টেকনাফ প্রতিনিধিঃ
বাল্যবিবাহ বন্ধে করতে সরকার যতই কঠোর হচ্ছে ততই বাড়ছে বাল্যবিবাহের সংখ্যা। কিছুতেই রোধ করা যাচ্ছে না বাল্যবিবাহ। এ সংখ্যায় এগিয়ে আছে টেকনাফ উপজেলা।
পরিসংখ্যানে আরো দেখা যায়, টেকনাফ উপজেলায় বাল্য বিবাহের সংখ্যা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এ উপজেলার মানুষ শিক্ষা থেকে এখনো অনেক পিছিয়ে আছে। সারা বাংলাদেশে মোট ৪৮৭টি উপজেলা রয়েছে। শিক্ষার হার নিয়ে এ উপজেলা সর্বনিম্নে রয়েছে।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় শিক্ষার হার দিন দিন বৃদ্ধি পেলেও এই উপজেলার মানুষ এখনো শিক্ষার ক্ষেত্রে এখনো অনেক পিছিয়ে রয়েছে।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, বর্তমানে টেকনাফ উপজেলার শিক্ষার হার সর্বোচ্চ ২৬ %। এর একমাত্র কারণ এ এলাকার যুবক যুবতীদের লেখাপড়া শেষ হতে না হতেই কম বয়সে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করা হয়।
গত কয়েকদিন ধরে টেকনাফ উপজেলার কয়েকটি স্কুল সূত্রে জানা যায়, ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রীরা লেখাপড়া শেষ না করে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছে। অনেকে নিজের ইচ্ছায় পছন্দের পাত্রকে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করছে। আবার অনেক ছাত্রীদেরকে অভিভাবক লেখাপাড়া থেকে সরিয়ে এনে কম বয়েসে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে।
দু:খের ব্যাপার হচ্ছে, গত কয়েকদিন আগে টেকনাফের এক অষ্টম শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী নাম তার জরিনা, বয়স (১৩)। বান্ধবীরা তাকে আদর করে ডাকে প্রেয়সী । সে এখনো কিশোরী, মেয়েটির আশা ছিল লেখাপড়া শিখে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ডাক্তার হবে। তার আরো আশা ছিল, ডাক্তারী পাশ করে গ্রামের হতদরিদ্র মা,বোনদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিতে পাশে দাঁড়াবে। কিন্তু তার আশাটুকু এক নিমিষেই শেষ করে দিল তার বাবা । এভাবেই চলছেই প্রতিনিয়ত টেকনাফের বাল্যবিবাহ প্রথা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেই স্কুলের একজন শিক্ষক দু:খ প্রকাশ করে বলেন, এই কম বয়সে মেয়েটিকে বিয়ে না দিয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে অনেকবার অনুরোধ করেছি।
কারণ মেয়েটি আমাদের স্কুলের মেধাবী ছাত্রী। এবারে জেএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন এ প্লাস পাওয়া ছাত্রী। অথচ তার বাবা আমাদের কোন কথা পাত্তা না দিয়ে মেয়েটিকে বাল্যবিবাহ দিতে বাধ্য করল। চিরতরে বন্ধ করে দিল তার লেখাপড়া।
তিনি আক্ষেপ করে আরো বলেন, এমনিতেই আমরা শিক্ষার হার থেকে অনেক পিছিয়ে । আবার আনপড়া অভিভাবকেরা যদি অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেমেয়েকে নিয়ে এভাবে বাল্যবিবাহের উৎসবে মেতে থাকলে এ উপজেলায় কোন দিন বাল্যবিবাহ রোধ করা সম্ভব হবে না। শিক্ষার হারও বাড়ানো যাবে না।
এব্যাপারে টেকনাফ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকতা (ভারপ্রাপ্ত) নুরুল আবসার আমাদের রামু ডটকম কে বলেন, বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে সরকার কঠোর পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। আমরা সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে বিভিন্ন স্কুলে ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদেরকে সচেতন হওয়ার জন্য প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছি।
আর যে সমস্ত অভিভাবকেরা মেয়েদেরকে লেখাপড়া না শিখিয়ে কম বয়সে বিয়ে দিচ্ছে। সে সমস্ত অভিভাবকদেরকে আইনের আওতায় আনতে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তার পাশাপাশি বাল্যবিবাহের সাথে যারা জড়িত হবে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে। বাল্যবিবাহ রোধ করতে আমরা সর্বদা প্রস্তুত রয়েছি।
এ ব্যাপারে সুশীল সমাজের কয়েকজন অভিমত প্রকাশ করে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে টেকনাফ উপজেলায় বাল্যবিবাহের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ বিবাহকে প্রতিরোধ করতে হলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ টেকনাফ উপজেলার সর্বস্তরের কর্মকর্তাদেরকে এগিয়ে আসতে হবে। তা না হলে এ অপরাধ কর্মকান্ড রোধ করা সম্ভব হবে না।