খালেদ হোসেন টাপু:
রামুতে ধর্মীয় অনুশাসন ও আচার পালনের মাধ্যমে দু’দিন ব্যাপী বৌদ্ধদের শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপন শুরু হয়েছে। রোববার (১৬ অক্টোবর) ভোরে বুদ্ধপূজা, জাতীয় ও ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন, ধর্মসভা, শীলগ্রহণ, সন্ধ্যায় প্রদীপপূজা, ফানুস উত্তোলন, বাংলাদেশের সুখ-সমৃদ্ধি ও বিশ্ব শান্তি কামনায় সমবেত প্রার্থনার মধ্যদিয়ে প্রথম দিনের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়।
সোমবার দুপুরে রামুর বাঁকখালী নদীতে রামু কেন্দ্রীয় প্রবারণা পূর্ণিমা ও জাহাজ ভাসা উৎসব উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হবে কল্প-জাহাজ ভাসানো উৎসব। বৌদ্ধরা সব ভেদাভেদ ভুলে পরস্পর শুভেচ্ছা বিনিময় করে, পারস্পরিক একতা, মৈত্রী, ভালোবাসা ও বন্ধুত্বের ভাব বিনিময় করেন শুভ প্রবারণায়। এর মাধ্যমে মনের মলিনতা দূর হয়, ধর্মীয় অনুভূতি জাগ্রত হয়। এতে চিত্তের সংকীর্ণতাও দূরীভূত হয়।
বৌদ্ধরা বিশ্বের সব জীবের কল্যাণ এবং সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল কামনা করেন শুভ প্রবারণা পূর্ণিমায়। বৌদ্ধধর্ম মতে জীবনের সব ক্ষেত্রে জ্ঞান ও বুদ্ধিবৃত্তির চর্চা অপরিহার্য। অজ্ঞানতা, মূর্খতা ও অসৎকর্ম মানবজীবনে কখনও সুখ আনয়ন করতে পারে না, কখনও মানুষকে মহীয়ান করতে পারে না। অন্ধকার দিয়ে যেমন আলোকে আহ্বান করা যায় না, তেমনি অকুশল ও মন্দকর্ম দিয়ে কখনও সৎ, শুভ ও কল্যাণকে সম্ভাষণ করা যায় না। তাই বৌদ্ধরা তিন মাস প্রবারণা শিক্ষায় জীবনকে সত্য, সুন্দর ও ন্যায়ের পথে মঙ্গল ও কল্যাণকে আহ্বান জানান এবং অশুভ শক্তির বিনাশ ও শুভ শক্তির আরাধনা করেন বলে জানান বৌদ্ধরা।
আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে আশ্বিনী পূর্ণিমা-এই তিন মাস শীল, সমাধি ও প্রজ্ঞা সাধনার অধিষ্ঠান গ্রহণ করেন। এই তিন মাসের অষ্টমী, অমাবস্যা ও পূর্ণিমায় ধ্যান, উপবাস ও সংযম শিক্ষার মধ্য দিয়েই তারা তাদের ব্রত অধিষ্ঠান সমাপন করেন। তাই ত্রৈমাসিক বর্ষাবাসব্রত পালন শেষ দিবসটিতে শুভ প্রবারণা উদযাপন করা হয়। আকাশে প্রদীপ প্রজ্জ্ব¡লন করেন এবং ফানুস উত্তোলন করেন। বুদ্ধের কেশধাতুকে পূজার উদ্দেশ্যেই বৌদ্ধরা আকাশে প্রদীপ পূজা করেন এবং ফানুস উড্ডয়ন করেন।
রামু কেন্দ্রীয় প্রবারণা পূর্ণিমা ও জাহাজ ভাসা উৎসব উদযাপন পরিষদের সভাপতি পলক বড়ুয়া আপ্পু জানান, রামুতে দু’দিন ব্যাপী প্রবারণা পূর্ণিমার উৎসবকে শান্তিপূর্ণ ভাবে সম্পন্ন করতে জেলা, উপজেলা ও থানা প্রশাসন পৃথক সভা করেছে। রামু থানা পুলিশ সকল বৌদ্ধ বিহারে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছেন।
শান্তি শৃংখলার মধ্যদিয়ে প্রবারণার আনন্দ জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে সকলে মাঝে ছড়িয়ে পড়ুক এমন প্রত্যাশা করে তিনি সোমবার দুপুরে বাকঁখালী নদীতে অনুষ্ঠিতব্য জাহাজ ভাসা উৎসবের সম্প্রীতি সমাবেশে সকলের উপস্থিতি কামনা করেছেন।