সুনীল বড়ুয়াঃ
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল বলেছেন,বঙ্গবন্ধু আমাদের নেতৃত্ব দিয়েছেন সেই মুক্তিযুদ্ধের,যে মুক্তিযুদ্ধ পৃথিবীর ইতিহাসে আজো একটি বিরল ঘটনা।
৭১ এর সেই সময়ে, সেই দেশটির কথা,সেই দেশটির চেতনা,সেই নেতার বাণী,বক্তব্য পৃথিবীর সমস্ত মানুষকে আলোড়িত করেছে। আমরা সেই মুক্তিযুদ্ধের উত্তরাধিকারী। সেই সম্পদের উত্তারাধিকারী।
তিনি শুক্রবার (৩০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে কক্সবাজার জেলা বৌদ্ধ সুরক্ষা পরিষদ প্রতিষ্ঠার প্রথম বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ সব কথা বলেন।
বিশিষ্ট মানবাধিকার নেত্রী সুলতানা কামাল আরো বলেন, আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের মানুষ বলে নিজেদের দাবি করি,যারা সত্যিকার অর্থে মানুষের মর্যাদায় বিশ্বাস করি,যেটা আমাদের সংবিধানে আছে, মানব সত্ত্বার মর্যাদার কথা, সে মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করাই ছিল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য।
কারণ আমরা সেই ৭১ এর উত্তরসুরী,কেউ মুক্তিযোদ্ধা,কেউ মুক্তিযোদ্ধার উত্তরসূরী,মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আমরা আসক্ত,নিসিক্ত। তাই আমরা প্রত্যেকে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারি। কিন্তু আজকে আমরা নিজেরাই নিজেদের দৃষ্টি সীমাবদ্ধ করে ফেলেছি। নিজেরাই মনকে সীমাবদ্ধ করে ফেলেছি। আজকে সাম্প্রদায়িকতাকে সমস্ত রাজনৈতিক দল প্রধান হাতিয়ার বানিয়েছে ক্ষমতার লড়াইয়ে জেতার জন্য। যা খুবই দুঃখজনক। সাম্প্রদায়িকতাকে রুখঁতে ঐক্যবদ্ধ হওয়া আবশ্যক। তবে ঐক্যের ডাক দিলে স্রোতের বিপরীতে হাঁটার দায় বহন করার সাহস রাখতে হয়। আমরা আপনাদের সাথে আছি।
‘আমাদের লক্ষ্য সামাজিক ঐক্য’ এই শ্লোগানে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক ছিলেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক,কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বাংলাদেশ বুদ্ধিষ্ট ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ভদন্ত সুনন্দপ্রিয় মহাথের, ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি, ইউরোপিয়ান কলেজ অব ল’ ইউ কে-এর ডীন প্রশান্তভূষণ বড়ুয়া, ডাঃ নোবেল বড়ুয়া, বৌদ্ধ সুরক্ষা পরিষদের সভাপতি প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু,সিনিয়র সহ-সভাপতি শুভংকর বড়ুয়া, সহ-সভাপতি ডাঃ মায়েঁনু রাখাইন,সাধারণ সম্পাদক অমরবিন্দু বড়ুয়া (অমল),সঞ্জয় বড়ুয়া, প্রবীর বড়ুয়া, রবীন্দ্রনাথ বড়ুয়া, অনুষ্টান উদযাপন পরিষদের সভাপতি বিপক বড়ুয়া বিটু,সাধারণ সম্পাদক রাজু বড়ুয়া, সমন্বয়কারী এডভোকেট আশীষ বড়ুয়া প্রমুখ বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে কথা সাহিত্যিক আনিসুল হক বলেছেন,ভালোবাসা দিয়েই পৃথিবীটাকে জয় করতে হবে। হিংসা- প্রতিহিংসা ডেকে আনে আঘাত- প্রতিঘাত কিন্তু ভালোবাসা ডেকে আনে শুধুই ভালোবাসা। সবাই যদি সবাইকে ভালোবাসতে পারি,তাহলে পৃথিবীটা অনেক সুন্দর হতো।
তিনি বলেন,আমাদের এই বাংলাদেশটা যে গড়ে ওঠেছে এখানে মুসলমানের রক্ত আছে,হিন্দুর রক্ত আছে,বৌদ্ধদের রক্ত আছে,বাঙ্গালী জাতীসত্ত্ার রক্ত আছে সুতরাং এই দেশ সবার। সবার এখানে সম্মানের সাথে মর্যাদার সাথে বাঁচার অধিকার রয়েছে আমরা সেই বাংলাদেশই চাই।
অনুষ্ঠানে প্রশান্তভূষণ বড়ুয়া বলেন, সুরক্ষা বলতে আমাদেরকে নিজের প্রতিহিংসা, বিদ্বেষ থেকে নিজেকে সুরক্ষিত করতে হবে। সুরক্ষা বলতে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করতে হবে। সবাইকে নিয়ে একসাথে পথ চলতে হবে। বুদ্ধও সংঘবদ্ধ হয়ে বসবাস করার শিক্ষা জগৎবাসীকে দিয়েছেন।
এর আগে পায়রা উড়িয়ে এবং কেক কেটে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন অতিথিবৃন্দ। এ সময় উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশন করেন স্থানীয় শিল্পীরা। অনুষ্ঠানে পরিষদের মুখপত্র ‘ঐক্য’-এর মোড়ক উন্মোচন করেন অতিথিবৃন্দ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পরিষদের উপদেষ্ঠা এডভোকেট সুনীল কুমার বড়ুয়া।