নিরাপত্তার অভাব, যৌন হয়রানি, আর্থিক অসচ্ছলতা কিংবা অভিভাবকদের মানসিকতার কারণে অসংখ্য কন্যাশিশুর পড়াশোনার গণ্ডি মাধ্যমিক বা তার আগেই থেমে যাচ্ছে। ছেলে সন্তানের পড়াশোনা এবং তাকে উপার্জনক্ষম করে তুলতে অভিভাবকরা অনেক অর্থ খরচ করলেও মেয়েদের ক্ষেত্রে তেমনটা হচ্ছে না। গবেষকরা মনে করেন, কন্যাশিশুকে অভিভাবকরা সম্পদ ভাবতে পারছেন না।
এ প্রেক্ষাপটে দেশব্যাপী আজ পালিত হচ্ছে জাতীয় কন্যাশিশু দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য– ‘বিনিয়োগে অগ্রাধিকার কন্যাশিশুর অধিকার’।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের সামাজিক ক্ষমতায়ন ও আইনি সুরক্ষা কর্মসূচির প্রধান শাশ্বতী বিপ্লব বলেন, অভিভাবকরা তাদের কন্যাশিশুকে সম্পদ ভাবতে পারেন না। তারা ভাবেন, ছেলে সন্তানের পেছনে খরচ করলে ছেলেরা বুড়ো বয়সে বাবা-মাকে দেখবে। কিন্তু মেয়েরাও যে বাবা-মায়ের পাশে দাঁড়াতে পারে, এটা তারা বুঝতে চান না।
এ জন্য মেয়েদের পেছনে অভিভাবকরা বিনিয়োগ করেন না। মেয়ের বিয়ের মাধ্যমে সমাধানের পথ খোঁজেন।
চলতি বছর বেসরকারি সংস্থা এডুকো পরিচালিত ‘বাংলাদেশে কিশোরীদের ওপর জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতার প্রভাব’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রেমে জড়িয়ে পড়তে পারে– এমন শঙ্কায় ৫০ শতাংশ কিশোরীর হাতে অভিভাবকরা মোবাইল ফোন দেন না। লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার কারণে ৭১ শতাংশ কিশোরী স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারে না। সংস্থাটির গবেষণায় দেখা গেছে, ৭৩ শতাংশ কিশোরী পারিবারিক ও বাল্যবিয়েজনিত উদ্বেগের মধ্যে দিন কাটায়। ফলে তাদের পড়াশোনা বিঘ্নিত হয়।
জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সম্পাদক নাছিমা আক্তার জলি বলেন, মেয়েরা কোনো সমস্যায় পড়লে বাবা-মা সবার আগে তার বিয়ের জন্য তৎপর হয়ে ওঠেন। যে কারণে বাল্যবিয়ের দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ এগিয়ে।
জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৪৯৩ কন্যাশিশু৷ সে হিসাবে গড়ে প্রতিদিন ধর্ষণের শিকার হচ্ছে দুটি শিশু।
মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, মেয়েদের ঘরবন্দি না করে, বাল্যবিয়ে না দিয়ে ছেলেদের নীতি-নৈতিকতা শেখাতে হবে। তবেই কন্যাশিশুর জন্য সুন্দর সমাজ গড়তে পারব।
তবে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের তথ্যে আশার বার্তাও আছে। তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের তুলনায় এ বছর দেশে বাল্যবিয়ের হার প্রায় ২৬ শতাংশ কমেছে।
সূত্র : সমকাল