‘এই ভূখণ্ডকে আমরা অত্যন্ত পবিত্র বলে মনে করে থাকি, ঠিক যেমনটা সৌদি আরবকে মনে করে মুসলমানরা। আমি এখানে আসতে পেরে আসলেই খুব খুশি হয়েছি,’ বললেন নবদ্বীপ নামের এক ভারতীয় বংশোদ্ভূত ক্যালিফোর্নিয়ার এক তরুণী।
তিনি বর্তমানে প্রথমবারের মতো পেশাওয়ার সফর করছেন। ১৫ দিনের ভিসা নিয়ে পাকিস্তান এসেছেন।খবর রাইজিংবিডির।
‘আবারো আসবো আমি’, কথা দিলেন তিনি।
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য জনগণের সঙ্গ জনগণের সম্পর্ক সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমি এই দেশটি সম্পর্কে খুব ভালোভাবে জানি না। কিন্তু মুসলমানদের সঙ্গে শিখদের সম্পর্কে কিন্তু ভালোভাবেই জানি। আক্ষরিক অর্থেই তাদের সম্পর্ক বহুকালের পুরাতন।’
ক্যালিফোর্নিয়ার আরেক অধিবাসী অবতার সিং বললেন, প্রায় ২৬ জন শিখ যাত্রী ১২ দিনের সফরে এখন পাকিস্তান সফর করছে। পাকিস্তানে অবস্থানকালে তিনি বিভিন্ন মন্দির (গুরদোয়ারা) পরিদর্শন করবেন। এ ছাড়া যোগ দেবেন একটি ধর্মীয় উৎসবে।
প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করা যায় যে, ক্যালিফোর্নিয়ায় ৪২ বছর ধরে বসবাস করছেন অবতার সিং। অনেক বয়স হয়েছে তার।
এই শিখ যাত্রীরা ১৫ নভেম্বর বাবা গুরু নানকের জন্মদিন উদযাপন করবেন।
‘এ নিয়ে দ্বিতীয়বার আমি পাকিস্তান আসলাম। কেননা আমরা এখানে জনগণের ব্যাপক ভালোবাসা পেয়েছি,’ বললেন অবতার সিং। সেই সঙ্গে সংবর্ধনা সভা আয়োজন ও ঐতিহাসিক পেশাওয়ার জাদুঘর পরিদর্শনের ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য জন্য ধন্যবাদ জানান পর্যটক করপোরেশন অব খাইবার পাখতুনখাওয়াকে। সেখানে সযত্নে রক্ষিত রয়েছে বিখ্যাত শিখ শাসকদের ছবি।
খাইবার পাখতুনখাওয়া পর্যটন করপোশেনের ম্যানেজার মোহাম্মদ আলী সাঈদ বলেন, শিখ যাত্রীরা পাকিস্তানে ধমীয় উৎসবে যোগ দিবে। এই সুযোগে তাদের খাইবার পাখতুনখাওয়ায় আমন্ত্রণ জানানো হয়। আর শিখরাও তা আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করতে দ্বিধা করেননি।
‘এই ধরনের সফর বিভিন্ন দেশের ধর্মীয় যোগাযোগ জোরদার করে তুলবে। এ ছাড়া এই প্রদেশের (দুই পাঞ্জাব) ধর্মীয ও সাংস্কৃতিক যোগাযোগও শক্তিশালী করে তুলবে,’ বললেন আলী সাঈদ। ভারতে যাত্রীদের অভ্যর্থনা জানান উর্ধতন কর্মকর্তাসহ আলী সাঈদ। তারা তাদের হাতে ফুলের তোড়াও তুলে দেন। পর্যটন সচিব তারিক খান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুশতাক খান তাদের উষ্ণ স্বাগত জানান।
‘অর্মীয় পর্যটন উদ্যোগের আওতায় প্রথমে খাইবার পাখতুনখাওয়ার বৌদ্ধ মন্দিরগুলো পরিদর্শনে আসেন শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ কোরিয়ার বুদ্ধরা। আর এখন শিখ যাত্রী আসলেন পেশাওয়ারে, বললেন তারিক খান।
খাইবারপাখতুনখাওয়ার সাংস্কৃতিক বন্ধনই শিখ তীর্থ যাত্রীদের পেশাওয়ারে নিয়ে এনেছে। আক্ষরিক অর্থেই শিখ ইতিহাসের ৯০ শতাংশই গাঁথা আছে খাইবারপাখতুনখাওয়ায়। এর মধ্যে অনেক মন্দির, স্মৃতিসৌধ ও প্রত্নতাত্তিক নিদর্শন রয়েছে। তাই শিখদের সঙ্গে এলাকাটির একটি জোরালো ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বন্ধন রয়েছে অনেক আগে থেকে।
পেশাওয়ার জাদুঘর ভবনটি দেখে নারী ও পুরুষসহ শিখ যাত্রীরা সবাই অভিভূত হয়ে পড়েন। খুশিতে উৎফুল্ল হয়ে ওঠেন উষ্ণ সংবর্ধনা পেয়ে। যাত্রীদের অনেকেই কিন্তু এবারই প্রথম এই অঞ্চলটি সফর করেন। তারা বলেন, তারা প্রতি বছরই এখানে আসবেন।
‘আমার চাচার অনেক মুসলমান বন্ধু আছে। আমরা মনে করি এই ভূখণ্ডটির সঙ্গে আমাদের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। অনেক শিখ এখানেই শেষে নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন, তারপর বললেন,’ আমরা আবার আসবো, আমাদের এই পবিত্র স্থানটিতে।’ এতক্ষণ কোনোরকম করে আটকে রেখেছিলেন চোখের জল। এই কথা বলার পর আর পারলেন না, কেঁদে ফেললেন হু হু করে।