খালেদ শহীদ/সোয়েব সাঈদ:
‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ দুর্নিবার, দেশরত্নের হাত ধরে মেধায় বিশ্বজয়ের অঙ্গীকার’। এ শ্লোগানে শনিবার (১৮ মার্চ) রামু বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ মাঠে উপজেলা ছাত্রলীগের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘নবীন বরণ উৎসব ও বিদায় অনুষ্ঠান’।
তারুণ্যের উচ্ছাস ও জয়গানের মুখর ছাত্রলীগের নবীন বরণ-বিদায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন, কক্সবাজার-৩ আসনের সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কক্সবাজার জেলার সভাপতি ইশতিয়াক আহমেদ জয় দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। সভাপতিত্ব করেন, নবীন বরণ উৎসব ও বিদায় অনুষ্ঠান উদযাপন পরিষদ আহ্বায়ক সাদ্দাম হোসেন।
সাইমুম সরওয়ার কমল এমপি বলেন, শিক্ষা অর্জন ছাড়া নিজ জীবনের উন্নয়ন করা যায়না। ঠিক তেমনি শিক্ষাহীন জনসমাজও দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারেন না। ভাল শিক্ষা কোনটি বেঁচে নিতে হবে, আজকের প্রজন্মকে। ভাল শিক্ষায় গড়ে তুলতে হবে ছাত্রলীগ নেতৃত্ব। শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে ব্যক্তিগত যোগ্যতা অর্জন করতে পারলেই দেশের জন্য কাজ করতে পারবে ছাত্রলীগ। সততা ও মেধা চর্চায় নিজেকে আধুনিক ও কর্মক্ষেত্রে যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এমপি কমল বলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধের পাশে ছিল, যারা ছাত্রলীগের পাশে থেকেছে, তারাই নেতৃত্বের যুদ্ধে জয়ী হয়েছে বারবার। দেশ সেবায় ছাত্রলীগ নেতাদের কাজ করতে হবে। তহবিল গঠন করে ছাত্রলীগকে দরিদ্র মানুষের সেবায় কাজ করতে হবে। রামু বিশ্ববিদ্যালয় কলেজকে মুক্তবুদ্ধি চর্চার কেন্দ্র উল্লেখ করে সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, সুশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার জন্য ছাত্র-শিক্ষকের সুসম্পর্ক উন্নয়ন করতে হবে। আজকের প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে দেশের উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে হবে। এই বয়সে শিক্ষিক হতে না পারলে, ভবিষ্যতে শিক্ষার কোন সুযোগ আসবেনা বলে তিনি সর্তক করে দেন, রামু বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের শিক্ষার্থী সহ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের।
কক্সবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, বিগত তিন বছরে রামু উপজেলার শিক্ষাক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। যা স্বাধীনতার ৪৩ বছরে হয়নি। স্বাধীনতার পূর্বে রামুতে উচ্চ বিদ্যালয় ছিলো ৫টি। বিগত ৪৩ বছরে এ সংখ্যা ছিলো ১২টি। অথচ বিগত তিন বছরে রামু উপজেলায় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে আরো ১০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এর সুফল ভোগ করবে রামু উপজেলার এগার ইউনিয়নের শিক্ষার্থীরা। বর্তমান শিক্ষাবান্ধব সরকার শিক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে। এখানকার ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা উন্নয়নের আমি নিরলসভাবে ভূমিকা রাখতে চাই। প্রয়োজনে কোন ছাত্রছাত্রী উচ্চ শিক্ষা অর্জনের জন্য বিদেশে পড়াশুনার জন্য যেতে চাইলে আমি বিমান টিকেটসহ ব্যয়ভার বহন করবো।
বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন, রামু উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রিয়াজ উল আলম, কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি জাফর আলম চৌধুরী, কক্সবাজার জেলা পরিষদ সদস্য শামসুল আলম, রামু কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. আবদুল হক। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কক্সবাজার জেলার সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) মোরশেদ হোছাইন তামিম নবীন বরণ-বিদায় অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তার বক্তৃতা করেন।
ইশতিয়াক আহমেদ জয় বলেন, সমুদ্র জনপদ কক্সবাজারের ঐতিহ্যবাহী অঞ্চল রামু। ক্রীড়া-সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক অঙ্গনের বিরল ইতিহাস-ঐতিহ্য বহন করছে এ রামু অঞ্চলটি। ইতিহাসময় এ অঞ্চলের ধারকবাহকের অন্যতম সারথি রামু ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের ইতিহাসের মতো সমৃদ্ধ ছাত্র নেতৃত্বের ইতিহাস, বিশ্বের অন্য কোন ছাত্র সংগঠনের নেই। দেশের স্বাধীনতা অর্জনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক বাংলাদেশ ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেল। স্বাধীনতা বিরোধীরা ইতিহাস থেকে জাতির জনকের নাম মুছে ফেলার চেষ্টা করছে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে সবসময়। তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রকৃত ইতিহাস জানতে হবে। বঙ্গবন্ধুকে জানতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস ধারণ করে, প্রচার করতে হবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের।
