নীতিশ বড়ুয়া, রামুঃ
কক্সবাজারের রামু উপজেলার জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের উত্তর মিঠাছড়ি সড়কের বেহালদশা। পিচ-খোয়া উঠে অসংখ্য গর্ত ডোবায় পরিণত হয়েছে। পর্যটক ও বৌদ্ধ পূণ্যার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি চলাচলের প্রায় অনুপযোগী। রামু চা বাগান ষ্টেশন থেকে উত্তর মিঠাছড়ি চৌধুরীপাড়া পর্যন্ত এ সড়কের পিচ উঠে ইট-খোয়া বেরিয়ে পড়েছে। সৃষ্টি হওয়া অসংখ্য গর্তে বৃষ্টি হলেই পানি জমে, আর শুকনা সময়ে ধুলা ওড়ে। এই সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচলে দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ফলে উত্তর মিঠাছড়ি প্রজ্ঞামিত্র বনবিহার এবং বিমুক্তি বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্র ও ভূবনশান্তি একশ ফুট সিংহশয্যা গৌতম বুদ্ধমূর্তি পরিদর্শনে আশা দেশী-বিদেশী পর্যটকসহ বৌদ্ধ পূণ্যার্থীদের পড়তে হয় ভোগান্তি আর বিড়ম্বনায়। চলাচলে চরম দূর্ভোগে পড়েছে শিক্ষার্থীসহ উত্তর মিঠাছড়ি এলাকার হাজারো মানুষ। রামু চাবাগান-উত্তর মিঠাছড়ি সড়কটি বর্তমানে পর্যটক ও বৌদ্ধপূণ্যার্থীদের কাছে একশফুট সিংহশয্যা বুদ্ধমূর্তি সড়ক নামে পরিচিতি পেয়েছে।
নোনাছড়ি এলাকার থেকে উত্তর মিঠাছড়ি চৌধুরী পাড়া হয়ে চা বাগান ষ্টেশন দিয়ে প্রতিদিন রামু সদরের স্কুলে আসে বাঁকখালী উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র তানভীর আহমেদ, খায়রুল ইসলাম, মোহাম্মদ ইমরান ও মোহাম্মদ শাহেদসহ অনেক শিক্ষার্থী। চলাচলে চরম দূর্ভোগের কথা জানাতে গিয়ে ওই শিক্ষার্থীরা বলে, এই সড়ক দিয়ে চলতে গিয়ে অনেক দুশ্চিন্তায় থাকি, কখন গর্তে পড়ে হাত-পা ভেঙে যায়। এই সড়ক দিয়ে অনেক ঝুঁকি নিয়ে স্কুল-কলেজে আসা-যাওয়া করতে হয় আমাদের।
বিমুক্তি বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক শিপন বড়ুয়া জানান, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চা বাগান ষ্টেশন হয়ে চৌধুরী পাড়া, নোনাছড়ি পর্যন্ত চলেগেছে উত্তর মিঠাছড়ি সড়কটি। ইট-খোয়া উঠে সড়কটির বেহালদশা বিরাজ করছে বর্তমানে। প্রতিদিন এ সড়কে চলাচল করে হাজারো স্থানীয় জনতা সহ স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। প্রতিদিন বিহারে আসেন শত শত বৌদ্ধ পূণ্যার্থী ও পর্যটক। সড়কটির অচলাবস্থার কারণে আগতদের পড়তে হয় চরম ভোগান্তি আর বিড়ম্বনায়।
তিনি জানান, এক সপ্তাহ আগে ঢাকার কিছু পর্যটক ভূবন শান্তি একশ ফুট সিংহ শয্যা গৌতম বুদ্ধ মূর্তি দেখতে আসেন। তাদের গাড়িটি সড়কের গর্তে পড়ে দূর্ঘটনায় পতিত হয়। স্থানীয়রা আহত পর্যটকদের উদ্ধার করে রামু স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।
