রামুর বাঁকখালী নদীতে বর্ণিল আয়োজনে লোকজ ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ‘নৌকা বাইচ’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গ্রামীণ লোকজ ক্রীড়া ঐতিহ্যবাহী ‘নৌকা বাইচ’ দেখতে শুক্রবার (২০ অক্টোবর) দুপুর থেকে সন্ধ্যা বাঁকখালী নদীর দুই তীরে জড়ো হয় শত শত মানুষ। নদীর দুই তীরে উৎসবে মুখরিত শব্দ ‘মারো মারো, আরও জোরে, হেঁয়ো হেয়োঁ’। নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর, বৃদ্ধ সব বয়সের জনপ্রিয় ‘নৌকা বাইচ’ অনুষ্ঠিত হয়, রামু উপজেলার প্রাচীন জনপদ ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের অফিসের চর গ্রামের বাঁকখালী নদীতে।
বৃহত্তর অফিসের চর ক্রীড়া পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত ‘নৌকা বাইচে’ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, ‘অফিসের চর দ্য ইয়াং বাহুবলী’। গ্রামীণ ঐতিহ্যের এ খেলায় ‘অফিসের চর বিটিসিএল’ রানার্স আপ, ‘অফিসের চর কৃষক ক্লাব’ তৃতীয় এবং ‘অফিসের চর রাউনাফ’ চতুর্থ স্থান অর্জন করেছে। অফিসেরচর দ্য ইয়াং বাহুবলী নৌকা বাইচ দলের মো. তাহসিন সেরা খেলোয়াড় এবং অফিসের চর বিটিসিএল নৌকা বাইচ দলের মো. জসিম উদ্দিন সেরা মাঝি নির্বাচিত হয়েছে।
নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা উদ্বোধন ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে অতিথি উপস্থিত ছিলেন, প্রবীন আওয়ামীলীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা গোলাম কবির, রামু প্রেসক্লাব সভাপতি নীতিশ বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক সোয়েব সাঈদ, সাবেক ফুটবলার হাবিবুল হক কোম্পানী, রামু খিজারী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক নুরুল হোসাইন, ক্রীড়া সংগঠক আছাদ উল্লাহ, এডভোকেট তানভীর শাহ, ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বাদল, ব্যবসায়ি জামাল হোসেন, সাংবাদিক কপিল উদ্দিন ও মো. সাইদুজ্জামান প্রমূখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন, ক্রীড়া সংগঠক ইঞ্জিনিয়ার আরিফুল ইসলাম আরিফ।
জাতীয় সংগীত ও আতশ বাজি’র মাধ্যমে বাঁকখালী নদীতে অনুষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী এ লোকজ ক্রীড়া উৎসবে অফিসের চর গ্রামের চারটি নৌকা বাইচ দল অংশ নেয়। ফাইনাল ও তৃতীয় স্থান নির্ধারনসহ মোট ১৪ পাড়ি ( প্রতিযোগিতা করা) খেলা অনুষ্ঠিত হয়।
খেলা পরিচালনায় ছিলেন- ক্রীড়া সংগঠক আছাদ উল্লাহ, এডভোকেট তানভীর শাহ, জামাল হোসেন, ইঞ্জিনিয়ার আরিফুল ইসলাম আরিফ ও তাওহীদ কাদের মুরাদ। সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন- মো. নুর হোসেন, মো. কলিম উল্লাহ, মো. আবদুর রহিম বাবুল, মো. শহীদুল্লাহ, মোহাম্মদ স্বপন প্রমূখ।
এ নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার অন্যতম আয়োজক আছাদ উল্লাহ জানান, রামুর অফিসের চর সাহিত্য-সংস্কৃতি ও লোকজ ক্রীড়া ঐতিহ্যের প্রাচীন জনপদ। শত বছর আগে রামুর বাঁকখালী নদীতে রাখাইনরা নৌকা বাইচ খেলা শুরু করেন। কালক্রমে এ খেলা আমাদের বাঙালিয়ানায় ক্রীড়া-সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। লোকজ ঐতিহ্যের এ খেলার ধারাবাহিতা হারিয়ে যাচ্ছে যথাযত পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে। বেশ কয়েক বছর ধরে রামুর বাঁকখালী নদীর প্রাচীন লোকজ এ ক্রীড়া বন্ধ ছিলো। অফিসের চরের ক্রীড়ামোদী কিছু মানুষ শত বছরের ঐতিহ্য নৌকা বাইচ আয়োজন, নৌকা বাইচের ধারাবাহিতা ধরে রাখার প্রয়াস চালাচ্ছেন। গ্রামীণ ক্রীড়া নৌকা বাইচের ঐতিহ্যগত প্রচলন ধরে রাখতে সরকার এবং বিত্তবান ক্রীড়া ব্যক্তিদের পৃষ্টপোষকতা প্রয়োজন।