অনলাইন ডেস্কঃ
একাদশ সংসদ নির্বাচনের আঁচ লাগার মধ্যে এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী নেতৃত্বাধীন বিকল্প ধারায় যোগ দিয়েছেন বেশ কয়েকজন রাজনীতিক।
এদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী, এরশাদ আমলের দুই প্রতিমন্ত্রী গোলাম সারোয়ার মিলন ও নাজিম উদ্দিন আল আজাদ।
শুক্রবার বিকল্প যুবধারার বিশেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠানে বি চৌধুরীর হাতে ফুল দিয়ে তারা তার দলটিতে যোগদান করেন।
বিএনপি প্রতিষ্ঠাকালে বি চৌধুরী যেমন মহাসচিব ছিলেন, তেমনি ছাত্রদলের প্রথম নির্বাচিত সভাপতি ছিলেন গোলাম সারোয়ার মিলন। পরে জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়ে তিনি মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর থেকে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন, পেয়েছিলেন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব।
বিজিএমইএ’র সাবেক পরিচালক, এফবিসিসিআই’র সদস্য মিলন অনেক দিন নিষ্ক্রিয় থাকার পর জরুরি অবস্থার সময় ফেরদৌস আহমেদ কোরেশীর গড়া পিডিপিতে সক্রিয় হয়েছিলেন। পরে আবার রাজনীতির অঙ্গনে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন তিনি।
যশোরের নাজিম উদ্দিন আল আজাদ এরশাদ সরকারের ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। এরপর তিনি বিএনপি থেকে বেরিয়ে আসা নাজমুল হুদার সঙ্গে ছিলেন।
সাবেক সচিব শমসের মবিন চৌধুরী চাকরি থেকে অবসর নিয়ে বিএনপিতে সক্রিয় হলেও বেশ কয়েকটি মামলার আসামি হওয়ার পর কয়েক বছর আগে দল থেকে অব্যাহতি নেন। তখন রাজনীতিই ছাড়ার কথা জানিয়েছিলেন তিনি।
সিদ্ধান্ত বদলের বিষয়ে শমসের মবিন শুক্রবারা বিকল্প ধারার অনুষ্ঠানে বলেন, “তিন বছর আগে রাজনীতি থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আমি বলেছিলাম, আবার রাজনীতিতে ফিরব, যদি কেউ মুক্তিযুদ্ধের ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে এগিয়ে আসে, তবে আমি যোগ দেব।
“আমি বি চৌধুরীর সাহসী ও দেশপ্রেমিক নেতৃত্বে যোগ দিয়েছি সুখী, সমৃদ্ধ, শান্তিপূর্ণ ও স্বাভাবিক বাংলাদেশ গঠনে নিজেদের অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখার জন্য।”
অনুষ্ঠানে বিকল্প ধারার যুগ্ম মহাসচিব মাহি বি চৌধুরী বলেন, “দুঃশাসনের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য যে ঐক্য গঠিত হয়েছিল, তার বিরুদ্ধে স্বাধীনতাবিরোধীরা ষড়যন্ত্র করেছে। যারা জিয়াউর রহমানের জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন, তাদের আহ্বান জানাই বিকল্প ধারার পতাকাতলে।”
২০ দল ছেড়ে আসা ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি, এনডিপির চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মূর্তজা, ও লেবার পার্টির মহাসচিব হামদুল্লাহ আল মেহেদীও বিকল্প ধারার সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
এই নেতাদের দলগুলোও আগামীতে বিকল্প ধারার সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত হবে বলে আশা করেন বি চৌধুরী।
জিয়ার নাম না নেওয়ায় উষ্মা চৌধুরীর
সিলেটে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের জনসভায় বিএনপি নেতারা দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের নাম উচ্চারণ করেননি দাবি করে তা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন বি চৌধুরী।
যুবধারার কাউন্সিলে তিনি বলেন, “জাতির অন্যতম সেরা সন্তান জিয়াউর রহমানের নাম আজ তারা উচ্চারণ করে না। তাদের হৃদয় এত ক্ষুদ্র কেন? কেন তারা অসত্য বলে? পেছনে কেন পড়ে থাকে?”
কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপিকে নিয়ে সম্প্রতি গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে বিকল্প ধারারও যোগ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছিল। তবে বিএনপি তাদের আগের জোটে জামায়াতকে রাখায় তাদের সঙ্গে নতুন জোটে যায়নি দলটি।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন মহাসচিব বি চৌধুরী তার গড়া দল বিকল্প ধারাকে জিয়ার ‘রাজনীতির উত্তরাধিকার’ বলে দাবি করেন।
তিনি বলেন, “আমরা ভিন্ন ধরনের রাজনীতি করতে চাই। অত্যাচার, অবিচার, স্বেচ্ছাচাররা আর যেন ফিরে না আসে, তার জন্য আমরা বারবার বলছি, ভারসাম্যের রাজনীতির দরকার। গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে দেখি, বাংলাদেশ কোন অবস্থায় যায়।”
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে সংসদ ভেঙে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর এবং বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানান বি চৌধুরী।
সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে সংলাপ ডাকতেও প্রধানমন্ত্রীকে আহ্বান জানান তিনি।
“মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আপনি কিন্তু বঙ্গবন্ধুকন্যাও। সেটাই ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আপনি কথা বলুন, কথা বলুন প্রধানমন্ত্রী। আপনি কথা না বললে চলবে না। কথা বললেই সমস্যার সমাধান হবে।
“আপনি ’১৪ সালে একটা পচা নির্বাচন দিলেন। তখনও আপনি বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে কল করেছিলেন। দাবি শুনতে চেয়েছিলেন। এখন কেন কথা বলবেন না?”
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সমালোচনা করে রাবেক রাষ্ট্রপতি বি চৌধুরী বলেন, “আজকে গণতন্ত্রের সর্বাঙ্গে শেকল পরিয়ে দেওয়া হয়েছে। মুখ তালা মেরে বন্ধ করে দেওয়া হল। সংবাদপত্র, টেলিভিশনে স্বাধীনতা নেই। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, কোনো সভ্য ধারায় এই আইন নেই। আমরা এই প্রত্যাখ্যান করলাম।”
নির্বাচনের আগে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার বন্ধ করার আহ্বান জানান তিনি।
ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে সংসদে যে কোনো দলের একক আধিপত্যের অবসান চান বিকল্প ধারা সভাপতি।
আসন বণ্টন নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাদের মিত্র দলগুলোর আলোচনার খবর দিয়ে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ বলছে, মিত্রদের জন্য ১০০টি আসনের অফার করে ফেলেছে। ভারসাম্যের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা তাদের বলেছিলাম, আপনারা ১৭৫টি আসন নেন, ১২৫টি আসন ছেড়ে দেন সব মিত্র দলের মধ্যে। আমরা বিকল্প ধারা কখনও বলি নাই ,অর্ধেক আসন দেন।
“এই ভারসাম্য যারা অস্বীকার করেন, বুঝতে হবে তাদের মধ্যে অন্য প্ল্যান আছে। এই প্ল্যানটি ভালো নয়। গণতন্ত্রকে স্থায়ী করতে হলে ভারসাম্যের রাজনীতির ভেতরে আসতেই হবে।”
সূত্রঃ বিডিনিউজ