এমএ চিদাম্বারাম স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে দর্শক এগারো হাজারের বেশি। অল্প কিছু বাদ দিলে বাকিদের সমর্থন নিউজিল্যান্ডের দিকে।
কেন? চেন্নাই সুপার কিংসের দুজন ক্রিকেটার খেলছেন দলটির হয়ে। ওই সমর্থকরা খুশি মনেই ফিরতে পারেন ঘরে। যে ক’জন বাংলাদেশি এসেছিলেন বহু কষ্ট পাড়ি দিয়ে সমর্থন করতে, তাদের জন্য শুধুই হতাশা।
ব্যাটিংয়ে আরও একবার টপ-অর্ডারদের ব্যর্থতা। এরপর আবার সেই সাকিব আল হাসান-মুশফিকুর রহিমের কল্যাণে আশার পালে হাওয়া। কিন্তু তারা ফিরতেই বদলে যায় প্রেক্ষাপট। শেষদিকে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ব্যাটে পাওয়া যায় লড়াই করার পুঁজি। কিন্তু ফিল্ডিংয়ের ‘হাফ চান্স’ কখনোই ‘ফুল’ হয়নি। বাংলাদেশকে তাই ফিরতে হয়েছে হারের হতাশা নিয়ে।
নিউজিল্যান্ডের কাছে ৮ উইকেটে হারে সাকিব আল হাসানের দল। ২৪৬ রানের লক্ষ্য ৪৩ বল হাতে রেখেই পাড়ি দেয় কিউইরা। চেন্নাইয়ে টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ।
হতাশার শুরুটা একদম প্রথম বল থেকেই। তার প্যাডে আসা বল ফাইন লেগে ক্যাচ দেন লিটন দাস। এরপর ৪০ রানের উদ্বোধনী জুটিতে আশার পালে হাওয়া দেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও তানজিদ হাসান। কিন্তু তাদের জুটিও স্থায়ী হয়নি বেশিক্ষণ।
শুরুতে আউট হন তানজিদ হাসান। লকি ফার্গুসনের বলে ফ্লিক করতে গিয়ে ক্যাচ দেন স্কয়ার লেগে দাঁড়ানো কনওয়ের সঙ্গে। মিরাজ ভালো শুরু পেলেও লম্বা করতে পারেননি ইনিংস। ৪ চারে ৪৬ বলে ৩০ রান করে ফার্গুসনের বলেই হেনরির হাতে ক্যাচ দেন মিরাজ।
বাংলাদেশ দলের বিপদটা বেশি বড় হয় নাজমুল হোসেন শান্ত ফিরলে। ৫৬ রানে ৪ উইকেট খুইয়ে ফেলে দলটি। গ্লেন ফিলিপসের করা প্রথম বলেই কনওয়ের হাতে ক্যাচ দেন ৮ বলে ৭ রান করা শান্ত। সেখান থেকে একটু একটু করে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। সেই পুরোনো সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিমের হাত ধরেই।
সাকিব শুরুতে কিছুটা অস্বস্তিতেই ছিলেন, সেটি আরও বাড়ে ক্র্যাম্প হলে। এরপর থেকে তিনি ব্যাট চালিয়ে দ্রুত কিছু রান করার চেষ্টায় ছিলেন। কিন্তু বেশিক্ষণ চালিয়ে যেতে পারেননি। ফার্গুসনের বাউন্সার পুল করতে যান সাকিব, কিন্তু ক্যাচ উঠে যায়। অনেকটুকু দৌড়ে ক্যাচ নেন লাথাম। ৯৬ রানের জুটিটি ভাঙে সাকিব ৩ চার ও ২ ছক্কায় ৫১ বলে ৪০ রান করে ফিরলে।
তার ফেরার পরও মুশফিকুর রহিম করছিলেন দারুণ। কিন্তু ম্যাট হেনরির নিচু হওয়া এক বলে বোল্ড হয়ে যান তিনি, বলতে গেলে কিছুই করার ছিল না অভিজ্ঞ ব্যাটারের। ৬ চার ও ২ ছক্কার ইনিংসে ৭৫ বলে ৬৬ রান করে আউট হতে হয় মুশফিকুর রহিম।
ব্যাটিং অর্ডারে রদবদলের শিকার তাওহীদ হৃদয়ও সাতে নেমে ভালো করতে পারেননি। ২৫ বলে ১৩ রান করে এই ব্যাটার বোল্টের স্লোয়ারে বোকা বনে সহজ ক্যাচ দেন স্যান্টনারের হাতে। শেষদিকে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের চেষ্টায় রান পৌঁছায় আড়াইশর কাছে। ২ চার আর সমান ছক্কার ইনিংসে ৪৯ বলে ৪১ রানের ইনিংস খেলেন মাহমুদউল্লাহ। ১৯ বলে ১৭ রান করে তার সঙ্গে দারুণ ভূমিকা রাখেন তাসকিনও।
জবাব দিতে নেমে কিউইরাও শুরুতে বেশ বিপদেই পড়ে গিয়েছিল। ১৩ বলে ৯ রান করে রাচিন রবীন্দ্র আউট হন মোস্তাফিজুর রহমানের বলে। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা এই ব্যাটার ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে থাকা মুশফিকুর রহিমের হাতে। এরপর ক্যাচ মিসের মহড়া দেন বাংলাদেশের ফিল্ডাররা। শুরুটা করেন মেহেদী হাসান মিরাজ- ডেভেন কনওয়েকে ৪ রানে তিনি জীবন দেন মোস্তাফিজুর রহমানের বলে।
এরপর তাসকিন আহমেদ ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও ক্যাচ ছাড়েন। এর মধ্যে ৮০ রানের জুটি গড়ে ফেলেন কনওয়ে ও অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। তাদের এই জুটি ভাঙে সাকিব আল হাসানের হাত ধরে। তাকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হন ডেভন কনওয়ে। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি; ৩ চারে ৫৯ বলে ৪৫ রান করে ফেরেন সাজঘরে।
কনওয়ের ফেরাও রানের গতি কমাতে পারেনি নিউজিল্যান্ডের। ড্যারেল মিচেলকে সঙ্গে নিয়ে দলকে টানতে থাকেন এ বছর প্রথমবারের মতো ওয়ানডে খেলতে নামা উইলিয়ামসন। তাকে শেষ অবধি আউটই করতে পারেনি বাংলাদেশ, তিনি হন রিটায়ার্ড হার্ড। একবার শান্তর করা থ্রো তার আঙুলে লাগে, পরে ব্যথার কাছে নত স্বীকার করে উঠে যেতে হয় তাকে। ১০৭ বল খেলে ৮ চার ও ১ ছক্কায় ১০৭ বলে ৭৮ রান করে তিনি ফেরেন সাজঘরে। এরপর গ্লেন ফিলিপসকে নিয়ে বাকিটা পথ পাড়ি দেন ড্যারিল মিচেল। ৬৭ বলে ৬ চার ও ৪ ছক্কায় ৮৯ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি। দুর্দান্ত বোলিংয়ে তিন উইকেট শিকার করে ম্যাচসেরা হন কিউই পেসার ফার্গুসন।
এই জয়ে তিন ম্যাচে পূর্ণ ৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে উঠে গেল নিউজিল্যান্ড। অন্যদিকে বাংলাদেশের ব্যর্থতা বেড়েই চলল। আফগানিস্তানকে উড়িয়ে বিশ্বকাপ শুরু করলেও ইংল্যান্ডের পর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও কেবল হতাশা উপহার দিল তারা।
সূত্র : বাংলানিউজ