লাইফস্টাইল ডেস্কঃ
এসময়ে লক্ষণীয় স্বাস্থ্য সমস্যাগুলোর মধ্যে শ্বাসতন্ত্রের সমস্যাগুলোই মুখ্য।
এ বিষয়ে জানালেন ফাস্ট কেয়ার হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের কন্সালটেন্ট ডা. মোহাম্মদ কামরুল হাসান।
তিনি বলেন, “শীতের সময় তাপমাত্রা কমার সঙ্গে কমতে থাকে বাতাসের আর্দ্রতা। এই শুষ্ক আবহাওয়া বাতাসে ভাইরাস ছড়াতে সাহায্য করে। এছাড়া শুষ্ক আবহাওয়া আমাদের শ্বাসনালির স্বাভাবিক কাজকে বাধাগ্রস্ত করে। ফলে ভাইরাসের আক্রমণ হয় আরও সহজ। শুধু তাই নয়, তাপমাত্রার তারতম্যের সঙ্গে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার তারতম্যেরও সম্পর্ক আছে।”
“স্বাভাবিকের চেয়ে কম তাপমাত্রায় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এনজাইমগুলো কাজ করে কম। ফলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায়। এছাড়া পুষ্টিকর, সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা, নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাত্রা, শরীরচর্চা, সর্বোপরি সচেতনতা ও সতর্কতার অভাবও রোগবালাই বেড়ে যাওয়ার কারণ।” বলেন ডা. কামরুল।
রোগের লক্ষণ ও করণীয়: ইনফ্লুয়েঞ্জার ক্ষেত্রে যে লক্ষণগুলো দেখা দেয় সেগুলো হল— জ্বর, কাশি, নাক দিয়ে পানি পড়া, গলা খুশখুশ করা, হাতে-পায়ে ব্যথা বা শরীর ম্যাজম্যাজ করা ইত্যাদি।
ইনফ্লুয়েঞ্জা হলে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। বিশ্রাম, পুষ্টিকর খাদ্য, প্রচুর পরিমাণে পানি পান ও ভিটামিন সি-যুক্ত খাবার গ্রহণের মাধ্যমে রোগমুক্তি হয় অনেকটাই। গলাব্যথা বা গলা খুশখুশ করলে গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে গড়গড়া করলে আরাম পাওয়া যায়। লবণ-গরম পানির মিশ্রণের প্রদাহের বিপরীতে কাজ করার ক্ষমতা থাকায় টনসিলের প্রদাহ বা এ ধরনের সমস্যায় এই মিশ্রণ ব্যবহারে উপকার পাওয়া যায়।
কুসুম গরম পানিতে লেবু ও মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। তুলসী পাতার রস, আদার রস, বাসক পাতার রস, কালিজিরা প্রভৃতি ঔষধি দ্রব্যের ব্যবহারও উপসর্গ কমাতে পারে। যদি রোগের তীব্রতা বেড়ে যায়, সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া আবশ্যক। মনে রাখতে হবে, ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ঠাণ্ডাজনিত সর্দি-কাশি সম্পূর্ণভাবে ভাইরাসঘটিত, তাই এসব রোগে অ্যান্টিবায়োটিক কোনো ভূমিকা রাখে না।
তবে এই ধরনের রোগে আক্রান্ত থাকার সময় অন্য কোনো ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটতে পারে, সেক্ষেত্রে রোগের জটিলতা বাড়তে পারে। এ অবস্থায় অবশ্যই প্রয়োজনীয় ওষুধ গ্রহণ করতে হবে। সেজন্য যথাযথভাবে চিকিত্সকের পরামর্শ মেনে চলা উচিত।
নিউমোনিয়া মূলত দেখা যায় শিশুদের। তবে একটু সচেতন হলে আপনি নিজেই আপনার শিশুর কাছ থেকে নিউমোনিয়াকে সরিয়ে দিতে পারেন দূরে।
শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো, শিশুর পুষ্টি নিশ্চিতকরণ, যথাসময়ে টিকাদান, শিশুর সামনে ধূমপান পরিহার এবং একটি স্বাস্থ্যকর বসবাসের পরিবেশ আপনার শিশুকে নিউমোনিয়া থেকে সুরক্ষা দিতে পারে।
