বাংলাদেশে গত ৩০ বছরে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। দেশের ১৬ কোটি মানুষের অধিকাংশই দরিদ্র। তারপরও বছরে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হচ্ছে গড়ে ৭ শতাংশ করে। কিছু সামাজিক মানদণ্ডে বৃহৎ প্রতিবেশী ভারতকেও ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। চীনের পর দেশটি এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রফতানিকারক দেশ। বিদেশ থেকে নিজ দেশে অর্থ পাঠাচ্ছেন এক কোটি প্রবাসী কর্মী। গণতন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়লেও বিকশিত হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। দ্রুত বিকশিত এই অর্থনীতির দিকে এখন অনেকেরই দৃষ্টি। রিপোর্ট বাংলাট্রিবিউনের।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর বাংলাদেশ সফর এবং দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতা, বিশেষ করে বাংলাদেশের ক্রমশ এগিয়ে যাওয়াসহ নানা বিষয়ে আলোকপাত করে এক প্রতিবেদনে এমন মন্তব্য করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সাময়িকী দ্য ইকনোমিস্ট।
১৯৮৬ সালের মার্চে সর্বশেষ বাংলাদেশ সফর করেন তৎকালীন চীনা প্রেসিডেন্ট লি জিয়ান নিয়ান। এর দীর্ঘ তিন দশক পর ১৪ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে ঢাকায় আসেন চীনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। ঢাকা-বেইজিং সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নেওয়ার বার্তা নিয়েই তার দুইদিনের এ সফর। ১৯৮৬ সালের বাংলাদেশের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তফাৎ অনেক। তৎকালীন চীনা প্রেসিডেন্ট লি জিয়ান নিয়ান বাংলাদেশ সফরে পকেটে করে ৪০ বিলিয়ন ডলার নিয়ে আসেননি। কিন্তু বর্তমান চীনা প্রেসিডেন্টের সফরে এ পরিমাণ অর্থের ঋণচুক্তির আভাস দিয়েছে সরকারি সূত্রগুলো। ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিম রাজ্য গোয়া’য় ব্রিকস-বিমসটেক লিডারস আউটরিচ শীর্ষ সম্মেলনে যোগদানের পথে বাংলাদেশে তার এ সফর।
এটা স্বীকার করতে হবে যে, বাংলাদেশের জন্য এই অর্থ আসবে মূলত অবকাঠামোগত প্রকল্পে চীনা ঋণ হিসেবে। এর মধ্যে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, রেললাইন, ব্রিজ এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মতো প্রকল্পও থাকছে।
বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান উন্নতি অন্য দেশগুলোরও নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে। ৬ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে বাংলাদেশে একটি নতুন সমুদ্রবন্দর স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছিল চীন। প্রস্তাবে সেখানে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস টার্মিনাল এবং চারটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রও ছিল। পরে বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের কাছে আগ্রহ প্রকাশ করে চীন। নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে প্রকল্পে রাজি হয়ে তারপর দলিল সই করানোর সময় তারা প্রকল্পের দাম বাড়িয়ে নেয়।
চলতি বছরের জুলাইয়ে জোড়া পারমাণবিক চুল্লি নির্মাণের জন্য বাংলাদেশকে ১১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেয় রাশিয়া। প্রতিবেশী দেশ ভারত ইতোমধ্যেই নিজের গ্রিড থেকে বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। এছাড়া দেড় বিলিয়ন ডলারের একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে অর্থায়নে সম্মত হয়েছে দিল্লি। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এবং ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের মতো বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠানগুলোও বাংলাদেশের তাদের সহায়তা বাড়িয়েছে।
শুক্রবার চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর ঢাকা সফরের প্রথম দিনেই বাংলাদেশের প্রতি ভারত, জাপান, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ও বিশ্বব্যাংকের আগ্রহের ধারাবাহিকতা ছিল লক্ষ্যণীয়। তার এ সফরে দুই দেশের মধ্যে ২৭টি চুক্তি হয়েছে। শি জিনপিং এবং শেখ হাসিনার বৈঠকের পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক জানান, ২৭টি চুক্তির মধ্যে ১৫টি দুই সরকারের মধ্যে এবং ১২টি ঋণ ও বাণিজ্য বিষয়ক। অর্থনৈতিক সহযোগিতা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, তথ্য ও যোগাযোগ-প্রযুক্তি, ভৌত অবকাঠামো, সড়ক-সেতু, রেল ও জলপথ যোগাযোগ, সুমদ্র সম্পদ, দুর্যোগ মোকাবিলা, জলবায়ু পরিবর্তন, কৃষিসহ বিভিন্ন বিষয়ে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়।
চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড বিষয়ক সমঝোতা স্মারক, রোড ও টানেল কাঠামো চুক্তি, ইকোনোমিক ও টেকনিক্যাল সহযোগিতা চুক্তি, দাসেরকান্দি সুয়ারেজ টার্মিনাল কাঠামো চুক্তি, মেরিটাইম সহযোগিতা সমঝোতা স্মারক, পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক সমঝোতা স্মারক, তথ্য প্রযুক্তি খাতে দু’টি সমঝোতা স্মারক, সন্ত্রাববাদ দমন বিষয়ক সমঝোতা স্মারক, প্রোডাকশন ক্যাপাসিটি সংক্রান্ত কাঠামো চুক্তি এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিষয়ক চুক্তি।