আমাদের রামু রিপোর্ট:
কক্সবাজার সদর ও রামু উপজেলার সীমান্তবর্তী জনপদ ঝিলংজা ইউনিয়নের খরুলিয়ায় চলছে মরণনেশা ইয়াবা’র রমরমা বাণিজ্য। নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে ইয়াবা ব্যবসার জন্য এ এলাকাটি ইয়াবা ব্যবসায়িদের কাছে যেন স্বর্গরাজ্য।
জানা গেছে, এখানকার ভাড়া বাসা, ব্যক্তিগত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বসত বাড়িতেও নির্বিঘ্নে চলছে ইয়াবা সেবন আর বেচাকেনা। এ সুযোগে বিগত ৫/৬ বছরে এখানে গড়ে উঠেছে একাধিক ইয়াবা ব্যবসায়ি সিন্ডিকেট।
দু’উপজেলার মধ্যবর্তী হওয়ায় আইনশৃংখলা বাহিনীর নাগালের বাইরেই থাকে এখানকার ইয়াবা ব্যবসায়িরা।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, খরুলিয়ার দক্ষিণে বাঁকখালী নদী পার হয়েই আসে ইয়াবার বড় বড় চালান। পার্শ্ববর্তী দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের টেকনাফ-কক্সবাজার মহাসড়কের কাঠির মাথা হয়ে এ পথে ইয়াবা চালান অনেকটা নিরাপদ ইয়াবা ব্যবসায়িদের কাছে। মফস্বলের অতি নিরাপদ এ ট্রানজিট সুবিধার কারনেই কক্সবাজার সদর ও রামুর আশপাশের অন্তত ১৫টি গ্রাম এখন ইয়াবার জোয়ারে ভাসছে।
ক্ষুব্দ অনেক অভিভাবক ও সচেতন ব্যক্তি জানালেন, ছাত্র, যুবক, মধ্য বয়সী আর বেশি বয়সের মানুষের পাশাপাশি এখন এসব এলাকায় প্রাথমিক পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও ইয়াবা বেচাকেনার কাজে ব্যবহার হচ্ছে।
অনেক প্রভাবশালী ইয়াবা ব্যবসায়ির সাথে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও সাথে দহরম মহরম সম্পর্ক। ফলে আইনের ছোঁয়া থেকে নিরাপদেই থাকেন ইয়াবা ব্যবসায়িরা। পুরো এলাকা ইয়াবায় সয়লাব একথাটি অকপটে অনেকে স্বীকার করলে কারা ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত এমন প্রশ্নের জবাবে কথা বলার সাহস হারান সবাই।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলে ইয়াবা ব্যবসায় দীর্ঘদিন জড়িত রয়েছেন এমন অনেকের নাম জানা গেছে। এদের মধ্যে রয়েছেন, কক্সবজার সদর উপজেলার খরুলিয়া কোনার পাড়ার মৃত ফকির মোহাম্মদের ছেলে ইমাম শরীফ ও নুরুল ইসলাম নুরু, খরুলিয়া টেক এলাকার আবছার ডেকোরেশন এর মালিক নুরুল আবছার, খরুলিয়া মুন্সীর বিল এলাকার মোছা আলীর ছেলে জোবাইর, খরুলিয়া বাজারপাড়া এলাকার ইউসুফ আলীর ছেলে দেলোয়ার সহ অনেকে। এদের মধ্যে অনেকে স্বল্পসময়ের ব্যবসায়ে বিত্তশালীও হয়েছেন। অনেকে গড়েছেন রংবেরংয়ের সুরম্য দালান।
এসব এলাকার বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অব্যাহত ইয়াবা ব্যবসার কারণে এলাকার অবস্থা খুবই নাজুক হয়ে পড়েছে। ইয়াবায় আসক্তরা সর্বশান্ত হয়ে অসামাজিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে। এরফলে প্রতিনিয়ত চুরি, ছিনতাই, ইভটিজিং এর মতো ঘটনা ঘটছে।
সম্প্রতি খরুলিয়া কোনারপাড়া এলাকায় এক যুবকের মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটেছে। আবার ইয়াবা ক্রয়ের জন্য বহিরাগত অনেক বিতর্কিত, অপরাধি ব্যক্তির আনাগোনাও এলাকাবাসীকে উদ্বিগ্ন করে তুলছে।
স্থানীয় বাসিন্দা এক সন্তানের জনক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এলাকার পরিস্থিতি খুবই খারাপ। এখানে বসবাস যেন নরকে বসবাস। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সহসাই দেশের বাইরে চলে যাবেন।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, খরুলিয়া কেন্দ্রিক এ ইয়াবা সিন্ডিকেট ক্রমেই ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশের গ্রামগুলোতে। বর্তমানে ইয়াবা আক্রান্ত এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে, খরুলিয়া কোনারপাড়া, নয়া পাড়া, খরুলিয়ার টেক, হিন্দু পাড়া, ঘাটপাড়া, বাজারপাড়া, মুন্সির বিল, সিকদারপাড়া, ডেইঙ্গাপাড়া, খামারপাড়া, ভুতপাড়া, মেহের আলী পাড়া, সুতারছর, মাস্টার পাড়া, খরুলিয়া বাজার, পার্শ্ববর্তী রামুর চাকমারকুল নয়াপাড়া, কলঘর বাজার ও তেচ্ছিপুল।
এব্যাপারে জানার জন্য ঝিলংজা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান টিপু সুলতানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করে সংযোগ বন্ধ পাওয়া গেছে। এ কারণে তাঁর বক্তব্য নেয়া যায়নি।