সাশ্রয়ী, আরামদায়ক ও তুলনামূলক নিরাপদ ভ্রমণের জন্য পর্যটকদের প্রথম পছন্দ নৌপথ। বাংলাদেশে এক সময় ২৪ হাজার কিলোমিটার নৌপথ ছিল, এখন অবশিষ্ট রয়েছে মাত্র ৬ হাজার কিলোমিটারের মতো। হারিয়ে যাওয়া নৌপথের তালিকায় ক্রমেই যোগ হচ্ছে নতুন নাম। সড়কের মতো গতি আর নৌপথে আধুনিক যাত্রীসেবা যোগ না হওয়ায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। নদী মরে যাচ্ছে বলেই হারিয়ে যাচ্ছে নৌপথ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নদীগুলোকে বাঁচাতে হলে নদী নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় থাকা জরুরি। পাশাপাশি আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে হবে।
আজ রবিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিশ্ব নদী দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য ‘রাইটস অব রিভার’। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ১৯৮০ সাল থেকে ব্রিটিশ কলম্বিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসের শেষ রবিবারকে বিশ্ব নদী দিবস হিসেবে পালনের সূচনা করে। ২০০৫ সালে জাতিসংঘ দিবসটি অনুসমর্থন করে। এরপর থেকে জাতিসংঘের বিভিন্ন সহযোগী সংস্থা দিবসটি পালন করছে। বাংলাদেশে ২০১০ সাল থেকে ‘রিভারাইন পিপল’ নামে একটি সংস্থা দিবসটি পালন করে আসছে।
এদিকে, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থার (বিআইডব্লিউটিএ) হিসাব বলছে, বাংলাদেশে এক সময় ২৪ হাজার কিলোমিটার নৌপথ ছিল। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় ১৮ হাজার কিলোমিটার নৌপথ হারিয়ে গেছে।। এখন মাত্র ৬ হাজার কিলোমিটার নদীপথ সচল রয়েছে।
পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে দেশের প্রধান নদীবন্দর সদরঘাটে যাত্রীর খরা দেখা দিয়েছে। বরিশালগামী লঞ্চগুলো বেশিরভাগই ঘাটে বাঁধা থাকছে বলে অভিযোগ করছে মালিকপক্ষ। এ অবস্থায় বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা নৌরুটের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এখন ঢাকা থেকে মাত্র তিন ঘণ্টায় বরিশাল যেতে পারায় মানুষ নৌপথে চলাচলে আগ্রহ হারাচ্ছে।
নৌপথ রক্ষায় করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দেশের নৌপথ রক্ষায় দীর্ঘদিন ধরেই আমরা আন্দোলন করে যাচ্ছি। কিন্তু এই আন্দোলন ততদিন সফল হবে না, যতদিন না আইনের সঠিক ব্যবহার করা যাবে। পাশাপাশি নানা প্রতিষ্ঠানের অধীনে রয়েছে নদী সংক্রান্ত নানা বিষয়। ফলে একক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমেই নদীকে রক্ষা করতে হবে। আর নদী রক্ষা পেলেই রক্ষা পাবে নৌপথগুলো।’
এ বিষয়ে ‘রিভারাইন পিপলস’ এর মহাসচিব শেখ রোকন বলেন, ‘সরকারিভাবে নদী নিয়ে কাজ করছে প্রায় ১৮টি সংস্থা। এসব সংস্থার মধ্যে নেই কোনও সমন্বয়, নেই কোনও যোগাযোগ। যে যার মতো কাজ করে। এসব প্রতিষ্ঠানকে একটি প্ল্যাটফর্মের আওতায় নিয়ে আসা দরকার।’ না হলে এভাবে নদীগুলোকে বাঁচানো কঠিন হবে বলে তিনি মনে করেন।
শেখ রোকন বলেন, ‘নদী কমিশন কাজ করছে ঠিকই, কিন্তু সমন্বয় না থাকায় সেখানকার চিত্রও একই রকম হয়ে যায়।’
বিভিন্ন কর্মসূচি
বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন নৌপরিবহন অধিদফতর, মেরিটাইম ইনস্টিটিউট ও সংস্থার উদ্যোগে রাজধানীর একটি হোটেলে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের সভাপতিত্ব নৌপরিবহন অধিদফতরের মহাপরিচালক এতে স্বাগত বক্তব্য রাখবেন বলে জানা যায়।
এছাড়া, জাতীয় নদী কমিশনের উদ্যোগে রবিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশের নদ-নদী: সংজ্ঞা ও সংখ্যা’ এক শীর্ষক এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। এই সেমিনারে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মারগুব মোর্শেদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী সেমিনারে সভাপতিত্ব করবেন বলে জানা যায়।
বেসরকারি সংগঠন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) বিভিন্ন জেলায় এবং ‘রিভারাইন পিপল’ রংপুর ও পাবনায় নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন