেওয়ার পরপরই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলেন তিনি।
জানা গেছে, বর্ষায় হালকা পানিতে বসতবাড়ির আশপাশে ময়লা আবর্জনা জমে যেমন দুর্গন্ধ ছড়ায়ে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, তেমনি সকল ড্রেনেজ ব্যাবস্থা অকার্যকর হয়ে পড়ে। ফলে কোথাও কোথাও পানি জমে ডেঙ্গু মশার বংশবৃদ্ধি হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রামু চৌমুহনী স্টেশনের পাশে রামু খিজারী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, রামু বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও রামু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। স্কুলগুলো আশে পাশে বর্ষায় বৃষ্টির পানি জমে আছে। চৌমুহনী স্টেশনের ব্যবসায়ীদের ফেলে দেয়া প্লাস্টিক ও নোংরা আবর্জনায় ড্রেনেজ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে দুর্গন্ধযুক্ত পানি জমে আছে। ফলে চৌমুহনী স্টেশনের চারপাশে ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গু মশার অবাধ বিচরণের পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
এ কারণে স্কুলের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মাঝে ডেঙ্গুর আতংক বিরাজ করছে। রামু চৌমুহনী স্টেশনের প্লাস্টিক ও নোংরা আবর্জনা ভর্তি ড্রেনেজ ব্যবস্থার প্রতিকারে প্রশাসনও কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না। এ নিয়ে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক এবং স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
রামুতে ডেঙ্গু পরিস্থিতির বিষয়ে শংকা প্রকাশ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহমিদা মুস্তফা বলেন, মায়ানমারে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তপথে অবাধে আসা যাওয়া কারণে, কক্সবাজার জেলায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ছে। উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে মশা নিধনের ঔষধ ছিঠানো হবে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানসহ উপজেলা পর্যায়ে বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে।