সেলিম আউয়াল :
সিলেট বৌদ্ধ ধর্মেরও লীলাভূমি ছিলো। বৌদ্ধগ্রন্থ মতে সিলেট শহরেই ছিলো জাগ্রত বৌদ্ধতীর্থ। ৭৫০ থেকে ১১৫০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ৪০০ বছর বঙ্গে পাল রাজাদের যুগ। এরা ছিলেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ও বিদ্যোৎসাহী। তারা বৌদ্ধ বিহার নির্মাণ ও বৌদ্ধ পন্ডিতদের পৃষ্টপোষকতা করতেন। এ সময়ে সিলেটে বৌদ্ধ ধর্মের প্রসার ঘটে। সাধনমালা গ্রন্থে ওড়িয়ান, পূর্ণগিরি ও কামাখ্যার সাথে সিলেট সিদ্ধপীঠের উল্লেখ আছে। গোপীচন্দ্রের গীতিকায় ভবানীদাস বৌদ্ধদের আদ্যমাটির বর্ণনায় লিখেছেন ‘আদ্য মাটি আছে কিছু মেহেরকুল নগরে/নিজ মাটি আছে কিছু বিক্রমপুর শহরে/আর আছে আদ্যমাটি তরফের দেশ (হবিগঞ্জ)/ চাটিগ্রাম পূর্বমাটি জানিবা বিশেষ।
ডাকার্ণব নামের গ্রন্থে উল্লেখিত ৬৪টি তান্ত্রিক পীঠের একটি হরিকোল বা হরিকেল। ‘হরিকেল’ সিলেটেরই একটি নাম বলে গবেষকদের অভিমত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে রক্ষিত ‘রুদ্রাÿ মাহাত্ম’ ও ‘রূপচিন্তানিকোষ’ বই দুটোর পান্ডুলিপিতে ‘হরিকোল’ (হরিকেল) ও শ্রীহট্ট অভিন্ন বলে উলেøখ করা হয়েছে।
সিলেটে কখন বৌদ্ধ ধর্মের প্রসার ঘটে, এ ব্যাপারে স্পষ্ট ঐতিহাসিক নিদর্শণ পাওয়া যায় না। তবে অনুমান করা হয় বাংলার পাল রাজাদের সময়ে সিলেটে বৌদ্ধ ধর্মের ব্যাপক প্রসার ঘটে। ৭৫০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১১৫০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রায় চার শ’ বছর বঙ্গে পালদের রাজত্ব ছিলো। পাল রাজারা ছিলেন বৌদ্ধ। তারা বৌদ্ধ ধর্মের প্রচার প্রসারে ব্যাপক তৎপরতা চালিয়েছেন। তবে এর আগেই এখানে বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাব প্রতিষ্ঠিত হয় চীনা পর্যটক হিউয়েন সাং-এর বর্ণনায় জানা যায়। তিনি ৬৪০ খ্রিস্টাব্দে সিলেট এসেছিলেন।
দেওয়ান আজরফ বলেছেন, সিলেটে বৌদ্ধ ধর্ম বিস্তার না হলেও একসময় অনেক বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী লোকেরা সিলেটে ছিলেন। এ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী লোকদের বংশধরগণ সেনদের অত্যাচারে অতীষ্ট হয়ে চট্টগ্রামের সমুদ্র কুলবর্তী অঞ্চলে এবং বরিশালের দিকে পলায়ন করে আত্মরক্ষা করেছিলেন। যারা পলায়ন করেননি তারা বাইরের হিন্দু আচার অনুষ্ঠানে রত থাকলেও অন্তরে ছিলেন বৌদ্ধ। এজন্যে তাদের crypto buddist বা ছদ্মবেশী বৌদ্ধ বলা যায়। পরবর্তীকালে এরা আবার হিন্দু সমাজে প্রবেশ করলেও তাদের আচার আচরণে বৌদ্ধ প্রভাব বিদ্যমান ছিল। সিলেটের নাথ সম্প্রদায়ের লোকেরা তাদেরই বংশধর।