হাফিজুল ইসলাম চৌধুরী, কক্সবাজার থেকে :
শিরোনামটি কিছুটা হতবাক ও আশ্চর্য হওয়ার মতো! কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইমরুল হাসান রাশেদ নির্বাচনের আগেই কিভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেন? মনে প্রশ্ন জাগলেও বাস্তবে এটাই ঘটতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। তবে এর সত্যতার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আগামী ৪জুন ভোটের ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত।
জেনে রাখা ভালো, বর্তমানে দেশব্যাপী চলছে তারুণ্যের জয়গান। বিশেষ করে আওয়ামীলীগকে নেতৃত্ব দিতে তরুণদের প্রাধান্য দিচ্ছেন দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কারণ উদীয়মানদের মাঝে যে স্পৃহা ও উদ্যমতা রয়েছে তা তুলনামূলকভাবে বয়স্কদের ক্ষেত্রে কম। মুক্ত চিন্তা আর সৃজনশীলতায় অনেক এগিয়ে আছেন বর্তমান তরুণ সমাজ।
তরুণরা জনসেবায় এগিয়ে আসছেন ব্যাপকভাবে। তারুণ্যের এই পথে এবার শামিল হয়েছেন কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও তরুণ ছাত্রনেতা ইমরুল হাসান রাশেদ। কক্সবাজারের মতো একটি শক্তিশালী সাংগঠনিক জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি দলীয় প্রতীক ‘নৌকা’ নিয়ে নিজের জন্মস্থান জালালাবাদ ইউনিয়ন (ইউপি) পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন ইমরুল হাসান রাশেদ।
এ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন ঈদগাঁও সাংগঠনিক উপজেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলমগীর তাজ জনি (ধানের শীষ)। এছাড়ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে চেয়ারম্যান পদে ভোটযুদ্ধে মাঠে আছেন জামায়াত নেতা সেলিম উল্লাহ জিহাদি (মোটর সাইকেল) ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন মিয়াজি (আনারস)।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তরুণ প্রতিশ্রুতিশীল ছাত্রনেতা ইমরুল হাসান রাশেদ ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন। এসময় ভোটারদের মাঝে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হচ্ছে। সামনে পিছনে তাঁকে নিয়ে ঘুরে বেড়ান এলাকার উৎসুক জনতা। এদিকে এ নির্বাচনকে অনেকটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইশতিয়াক আহমদ জয় ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের আজাদ। তাইতো নিজেদের সহকর্মীকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করতে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে বুধবার দুপুর থেকে জালালাবাদ ইউনিয়নের অলিগলি ও মেঠোপথে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে মি.রাশেদের জন্য ভোট প্রার্থনা করছেন। এদের সাথেই প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ছাত্রলীগের সভাপতি মঈন উদ্দিন। তিনি বলেন, জালালাবাদে প্রচারণা চালাতে গিয়ে ইমরুল ভাইয়ের গণজোয়ার দেখেছি। এ জোয়ার ভোটের দিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকলে অবশ্যই তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন।
কক্সবাজার পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র ও জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবর রহমান চৌধুরী এবং সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবু তালেবেরও তেমনই ধারণা। তারা বলছিলেন, ইমরুল সাধারণ মানুষকে খুব সহজেই আপন করে নিতে পারেন। দলীয় প্রতীক ‘নৌকা’ পাওয়ায় তাঁর মন আরও চাঁঙ্গা হয়েছে। এলাকার লোকজনও এখন তারুণ্যকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। তাই ইমরুল রাশদ চেয়ারম্যান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এলাকার সচেতন মহলের মতে, তারুণ্যের প্রতীক ইমরুল হাসান রাশেদকে এখন সকলেই আপন করে নিয়েছেন। কেননা, ইমরুলের রয়েছে বড় স্বপ্ন। দেশ এবং দেশের মানুষের জন্য অনেকদূর এগিয়ে যাবার চিন্তা। এলাকার সার্বিক উন্নয়নের জন্য নিবেদিত প্রাণ হয়ে তিনিই কাজ করবেন। তাই অন্য চেয়ারম্যান প্রার্থীদের চেয়ে ইমরুল সার্বিকভাবে এগিয়ে আছেন মনে করছেন স্থানীয়রাও।
এ বিষয়ে জালালাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ইমরুল হাসান রাশেদ আমাদের রামু ডটকমকে বলেন, আমি সামান্য একজন স্কুল শিক্ষকের ছেলে। অসহায় দরিদ্র পরিবারকে খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে আমার, আমি যত বড় নেতা হই না কেন, সাধারণ মানুষের সামনে নেতার পরিচয় দিতে আমার ভয় হয়! ভোটারদের উদ্দেশ্যে কি বলবেন জানতে চাইলে মি.রাশেদ বলেন, সম্মানিত ভোটারদের প্রতি আমার আকুল আবেদন, আমি কোন প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছি সেটি আসল বিষয় নয়, আসল বিষয় হচ্ছে আগে যেভাবে ভালোবাসা দিয়ে আমাকে বড় করেছেন, ঠিক সেইভাবে ভোট দিয়ে আমাকে জয়যুক্ত করুন।
কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁও’র জালালাবাদ ইউনিয়নের দক্ষিণ লরাবাক গ্রামে রাশেদের জন্ম। সবুজ এই গ্রামের নদী-খাল-বিলে দূরন্তপনায় কেটেছে তাঁর শৈশব। বাবা-মায়ের অত্যন্ত আদরের এই সন্তানের লেখাপড়ার শুরু ঈদগাঁওতেই। ঈদগাঁও আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২০০৩ সালে এসএসসি এবং ২০০৫ সালে কক্সবাজার সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করার পর একই কলেজে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে হিসাববিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি হন। স্নাতক শেষে চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজ থেকে একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি কক্সবাজার আইন কলেজে অধ্যয়নরত।
বাংলাদেশের প্রাচীন ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন ২০০৩ সালে এসএসসি পরীক্ষার পরপরই। ঐ বছরই জালালাবাদ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব লাভ করেন এবং তা ২০০৭ সাল পর্যন্ত পালন করেন। ২০০৯ সালে একই ইউনিয়নের আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। একই সময়ে কক্সবাজার সরকারি কলেজ কমিটির যুগ্ন সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। পরবর্তীতে কলেজ আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হলে সেই কমিটির সদস্য হিসেবেও ২০১৩ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। এরই মধ্যেই তৎকালিন জেলা ছাত্রলীগের কমিটি পূর্ণাঙ্গ হলে তরুণ এই ছাত্রনেতাকে সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হয়, যেখানে সর্বশেষ জেলা সম্মেলন পর্যন্ত বহাল ছিলেন। অনেক বিচার-বিশ্লেষণের পর ২০১৫ সালের ১০ জানুয়ারি পরীক্ষিত, ত্যাগী এই ছাত্রলীগ কর্মীর হাতে অর্পণ করা হয় দেশের পর্যটন রাজধানীর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের গুরুভার। গুরুত্বপূর্ণ এই দায়িত্ব নিয়ে ছাত্রলীগকে পুনর্গঠন করতে কাজ করে চলেছেন রাশেদ।
জীবনের এই পর্যায়ে আসতে তাঁকে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে। চলতে পথে অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছেন। কিন্তু দমে যাননি কখনো। পরিচ্ছন্ন চিন্তা এবং ইতিবাচক রাজনীতির মাধ্যমে মন জয় করে নিয়েছেন সংগঠনের প্রতিটি নেতাকর্মীর। সুঠামদেহী এই ছাত্রনেতার চিন্তাচেতনা উদার। আদর্শ মানেন বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। নিজের আদর্শ তো আছেই ভিন্ন মতের প্রতিও রয়েছে তাঁর অগাধ শ্রদ্ধা। জীবন চলার পথে অনেক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন। কিন্তু সবকিছু ভেবে বুঝতে পেরেছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগই তার জীবনচলার সঙ্গী, প্রেম-ভালোবাসা। প্রিয় সংগঠনকে জেলার প্রতিটি শিক্ষার্থীর প্রাণের সংগঠনে পরিণত করার পাশাপাশি জালালাবাদকে মডেল ইউনিয়নে রূপান্তর করাই মি. রাশেদের লক্ষ্য।