আমাদের রামু প্রতিবেদক:
বৌদ্ধ ধর্মকে অবমাননা, এ ধর্মের প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধ ও বৌদ্ধ ভিক্ষুকদেরকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে দৈনিক জনকণ্ঠ সম্প্রতি প্রতিবেদন প্রকাশ করায় এর প্রতিবাদ জানিয়েছে বৌদ্ধ ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও পুরাকীর্তি সংরক্ষণ পরিষদ।
এমন উসকানিমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করে মুসলমান ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টাকারী পত্রিকাটির প্রতিবেদক, সম্পাদক ও প্রকাশকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া দাবিও তুলেছে সংগঠনটি।
রবিবার (২১ মে) বিকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনী মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরেন সংগঠনটির সভাপতি প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু।
লিখিত বক্তব্যে প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু বলেন, ‘বৌদ্ধ ধর্ম ও এ ধর্মের প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধকে নিয়ে সম্প্রতি যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, মিথ্যা ও কুরুচিপূর্ণ। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।’
প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু বলেন, ‘পত্রিকার প্রথম পাতায় প্রকাশিত প্রতিবেদনটির প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত বৌদ্ধ ধর্ম, ধর্মটির প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধ ও বৌদ্ধ ভিক্ষুকদেরকে নিয়ে মানহানিকর ও অবমাননাকর বিভিন্ন কথা লেখা হয়েছে। এমনকি গৌতম বুদ্ধকে সন্ত্রাসীও বলা হয়েছে। এছাড়া, দেশের পবিত্র তিনটি বৌদ্ধ বিহারে সন্ত্রাসী কার্যক্রম, অস্ত্রের প্রশিক্ষণ ও জুডো কারাতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় বলেও দাবি করা হয়েছে। কিন্তু এর সবই মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন তথ্য।’ এসব মিথ্যা প্রতিবেদন প্রকাশ করে কতিপয় গোষ্ঠী দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
বৌদ্ধ ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও পুরাকীর্তি সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি আরও বলেন, ‘প্রতিবেদনটির বিভিন্ন জায়গায় বলা হয়েছে, বৌদ্ধদের এমন সন্ত্রাসী কার্যক্রমের উদ্দেশ্য ও প্রশিক্ষণের মূল টার্গেট মুসলমানরা।’ এই কথাটি লেখার মাধ্যমে স্পষ্টতই বৌদ্ধ জনগোষ্ঠী ও বৌদ্ধ ভিক্ষুদের বিরুদ্ধে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের ক্ষেপিয়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
অভিযোগে প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু বলেন, ‘প্রতিবেদনটিতে সাংবাদিকতার কোনও নীতিমালা অনুসরণ করা হয়নি। অভিযুক্ত কারও কোনও বক্তব্য নেই, দায়িত্বশীল কারও বক্তব্য নেই। বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে এসব তথ্য জানা গেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ফলে এটা স্পষ্ট যে, প্রতিবেদনটি স্বেচ্ছাচারিতাদুষ্ট ও সাংবাদিকতার নীতিমালার পরিপন্থী।’
প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু দৈনিক জনকণ্ঠের প্রতিবেদক, সম্পাদক ও প্রকাশকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাসহ তিনটি দাবি তুলে ধরেন। এগুলো হলো প্রতিবেদনটিকে কুৎসাপূর্ণ ও উসকানিমূলক উল্লেখ করে ভুল স্বীকার ও ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে; প্রতিবেদক, সম্পাদক ও প্রকাশকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে এবং এ ধরনের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রতিবেদন যেন আর কোনও পত্রিকা না ছাপতে পারে তার জন্য প্রেস কাউন্সিলকে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা জারি করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যের পর প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন কলামিস্ট ও সমাজ গবেষক রেহনুমা আহমেদ, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) নেতা শামসুন্নাহার জোস্না, সাংবাদিক একেএম আতিকুজ্জামান, বিশিষ্ট আলোকচিত্রী শহিদুল আলম প্রমূখ।