প্রধান বক্তা মোরশেদ হোছাইন তামিম বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশকে আফগান বানানোর ষড়যন্ত্র চলছে। তাদের চিহ্নিত করতে হবে। সুশিক্ষা অর্জন করে, দেশের সঠিক ইতিহাস জানানোর দায়িত্ব নিতে হবে ছাত্রলীগকে। জাতির পিতা মুজিবকে জানতে হবে, একাত্তরের প্রকৃত ইতিহাস জানাতে হবে প্রজন্মকে। গ্রামবাংলার মেঠো পথ ধরে ছাত্রলীগের ইতিহাস-ঐতিহ্য বয়ে বেড়াতে হবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দকে।
ছাত্রলীগের নবীন বরণ-বিদায় অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন, কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ইসমাইল সাজ্জাদ, উপজেলা যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক নীতিশ বড়ুয়া, রামু উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রজত বড়ুয়া রিকু, রামু কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নজুরুল ইসলাম, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম-আহবায়ক রাশেদ আলী খান, রাজারকুল ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মাশেক সিকদার প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে অতিথির আসনে উপস্থিত ছিলেন, জেলা আওয়ামীলীগের মহিলা সম্পাদক মুসরাত জাহান মুন্নী, কক্সবাজার জেলা পরিষদ সদস্য নুরুল হক, জোয়ারিয়ানালা ইউপি চেয়ারম্যান কামাল শামশুদ্দিন আহমেদ প্রিন্স, ফতেখাঁরকুল ইউপি চেয়ারম্যান ফরিদুল আলম, সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ভূট্টো, ঈদগড় ইউপি চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমদ ভূট্টো, দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মো. ইউনুচ ভূট্টো, রাজারকুল ইউপি চেয়ারম্যান মুফিজুর রহমান, গর্জনিয়া ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম, রশিদ নগর ইউপি চেয়ারম্যান শাহ আলম, কাউয়ারখোপ ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ, কচ্ছপিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবু মোহাম্মদ ইসমাঈল নোমান, জেলা স্বেচ্ছা সেবক লীগের যুগ্ম-সম্পাদক নুর আল হেলাল, সাবেক জেলা ছাত্রলীগ নেতা মাসুদুর রহমান মাসুদ, গর্জনিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন সোহেল, দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি মাস্টার রাহমত উল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক নুরুল করিম পুতু, খুনিয়াপালং যুবলীগ সভাপতি আবদুল্লাহ বিদ্যুৎ মেম্বার, রামু চৌমুহনী বণিক সমিতির সদস্য আজিজুল হক আজিজ, রাজারকুল ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি মাশেকুর রহমান, রামু কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি নাহিদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক শাহারিয়া ইরফান, রামু কলেজ ছাত্রলীগ নেতা ওয়াহিদুর রহমান, ছাত্রলীগ নেতা আবদুল্লাহ, রিয়াজ আহমেদ, নওয়াছির আরাফাত সোহেল, মিশু, ইকবাল, সোহেল, আজিজুল হক আজিজ, সাইফুল, হেলাল, লবা, জমির সিকদার প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে রামু কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী সহ রামু উপজেলা আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। নবীন বরণ উৎসব ও বিদায় অনুষ্ঠান উদযাপন পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক ইকবাল হোসেন ও সদস্য সচিব মোহাম্মদ নোমান আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন। নবীন বরণ উৎসবকে ঘিরে পুরো কলেজ ক্যাম্পাস সকাল থেকে ছাত্রছাত্রী ও অতিথিদের পদচারনায় মুখরিত হয়ে উঠে। সকাল ১১টায় আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে শুরু হয় উৎসবের কার্যক্রম। ছাত্রীদের মাথায় কাঁচা ফুলের বেনী আর ছাত্রদের পরনে রংবেরংয়ের টি শার্ট উৎসভাস্থলকে করে দৃষ্টিনন্দন ও বৈচিত্রময়।
অনুষ্ঠানের নবীনদের উদ্দেশ্যে কলেজের ছাত্রী মহুয়া মমতাজ এবং প্রবীনদের উদ্দেশ্যৌ তারিন মানপত্র পাঠ করেন। শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলায়াত, গীতা ও ত্রিপিটক পাঠ করেন, দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী, তর্মা শর্মা ও কেয়া বড়ুয়া।
আলোচনা সভা শেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করে হাজারো ছাত্রছাত্রীদের মাতিয়ে তুলেন, ক্লোজআপ ওয়ান তারকা রন্টি দাশ। চট্টগ্রাম ও রামুর শিল্পীরাও অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন।