বিচারিক তদন্তে নারায়ণগঞ্জে শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে লাঞ্ছনায় সম্পৃক্ততা মেলায় সাংসদ এ কে এম সেলিম ওসমানসহ দুজনকে তলব করেছে ঢাকার একটি আদালত।
পুলিশি তদন্তে ছাড় পাওয়া সেলিম ওসমান ও স্থানীয় অপু প্রধান নামে ওই ব্যক্তিকে আগামী ১৪ মে হাজির হতে হবে ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে।
আদালতের নির্দেশে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার এই দুজনের পূর্ণ ঠিকানা জমা দেওয়ার পর মুখ্য বিচারিক হাকিম জেসমিন আরা বুধবার তাদের তলবের আদেশ দেন বলে এ আদালতের পেশকার আবদুল্লাহ আল মামুন জানান।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মারামারি, মানহানি ও অশালীন কাজের জন্য তাদের তলব করা হয়েছে। ১৪ মের মধ্যে যে কোনো দিন তারা আদালতে হাজির হয়ে জামিন চাইতে পারবেন।
ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে গত বছরের ১৩ মে নারায়ণগঞ্জের পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তিকে তারই স্কুলের প্রাঙ্গণে লাঞ্ছিত করা হয়। ওই ঘটনার ভিডিওতে প্রধান শিক্ষককে কান ধরে উঠ-বসের নির্দেশ দিতে দেখা যায় স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানকে।
এই ঘটনা প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। তবে বিষয়টি নিয়ে নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি হলে পুলিশ ‘লাঞ্ছনার প্রমাণ পাওয়া যায়নি’ উল্লেখ করে অভিযোগ সত্য নয় বলে আদালতে প্রতিবেদন দেয়।
কিন্তু পুলিশ প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে হাই কোর্ট পুরো ঘটনার বিচারিক তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার পর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম শেখ হাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। ওই কমিটি গত ১৯ জানুয়ারি হাই কোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করে।
এরপর ২২ জানুয়ারি বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি এ জে বি এম হাসানের বেঞ্চ ওই তদন্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে জিডিসহ বিচারিক নথিপত্র অবিলম্বে ঢাকায় পাঠাতে নির্দেশ দেয়।
অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট নালিশি মামলা করার জন্য জিডিসহ বিচারিক নথিপত্র গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বিচারক জেসমিন আরার কাছে পৌঁছায়। এরপর সেলিম ওসমান ও অপুর নাম-ঠিকানার পূর্ণ বিবরণ চান বিচারক।
আইন অনুযায়ী হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের কোনো কর্মচারী বা সংশ্লিষ্ট আদালত পুলিশের কোনো কর্মকর্তা এখন নালিশি এ মামলার বাদী হতে পারেন বলে ঢাকার বিচারিক আদালতে ফৌজদারি মামলার বিশেষজ্ঞ আইনজীবী আমিনুল গণী টিটো জানান।
শেখ হাফিজুর রহমান নেতৃত্বাধীন বিচার বিভাগীয় কমিটি ঘটনা সংশ্লিষ্ট ২৭ জনের জবানবন্দির ভিত্তিতে ওই প্রতিবেদন জমা দেয়।
এর প্রেক্ষাপটে হাই কোর্টের আদেশে বলা হয়, “আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব হচ্ছে দেশের আইন নিরপেক্ষ ও বৈষম্য ছাড়া প্রয়োগ করা। কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারেন না। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নন, সবাই আইনের অধীন। এটি আইনের শাসনের মর্মবাণী। বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আমরা ওই ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছি। বিচারের স্বার্থে এটি যথাযথ বলে প্রতীয়মান হয়।”
সূত্র: বাংলাট্রিবিউন।