সরেজমিন দেখা গেছে, চা বাগান-উত্তর মিঠাছড়ি সড়কটি পার্শবর্তী নোনাছড়ি পর্যন্ত সংযুক্ত হয়েছে। এ সড়কের চা বাগান ষ্টেশনে প্রায় ৩শ’ মিটার, ভাবনা কেন্দ্রের পূর্ব পাশে ও প্রজ্ঞামিত্র বনবিহারের পশ্চিম পাশে প্রায় দু’শ মিটার সড়কে সংস্কারের অভাবে অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এসব গর্তে বৃষ্টি হলেই পানি জমে থাকে। গর্তের পরিমাণ এত বেশি যে, যাত্রী সাধারণের এখন ওই সড়ক দিয়ে হেঁটে চলাচলও মুশকিল হয়ে পড়েছে। বৃষ্টি হলে জমে যাওয়া গর্তের পানিতে যানবাহন চলাচলের সময় সড়কের ময়লা পানি ছিটকে পথচারীদের জামা-কাপড় নষ্ট হয়ে যায়। প্রতিদিন এই সড়কে ঝুঁকি নিয়ে মোটরসাইকেল, অটোরিক্সা, মাহেন্দ্রা, রিকশা, ট্রাক, পর্যটকবাহী বাস ও কার সহ শত শত যানবাহন চলাচল করে। অনেক সময় গর্তে অটো, রিকশা ও মাহেন্দ্রা উল্টে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটছে এই সড়কে।
চা বাগান বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ডা. ছাবের আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম জানান, মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে এই সড়ক দিয়ে চলাচল করতে হয়। এই সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে অনেক গাড়ির যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে গেছে। সড়কটি দ্রæত মেরামত করার দাবি জানান তাঁরা।
স্থানীয় ইউপি সদস্য নুরুল ইসলাম জানান, সম্প্রতি জোয়ারিয়ানালা ইউপি চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে এলজিইডি’র উপ-সহকারি প্রকৌশলী আবুচউদ্দীন ক্ষতিগ্রস্ত সড়কটি জরিপ কাজ করে গেছেন। কখন সড়কটি সংস্কার করা হবে জানি না। সড়কটি দ্রুত সংস্কার হলে চলাচলে দূর্ভোগ কমবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।
এ সড়কের চা বাগান ষ্টেশনটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের লাগোয় চা বাগান ষ্টেশনটি। এ ষ্টেশন হয়ে ভূবনশান্তি একশ ফুট সিংহশয্যা গৌতম বুদ্ধমূর্তি দেখতে যেতে হয় বিমুক্তি বিদর্শ ভাবনা কেন্দ্রে। উত্তর মিঠাছড়ি প্রজ্ঞামিত্র বনবিহার, চৌধূরী পাড়া হয়ে নোনাছড়ি পর্যন্ত বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করে। সড়কে শত শত গর্তের কারণে প্রায়ই অনেক যানবাহন ঠিকমতো চলাচল করতে না পারে না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানবাহন আটকে থাকে। গর্তের কারণে সড়কের মাঝে বৃষ্টি হলেই কাদা পানি জমে থাকে। তখন পায় হেঁটে যাত্রীসহ যানবাহনের চলাচলও দায় হয়ে পড়ে বলে জানান, চা বাগান ষ্টেশনের ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন, টিটু বড়ুয়া ও জসিম উদ্দীন। এ সড়কে চলাচলকারী যাত্রী, ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীরা জানান, দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় সড়কটির এ বেহালদশা।
জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কামাল শামশুদ্দীন আহমেদ প্রিন্স জানান, উত্তর মিঠাছড়ি সড়কটির রক্ষণাবেক্ষণে ও সংস্কারের দায়িত্ব এলজিইডি’র। দীর্ঘদিন ধরে সড়কটিতে কোন সংস্কার কাজ না করায় এবং গাড়ি চলাচল বৃদ্ধি পাওয়ায় রাস্তাটি দ্রুত সময়ে নষ্ট হয়ে গেছে।
রামু উপজেলা এলজিইডি’র উপ-সহকারি প্রকৌশলী আবুচউদ্দীন জানান, উত্তর মিঠাছড়ি সড়কটি সংস্কারের টেন্ডার হয়েছে। ঠিকাদার নিয়োগ হলেই দু’সপ্তাহের মধ্যে ওয়ার্ক অর্ডার দেয়া হবে। আশা করছি সড়কটিতে অচিরেই সংস্কারের কাজ শুরু করা হবে। কাজ হয়ে গেলে জনদূর্ভোগ থাকবে না।