সাংবাদিকসহ বিভিন্ন মহল থেকে তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা বাতিলের দাবি উঠলেও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা এবং রাষ্ট্র ও ধর্মের পবিত্রতা রক্ষার জন্য এই আইন করা হয়েছে।
বুধবার সংসদে জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমানের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী একথা বলেন।
সাম্প্রতিক সময়ে সংবাদ প্রতিবেদন ও ফেইসবুক স্ট্যাটাসের জন্য কয়েকজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ৫৭ ধারায় মামলা দায়ের এবং এই ধারায় কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের প্রেক্ষাপটে একে নির্বতনমূলক আখ্যা দিয়ে বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করছে সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন।
তবে তথ্যমন্ত্রী বলছেন, দেশে সাংবাদিকের সংখ্যার তুলনায় ৫৭ ধারায় ‘খুবই নগণ্য সংখ্যক’ গ্রেপ্তার হয়েছে।
বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে দুই হাজার ৮০০টির বেশি পত্রপত্রিকা এবং এক হাজার ৮০০টির বেশি অনলাইন পোর্টাল চলছে।
“প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে ১০ জন সাংবাদিক ধরলে এখানে কত হাজার সাংবাদিক কাজ করছে তা দেখা যাবে। সেদিক থেকে খুবই নগণ্য, দুই-একজন এ আইনে গ্রেপ্তার হয়েছে। আর গ্রেপ্তার হওয়া সবাই আদালতে যাওয়ার দুই-একদিনের মধ্যে জামিন পেয়েছেন।”
৫৭ ধারায় বলা হয়েছে- ওয়েবসাইটে প্রকাশিত কোনো ব্যক্তির তথ্য যদি নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হতে উদ্বুদ্ধ করে, এতে যদি কারও মানহানি ঘটে, রাষ্ট্র বা ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়, তা হবে অপরাধ। এর শাস্তি অনধিক ১৪ বছর কারাদণ্ড এবং অনধিক এক কোটি টাকা জরিমানা।
২০০৬ সালে হওয়া ওই আইন ২০০৯ ও ২০১৩ সালে দুই দফা সংশোধন করা হয়। সর্বশেষ সংশোধনে সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর থেকে ১৪ বছর কারাদণ্ডের বিধান করা হয়। আর ৫৭ ধারার অপরাধকে করা হয় অজামিনযাগ্য।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, “সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তা, নারীর সম্মান, শিশু নিরাপত্তা এবং রাষ্ট্র ও ধর্মের পবিত্রতা রক্ষার জন্যসহ ধর্মীয় সম্প্রদায়ের আচার অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা বিধান করার জন্য এই আইনটি করা হয়েছে। এই ক্ষেত্রে ভিন্ন ঘটলে কেবল আইনটি প্রয়োগ করা হয়।”
এই ধারা রাখার পক্ষে অবস্থান জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “ডিজিটাইজেশনের ফলে আমাদের গণমাধ্যমের প্রসার ও বিকাশ ঘটেছে। তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে স্পেস তৈরি হয়েছে। সেখানে যদি কেউ অপব্যবহার করে। তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রয়োগ করে যদি কেউ চরিত্র হনন করে, কারও নিন্দা করে, মিথ্যাচার করে, বিশৃঙ্খলা তৈরি করে ধর্মীয় বিভাজন বা বিদ্বেষ তৈরি করে সেখানে এই আইনটি প্রয়োগ হয়। অর্থাৎ কেউ যদি অনলাইন বা সামাজিক গণমাধ্যমে এরকম কাজে লিপ্ত হয় তার ক্ষেত্রে এই আইনটি প্রয়োগ হয়।এটা সাংবাদিকদের জন্য প্রয়োগ হয়- এট ঠিক নয়।”
ইনু বলেন, “এই আইনটি করা হয়েছে ১৬ কোটি মানুষের জন্য।যে কোনো নাগরিক সামাজিক গণমাধ্যম যেমন ফেইসবুক টুইটার এসব জায়গায় যদি সে চরিত্রহনন করে পোস্ট দেয় তাহলে এই আইনের আওতায় আসবে।”
৫৭ ধারার মামলায় জামিনের বিষয় নিয়ে তিনি বলেন, “এটাকে ননকগনিজেবল অর্থাৎ অজামিনযোগ্য বলেছেন- এটা আসলে ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। সঠিক ব্যাখ্যা হচ্ছে না। এই আইনে যারা গ্রেপ্তার হয় তারা কিন্তু একটা পর্যায় জামিনযোগ্য। এই আইনে যারা গ্রেপ্তার হয়েছে তার সবাই কিন্তু জামিন পেয়েছেন। নিম্ন আদালতে জামিন পায় না, উচ্চ আদালতে জামিন পায়।”
সাংবাদিকদের ওপর এই আইনের প্রয়োগের বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে এই আইনের প্রয়োগের ক্ষেত্রে আমরা প্রত্যেকটি ঘটনা তলিয়ে দেখেছি-যখন কোনো জায়গায় এই আইনের বরখেলাপ হয় বা হয়রানির ব্যাপার হয়, সেখানে তথ্য মন্ত্রণালয় হস্তক্ষেপ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হস্তক্ষেপ করে। আর কোনো মিথ্যাচার হয়ে থাকলে বিচারকরাও সেটা দেখে জামিন দিয়ে দিচ্ছেন।”
ডিজিটাল নিরাপত্তায় সরকারের নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগের কথা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “সরকার সমগ্র ডিজিটাল অপরাধ মোকাবিলা করার জন্য, ব্যবস্থাপনা করার জন্য একটি সমন্বিত জিডিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট তৈরির প্রচেষ্টা করছে।সেই আইনটি আসার পরে আইনমন্ত্রী ও সরকার বিচার বিশ্লেষণ করে দেখবে, ৫৭ ধারার এই আইনটি রাখার দরকার আছে কি না।
“তবে এই আইনটি মানবাধিকারবিরোধী তা মনে করি না। বাংলাদেশের সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক হলে এতদিনে এটা উচ্চ আদালতে গেলেই বাতিল হয়ে যেত। আজ পর্যন্ত কেউ উচ্চ আদালতে গিয়ে এই আইনটিকে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক- তা প্রমাণ করতে পারেনি।”
রিপোর্ট বিডিনিউজের।