বিবিসি বাংলা:
গত মে মাসের প্রথম দিকে সাতক্ষীরার একজন সংসদ সদস্য জগলুল হায়দারের মাটির টুকরি মাথায় এবং শ্রমিকদের সাথে ভাত খাওয়ার একটি ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। ফেসবুকে এটিতে লাইক দিয়েছেন অনেকে। শেয়ার হয়েছে অনেকবার।
এর কিছুদিন পর আওয়ামী লীগের আরেকজন সংসদ সদস্য এবং দলের প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ তার নির্বাচনী এলাকায় মাটি কাটছেন, এমন ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
এর পর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকের রিক্সা চালানোর ছবি দেখা গেল ফেসবুকে। এটিও ভাইরাল!
সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ছবি কি কেবলই কৌতুকের জন্য, নাকি আগামী নির্বাচন সামনে রেখে তৃণমূল পর্যায়ে জনসংযোগ বাড়ানোর লক্ষ্যে একটি সচেতন কৌশল?
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরা মনে করেন, সাধারণ মানুষের সাথে তারা কতটা আন্তরিকভাবে মিশতে পারেন এগুলো তার উদাহারণ। কিন্তু তাদের সমালোচকরা বলছেন এসব প্রচারণার একটি অংশ।
সম্প্রতি আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য এবং নেতাদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড ফেসবুকে তুলে ধরার একটি জোর প্রচেষ্টা দেখা যাচ্ছে। অনেকে মনে করেন নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তারা তত বেশি সক্রিয় হচ্ছেন।
কয়েক মাস আগে আওয়ামী লীগের গবেষণা সংস্থা সিআরআই-এর তরফ থেকে একটি ওয়ার্কশপ আয়োজনের মাধ্যমে সংসদ সদস্যদের ফেসবুকে সক্রিয় হবার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এর পর থেকে দেখা যাচ্ছে দলটির নেতারা নানাভাবে নিজেদের ফেসবুকে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন।
সংসদ সদস্য জগলুল হায়দার বলেন, “আমি দুইবার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলাম। তখন থেকে সাধারণ মানুষের সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। আমি প্রথম ২০১৪ সালে একটি ভাঙ্গা বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু করি। কিন্তু সে সময় মিডিয়া বিষয়টা তেমনভাবে প্রচার করেনি। আমি এর মধ্যে কোন রাজনীতি খুঁজি না এবং এর মধ্যে আমার কোন দূরভিসন্ধিও নাই।”
আওয়ামী লীগ মনে করে বর্তমান সময়ে সংবাদপত্র কিংবা টেলিভিশনের তুলনায় ফেসবুকের মাধ্যমে মানুষের কাছে দ্রুত এবং কার্যকরীভাবে পৌঁছানো সম্ভব। সেজন্য ফেসবুকে সংসদ সদস্যদের সক্রিয় হবার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। কিন্তু মাটি কাটা কিংবা রিক্সা চালানোর বিষয়টিকে তারা প্রচারনার অংশ হিসেবে বর্ণনা করতে চান না।
আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক এবং সংসদ সদস্য হাছান মাহমুদ বলেন, সম্প্রতি চট্টগ্রাম অঞ্চলে ঝড় এবং বৃষ্টিপাতের কারণে তার নির্বাচনী এলাকায় ২৮জন মানুষ নিহত এবং ১২৪টি রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাস্তা সংস্কারের জন্য নেতা কর্মীদের উৎসাহ দিতে তিনি নিজে মাটি কাটতে নেমেছেন বলে জানান হাছান মাহমুদ।
মি: মাহমুদ বলেন, “রাস্তা মেরামতের কাজ তাদের নয়। রাস্তা মেরামতের কাজ সরকারী বিভিন্ন সংস্থার। কিন্তু এ কাজে আমাদেরও যে অংশগ্রহণ করা প্রয়োজন, সেটি বোঝানোর জন্যই আমি নেতা-কর্মীদের সাথে নিয়ে ব্যাপক পরিকল্পনার অংশ হিসেবে উদ্বোধন করেছিলাম।”
মি: মাহমুদ দাবী করেন, তিনি মাটি কাটার পর সে কাজ এখনো চলমান আছে। সেজন্য বিষয়টিকে ফেসবুক প্রচারণার অংশ বলে মনে করেন না তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং রাজনীতি বিশ্লেষক আসিফ নজরুল মনে করেন, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা বিভিন্নভাবে ফেসবুকে নিজেদের তুলে ধরার চেষ্টা করছেন।
অধ্যাপক নজরুল নিজেও ফেসবুকে বেশ সক্রিয় এবং তার তিন লাখের বেশি ফলোয়ার আছে। তিনি প্রতিনিয়িত ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মনোভাব বোঝার চেষ্টা করেন।
আওয়ামী লীগ নেতাদের ফেসবুক প্রচারণার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ” এটার কতটা ইতিবাচক ফল হবে আর কতটা নেতিবাচক ফল হবে সেটা বলা সম্ভব না।”
তিনি করেন, যে সংসদ সদস্যের সাথে তাঁর নির্বাচনী এলাকার জনগণের ভালো যোগাযোগ আছে, তিনি যদি ফেসবুক কাজে লাগিয়ে প্রচারণা করেন তাহলে সেটি হয়তো ভালো প্রভাব ফেলবে।
কিন্তু জনগণের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ততা না থাকলে শুধু ফেসবুক প্রচারণা কতটা কাজে দেবে সে বিষয়ে সন্দিহান অধ্যাপক নজরুল।