বিডিনিউজঃ
চৌদ্দ বছর আগে ২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট দিনটিকে ভুলে যেতে চান উম্মে রাজিয়া কাজল। কারণ সেই দিনের ভয়াবহতা মনে হলে এখনো শিউরে ওঠেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের এই সহ-মহিলা বিষয়ক সম্পাদক।
তবে শুধু কাজলই নন, তার মতো যারা সেদিনের গ্রেনেড হামলার চিহ্ন আর স্প্লিন্টার শরীরে এখনো বয়ে বেড়াচ্ছেন- তাদের আশা, নারকীয় সেই হামলায় জড়িতদের সর্বোচ্চ সাজা হবে।
তাদের সেই অপেক্ষার অবসান হবে বুধবার (১০ অক্টোবর)। ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় দায়ের করা দুই মামলার রায় ঘোষিত হওয়ার কথা এদিন।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের জনসভায় অস্থায়ী মঞ্চ হিসেবে ব্যবহৃত ট্রাকটির পাশ ঘেঁষেই ছিলেন উম্মে রাজিয়া কাজল। তার কয়েক হাত দূরে ছিলেন আওয়ামী লীগের তৎকালীন মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমান আইভী রহমান।
গ্রেনেড হামলায় আইভী রহমান নিহত হলেও মারাত্মক আহত কাজল প্রাণে বেঁচে যান। সেদিন কাজলের শরীরে তিনশর বেশি স্প্লিন্টার বিদ্ধ হয়েছিল।
কেমন আছেন- প্রশ্নের জবাবে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তিনি বলেন, “আগের চেয়ে অনেক ভালো। কিছুটা চলাফেরা করতে পারি। তবে একদিন চলাফেরা করলে দশদিন বসে থাকতে হয়।
“আমার শরীরে প্রায় সাড়ে তিনশ’ স্প্লিন্টার ছিল। ২০০৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর কলকাতার পিয়ারলেস হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ৩৭টি বের করা হয়। বাকিগুলো আর বের করা যায়নি। কোমরে এখন প্রায় ৫০টি রয়েছে। মাঝে মধ্যেই কোমর ফুলে যায়, ঘা হয়। তখন একেবারেই চলাফেরা করতে পারি না।”
কিছুদিন আগেও কাজলকে হাঁটতে হত ক্র্যাচে ভর দিয়ে। এখন অবশ্য কারো সাহায্য ছাড়াই চলাফেরা করতে পারেন। কিন্তু পায়ের ব্যথা বাড়লে ক্র্যাচ ব্যবহার করতে হয়। গ্রেনেড হামলার পরপরই তার ডান পায়ের গোড়ালিতে অস্ত্রোপচার হয়, সেই ডান গোড়ালি শুকিয়ে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।
কাজল শারীরিক যন্ত্রণার মাঝেও ব্যস্ত রয়েছেন আইনপেশায়। বর্তমানে তিনি গোপালগঞ্জের সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য।
বুধবারের রায়ে গ্রেনেড হামলায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে বলে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “এ ধরনের নৃশংস ঘটনা যারা ঘটিয়েছে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে এটা আশা করছি। তাদের ফাঁসি দেবে আশা আমাদের।”
সাভারের মাহবুবা পারভীন ছিলেন ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক। ঢাকায় দলীয় কর্মসূচিতে প্রায়ই অংশ নিতেন। ঘটনার দিনও ছিলেন আওয়ামী লীগের জনসভায়, যার স্মৃতি হিসেবে এখনো শরীরে নিয়ে বেড়াচ্ছেন ১৮শর মতো স্প্লিন্টার।
স্প্লিন্টারের যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে একবার নিজেই ব্লেড দিয়ে চামড়া কেটে তা বের করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু কয়টা বের করবেন? উল্টো কাটা সেই স্থানে ধরেছে পচন। পায়ের সঙ্গে বাঁ হাতটাও অচল হয়ে গেছে তার। মাথায় দুটি স্প্লিন্টার থাকায় সামান্য চোটেই সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন।
মঙ্গলবার নিজের যন্ত্রণাকাতর সময়ের সঙ্গে শোনান সেদিনের কথা।
“আমি মঞ্চ থেকে নিচে নেমে আসছিলাম। ঠিক সেই মুহূর্তে বিকট শব্দে গ্রেনেড বিস্ফোরিত হয়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ি।”
জানালেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আশীষ কুমার মজুমদার হাসপাতালে না নিয়ে গেলে তিনিও হয়তো সেদিন লাশ হয়ে পড়ে থাকতেন।
মাহবুবা পারভীনের দুই ছেলে আসিফ পারভেজ ও রুশাদ জোবায়ের। স্বামী বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ফ্লাইট সার্জেন্ট এমএ মাসুদ।
শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, “আহত হওয়ার পর কলকাতার পিয়ারলেস হাসপাতালে চিকিৎসার সব ব্যয় বহন করেছিলেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া দুই ছেলের লেখাপাড়ার জন্য বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট থেকে মাসে এক হাজার টাকা দেওয়া হত। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সে টাকা বন্ধ হয়ে গেছে।”
তবে মাহবুবার মনেও প্রশান্তি বুধবার ওই মামলার রায় হচ্ছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের সর্বোচ্চ চান তিনিও।
“হামলাকারীদের প্রকৃত বিচার হবে এবং ফাঁসি হবে,” বলেন মাহবুবা।
গ্রেনেড হামলায় মারাত্মক আহত মহানগর আওয়ামী লীগের তৎকালীন তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আজিজুর রহমান বাচ্চুর শরীরে রয়ে গেছে ৩৭টি স্প্লিন্টার। স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারলেও বেশিরভাগ সময়েই পোহাতে হয় যন্ত্রণা।
বর্তমানে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বাচ্চু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শরীরের হাড়ে ও উরুতে এখনো ৩৭টি স্প্লিন্টার রয়ে গেছে। দিনে রাতে শান্তি নেই। প্রতিদিনই যন্ত্রণা দিয়ে যাচ্ছে স্প্লিন্টার।”
বুধবারের রায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, “দীর্ঘদিন পরে হলেও আমাদের কাছে স্বস্তি যে এই মামলার রায় হতে যাচ্ছে। এই ঘটনার সাথে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে। ”