করোনা মহামারি পরবর্তী শিখন কার্যক্রমে অষ্টম ও নবম শ্রেণির ৮৫ দশমিক ১৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর প্রাইভেট টিউটর বা কোচিংয়ে নির্ভরতা বেশি ছিল। এজন্য প্রতি মাসে এক হাজার থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত ব্যয় করেছে। করোনা পরবর্তী সময়ে অষ্টম শ্রেণির ২৮ দশমিক ৯০ শতাংশ এবং নবম শ্রেণির ২৬ দশমিক ২ শতাংশ শিক্ষার্থী ফেল করেছে।
মায়ের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সন্তানের পড়াশোনা ও পরীক্ষার ফলাফলের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। যেসব মা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা পেয়েছেন, তাদের সন্তানদের চেয়ে শিক্ষা না পাওয়া মায়ের সন্তানদের ফেল করার হার বেশি। ফেল করা শিক্ষার্থীর ৩৪ শতাংশের মায়ের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই।
শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বেসরকারি সংস্থা গণসাক্ষরতা অভিযানের এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। ‘মহামারি উত্তর শিক্ষা : স্কুল শিক্ষার পুনরুদ্ধার ও আগামীর অভিযাত্রা : এডুকেশন ওয়াচ ২০২২’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়।
গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, অষ্টম শ্রেণির ২৮.৯ শতাংশ এবং নবম শ্রেণির ২৬.২ শতাংশ পাস করেনি। অর্থাৎ এই শিক্ষার্থীরা ৩৩ শতাংশ নম্বর অর্জন করতে পারেনি। আর ডি গ্রেড (৩৩ থেকে ৩৯ শতাংশ নম্বর) অর্জন করেছেন অষ্টম শ্রেণিতে ৩৬.১ শতাংশ এবং নবম শ্রেণিতে ৩৩.৫ শতাংশ শিক্ষার্থী।
শিক্ষার্থীদের শিখন দক্ষতা মূল্যায়নের জন্য বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বিষয়ে ৯০ মিনিটের পরীক্ষা নেয় গণসাক্ষরতা অভিযান। ভৌগোলিক এবং উন্নয়ন বৈচিত্র্য ও বিস্তার বিবেচনায় আটটি বিভাগের আটটি জেলা এবং ২১টি উপজেলা (সাত জেলার তিনটি করে উপজেলা), দুটি সিটি কর্পোরেশন এ গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত ছিল।
প্রতিবেদনে অষ্টম ও নবম শ্রেণির বিষয়ভিত্তিক অবস্থাও তুলে ধরা হয়। বলা হয়, অষ্টম শ্রেণির ৮২ শতাংশ শিক্ষার্থী বাংলায়, ৬৫ শতাংশ ইংরেজিতে এবং ৬৬ শতাংশ শিক্ষার্থী গণিতে ৩৩ শতাংশ নম্বর পেয়ে পাস করেছে।
নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ফলাফল অষ্টম শ্রেণির তুলনায় সামান্য ভালো। নবম শ্রেণির বাংলায় ৮৪ শতাংশ, ইংরেজিতে ৭২ শতাংশ এবং গণিতে ৬৫ শতাংশ পাস করেছে।
মূল্যায়নে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা তুলনামূলকভাবে ভালো করেছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। বলা হয়েছে, অষ্টম শ্রেণির ৭৪ শতাংশ মেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে আর ছেলেদের ক্ষেত্রে এ হার ৬৮ শতাংশ। নবম শ্রেণির ৭৫ শতাংশ মেয়ে এবং ৭৩ শতাংশ ছেলে শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে।
উভয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সামগ্রিক ফলাফলে দেখা গেছে, যশোর জেলায় সর্বোচ্চ ৯০.৫ শতাংশ উত্তীর্ণ হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ফলাফলে সবচেয়ে পিছিয়ে হবিগঞ্জ জেলা। এ জেলার মোট পাসের হার ৪২.৯ শতাংশ।
গবেষণায় আরও বলা হয়, করোনার পর বিদ্যালয়গুলোতে অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষকদের ৫৭.৮ শতাংশ এবং মাধ্যমিক শিক্ষকদের ৪৪.৪ শতাংশ। যদিও এই অতিরিক্ত পাঠের গুণগতমান এবং কার্যকারিতা নিরূপণ করা যায়নি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
করোনা পরবর্তী সময়ে অষ্টম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রাইভেট টিউটর বা কোচিং নির্ভরতা বেশি ছিল বলে উঠে এসেছে গবেষণায়। বলা হয়েছে, অষ্টম ও নবম শ্রেণির ৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর প্রাইভেট টিউটর বা কোচিং নির্ভরতা বেশি ছিল। আর অভিভাবকদের তথ্য অনুযায়ী, অষ্টম শ্রেণির প্রায় ৬৪ শতাংশ এবং নবম শ্রেণির ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী প্রাইভেট টিউটরের জন্য প্রতি মাসে এক হাজার টাকা থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত ব্যয় করেছে।
গবেষণার তথ্য বলছে, প্রাথমিকে ৭৯ শতাংশ এবং মাধ্যমিকে ৮৫ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী তাদের পাঠ ও পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য বাণিজ্যিক গাইড বই অনুসরণ করেছে। ২০২২ সালের প্রথম নয় মাসে প্রাথমিক পর্যায়ে গড়ে ৬৬৯ এবং মাধ্যমিকে পর্যায়ে দুই হাজার ৬৫ টাকা পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে বলে অভিভাবকেরা জানিয়েছেন।
সূত্র : ঢাকা পোস্ট