অনেকেই মনে করেন জ্বর, সর্দি-কাশি, নিঃশ্বাসের সঙ্গে শব্দ হলেই সেটি নিউমোনিয়া; কিন্তু মনে রাখতে হবে, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুর ক্ষেত্রে নিঃশ্বাসের সঙ্গে শিশুর বুকের পাঁজরের নিম্নাংশ ভেতরের দিকে ঢুকে যায় বা শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি বেড়ে যায়। তাই এ লক্ষণগুলো দেখা দিলে অবশ্যই দ্রুত চিকিত্সকের শরণাপন্ন হতে হবে। গ্রহণ করতে হবে যথাযথ ব্যবস্থা চিকিত্সকের পরামর্শ অনুযায়ী।
যাদের আগে থেকেই অ্যাজমা বা হাঁপানি অথবা কাশির সমস্যা আছে, শীত এলে তাদের এ কষ্টগুলো বেড়ে যায় অনেকখানি। এ ধরনের সমস্যা থাকলে কিছু সতর্কতা মেনে চলতে হবে।
ঠাণ্ডা পানি, ঠাণ্ডা খাবার পরিহার করা, বাইরে বের হওয়ার সময় স্কার্ফ বা মাফলার দিয়ে মাথা, কান ও নাক ঢেকে রাখা, হাতে ও পায়ে মোজা ব্যবহার করা প্রয়োজন। কোনো খাবারে যদি অ্যালার্জি থাকে, তবে সেটি এড়িয়ে চলতে হবে। বাড়িতে বা কর্মক্ষেত্রে আপনার ঘরটিকে যতটা সম্ভব উষ্ণ রাখতে চেষ্টা করুন।
এছাড়া যদি ইনহেলারে অভ্যস্ত হয়ে থাকেন, তবে সেটি সঙ্গে রাখতে ভুলবেন না।
আরও কিছু সতর্কতা: শীতের সময়টায় আরও কিছু রোগের প্রকোপ বাড়তে দেখা যায়, যেমন আর্থ্রাইটিস বা জয়েন্ট পেইন, শুষ্ক ত্বকের সমস্যা, ডায়রিয়া, হাত-পায়ের আঙুল নীলচে হয়ে যাওয়া, যাকে চিকিত্সার ভাষায় বলা হয় রেনাউড’স ফেনোমেনা প্রভৃতি। শীতে ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় আমাদের হূদযন্ত্রকে কিছুটা বেশি কাজ করতে হয় দেহতাপ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য, সে কারণে রক্তচাপ বাড়তে পারে। এছাড়া তীব্র শীতে রক্তনালি সংকুচিত হয়ে হার্ট অ্যাটাকও হতে পারে।
শীতের সময়টায় সুস্থতা নিশ্চিত করতে গ্রহণ করতে পারেন কিছু পদক্ষেপ। এগুলো হলো:
– ঠাণ্ডা খাবার ও পানীয় পরিহার করা।
– পুষ্টিকর ও সুষম খাদ্য গ্রহণ, কাঁচাসবজির সালাদ, ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’যুক্ত ফলমূল গ্রহণ এবং পর্যাপ্ত পানি পান করা, যা রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে দেহকে রাখবে সুস্থ।
– নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন করা।
– নিয়মিত ও পরিমিত কায়িক পরিশ্রম।
– আপনার ঘরবাড়ি তথা ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা।
– হাত ধোয়ার অভ্যাস করা, বিশেষ করে নাক মোছার পর পর; বাইরে থেকে আসার পর এবং খাদ্যবস্তুর সংস্পর্শে আসার আগে হাত ধোয়া।
– ধূমপান পরিহার করা।
– ঘরের দরজা-জানালা খুলে পর্যাপ্ত পরিমাণে আলো-বাতাস প্রবেশের সুযোগ করে দিয়ে একটি নির্মল বসবাসের পরিবেশ নিশ্চিত করা।
– প্রয়োজনে ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকা নেওয়া।
– শীতের সময়টায় সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে আজই সচেতন হোন। শীতের রূপ, রস, গন্ধ পরখ করুন সুস্থভাবে। সুস্থ ও প্রাণচাঞ্চল্যে শীতকাল হয়ে উঠুক আপনার জন্য পরিপূর্ণভাবে উপভোগ্য।