শহীদুল ইসলাম, উখিয়া।
কক্সবাজারের উখিয়ায় শক্তিশালী একটি বনদস্যু সিন্ডিকেট পাহাড় কাটার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। পরিবেশ ও বন আইনের কোন কার্যকারিতা না থাকায় দিন দিন পাহাড় খেকোরদল নির্বিচারে নিধনযজ্ঞ চালাচ্ছে।
পাহাড় কাটা, মাটি বিক্রি ও চড়া মূল্যে বনভূমির জায়গা বেচা-বিক্রির কাজ পুরোদমে চললেও পরিবেশ অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট ও বনবিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অর্থের বিনিময়ে ম্যানেজ হয়ে পড়ায় এক প্রকার প্রকাশ্যেই পাহাড় কাটার ধুম পড়েছে।
পরিবেশ আইন মতে, মাটির নিচ থেকে অন্তত ২ থেকে ৩ ফুট পর্যন্ত পাহাড় থেকে মাটি কাটা হলে পরিবেশ আইনের মামলার রুজু করার এখতিয়ার রয়েছে। এক্ষেত্রে কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তর সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতার ফলে উপজেলার অন্তত আড়াই শতাধিক পাহাড় নির্বিচারে মাটি কেটে সমতল ভূমিতে পরিণত করে অনায়সে দালান নির্মাণ করে আসছে।
বনবিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা লোকবল সংকটের অজুহাতে দায়সারা ভাবে স্পর্শকাতর বিষয়গুলো এড়িয়ে গেলেও এসব পাহাড় খেকোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ার পিছনে রয়েছে গভীর রহস্য।
দিনের পর দিন প্রতিযোগিতা মূলক উখিয়ার সর্বত্র যেভাবে পাহাড় নিধন চলছে, আগামী এক দশকেই পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ার আশংকা করছেন এখানকার পরিবেশ সচেতন ব্যক্তিরা।
পরিবেশ আইনের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন ও তদন্ত পূর্বক এ আইনের সঠিক প্রয়োগ করা না হলে ভবিষ্যতে উখিয়া উপজেলায় প্রাকৃতিক প্রদত্ত এসব পাহাড়ের কোন অস্থিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না।
স্থানীয় এলাকাবাসীরা না প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিশেষ করে উপজেলার রত্নাপালং ইউনিয়নের ভালুকিয়া বন বিটের আওতাধীন ৭নং ওয়ার্ডের পুরো তেলীপাড়া গ্রাম জুড়ে দীর্ঘদিন ধরে পাহাড় খেকোর দল নির্বিচারে পাহাড় নিধনযজ্ঞ করে আসছে।
এতে করে সচেতন এলাকাবাসী উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। কারণ স্ব-পরিবারে বসবাসরত স্থানীয় পরিবারগুলো এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা নিয়ে এক ধরনের দুঃচিন্তায় ভোগছেন। এছাড়া ভবিষ্যতে পরিবেশের হুমকির মুখে পড়ার আশংকায় তাদের ছেলে মেয়েদের বিভিন্ন রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে।
তাছাড়া পাহাড়ের মাটি কাটার পাশাপাশি গাছগাছালি নির্বিচারে কেটে ফেলায় এলাকাবাসীরা বসন্তের শুরুতেই প্রচন্ড গরম ও তীব্র তাপদাহ অনুভব করছেন বলে তাদের অভিযোগে জানা গেছে।
কোটবাজার ঝাউতলা সড়ক দিয়ে পালং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় পার হয়ে গেলে রুহুল্লার ডেবা সড়কের দক্ষিণ পার্শ্বে টিনের বাউন্ডারী দিয়ে অত্যন্ত তীক্ষ্ম ভাবেই বড় উচু একটি পাহাড় নিধন করে সমতল করে দালান নির্মাণের পায়তারা চালিয়ে আসছে দুবাই প্রবাসী আমিনুল হকের পরিবার। তিনিও তার বড় ছেলে বাবুল আহমদ বিদেশে অবস্থান করলেও এখানে দেখভাল করছেন তারই ছ্টো ছেলে সাইফুল ইসলাম।
পাহাড় কাটতে কোন রকম বাধাঁর সম্মুখিন হয়েছেন কিনা জানতে চাইলে সাইফুল জানান, পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে শুরু করে বন বিভাগ ও স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিদের টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করেই পাহাড় কাটার কার্যক্রম চালিয়ে আসছি।
তাছাড়া কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরে আমার এক জনৈক আত্নীয় থাকায় আমাদের বিরুদ্ধে পরিবেশ আইনে তারা মামলা করবে না। স্
থানীয়দের অভিযোগ, তেলীপাড়া গ্রামের প্রবাসী অর্থশালী ব্যাক্তিরা পাহাড় কাটার লাইসেন্স নিয়ে প্রকাশ্যেই চালাচ্ছে নিধনযজ্ঞ।
এ প্রসঙ্গে ভালুকিয়া বিট কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন উৎকোচ আদায়ের বিষয় অস্বীকার করে বলেন, এরা সবাই সন্ত্রাসী প্রকৃতির লোক। তাদের বিরুদ্ধে বন আইনে মামলা দেওয়া হয়েছে।
এলাকার লোকজন বলছেন ভিন্ন কথা, প্রতি বাড়ীর মালিক থেকে পাহাড় কাটা বাবদ প্রথমে ১ লক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। পরবর্তীতে পাহাড় কাটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতিমাসে ৫ হাজার টাকা করে চাঁদা উত্তোলন করে আসার চাঞ্চল্যকর অভিযোগ রয়েছে ওই বিট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক সর্দার শরিফুল ইসলাম বলেন, বনবিভাগের জায়গার পাহাড়গুলো বেশি কাটা হচ্ছে এক কথা সত্যি। এছাড়া পরিবেশ অধিদপ্তর সম্প্রতি জেলার বিভিন্ন পাহাড় খেকোর বিরুদ্ধে কয়েকেটি মামলাও দেওয়া হয়েছে। আগামী সপ্তাহে উখিয়া উপজেলায় পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালনা করা হবে।