আমাদের রামু রিপোর্ট:
দেশ প্রেম ঈমানের অংঙ্গ। দেশ প্রেমের টানে কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী জীবনের মায়া ছেড়ে স্কুল থেকে পালিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। স্বাধীন হয় প্রিয় মাতৃভূমি, পাক বাহিনীর অমানবিক হত্যা-নির্যাতন থেকে মুক্তি পায় দেশবাসী।
কিন্তু এখনো পর্যন্ত পরিবার পরিজন নিয়ে অভাব অনটন থেকে মুক্তি পায়নি মুক্তিযোদ্ধা আব্দু ছত্তার গাজী। তাই অনেকটা সহায় সম্বলহীন বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী জীবন সন্ধিক্ষনে আজ বড় অসহায়।
জানা যায়, মুক্তিযোদ্ধের সর্বাধিনায়ক আতাউল গনি উসমানির হাত থেকে (১৯৭৮২০) নং মুক্তিযোদ্ধা সনদ গ্রহন করেন। মুক্তিযুদ্ধ কালীন সময়ে ভারতে প্রশিক্ষন নিয়ে ১১২ নং প্লাটুনের যোদ্ধাদের সাথে তিনি যোদ্ধ করেন। কিন্তু প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হয়েও তিনি বাদ পড়েছেন। অদ্যাবদি দেশের মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় সংশোধনী আসলেও কোথাও নাম না থাকার বুক ফাটা কষ্ট ধামাচাপা দিচ্ছেন দীর্ঘকাল থেকে।
“একজন মুক্তিযোদ্ধার মানবতার জীবন” এমন সংবাদ পেয়ে এ প্রতিবেদক দেখা করেন কালারমারছড়ার নোনাছড়ি গ্রামের মৃত আব্দুল হকের পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আব্দু ছত্তার প্রকাশ গাজী ছত্তার এর সাথে।
মুক্তিযোদ্ধের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, যুদ্ধ থেকে ফিরে আসায় এলাকাবাসী তাকে গাজী নামে ডাকেন। এলাকার সবাই গাজী নামেই চেনে। কিন্তু একজন বঞ্চিত প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাকে চিনতে পারলেন না কর্তৃপক্ষ।
তিনি বলেন- ‘স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছি কোন কিছু লাভের আশায় নয়। প্রাণের মায়া ছেড়ে যুদ্ধ করে পশ্চিমা হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে স্বাধীন বাংলাদেশ পেলাম এর চেয়ে সূখ আর কি হতে পারে?’
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৭১ সালে ১ নং সেক্টর কমান্ডার মেজর রফিকুল ইসলামের অধিনে সাতকানিয়ার কিয়াংজু পাড়ায় কমান্ডার পুলিন বিহারী শর্মার নেতৃত্বে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। তাঁর সাথে ছিলেন মহেশখালীর বর্তমান মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ছালেহ আহমদ ও মুক্তিযোদ্ধা ছৈয়দ আহমদ উল্লাহ। দেশ স্বাধীন করে সনদ গ্রহনের পর বাড়ী ফিরে সেই-যে আসা আর কোন দিনই খোঁজ নিলনা কেউ। সহকর্মী, কিংবা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কেউ তার খোঁজ নেননি। এমনকি জীবনের শেষ সময়ে এসে অনেক সহযোদ্ধার দ্বারে দ্বারে ধর্না দিলেও বাড়ায়নি কেউ সহযোগিতার হাত। বরং প্রতি পদে পদেই হয়রানির শিকার হয়েছেন সহযোদ্ধা ও কর্তৃপক্ষের কাছে।
সর্বশেষ গত ২৭ জুন/১৪ ইং তারিখে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল বরাবর আবেদন করলেও এখনো সাড়া মিলেনি আবেদনের। স্কুল পালিয়ে যুদ্ধে গিয়ে পড়া লেখাও আর করা হয়নি।
এতেও দুঃখ নেই,দেশ স্বাধীন করেই তার সন্তুষ্টি। এর-ই মাঝে কষ্ট শুধু একটাই.. স্বাধীনতার স্বপক্ষের মূল শক্তি আওয়ামীলীগ বেশ কয়েকবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসার পরও মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম এখনো অন্তরভূক্ত হয়নি তার নাম। তাই অনেকটা হতাশ তিনি। তবে দেশে অনেক ভূঁয়া মুক্তিযোদ্ধা যখন মুক্তিযোদ্ধা (সম্মানি) সনদ নিয়ে ভাতা পায় তখন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হয়ে যখন বঞ্চিত এটাই বড় যন্ত্রনার বিষয়। যে যন্ত্রনা একজন বঞ্চিত মুক্তিযোদ্ধা ছাড়া কেউ বুঝবেনা। অনেকটা আক্ষেপ ও হতাশায় কথাগুলো বলেন ভাতা বঞ্চিত বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দু ছত্তার গাজী।
তিনি আরো বলেন গত ৪৫ বছরে কেউ তার খোঁজ খবর নেয়নি। এমনকি মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় তার নাম ও রাখেনি। অনেকটা সহায় সম্বলহীন মুক্তিযোদ্ধা গাজী আব্দু ছত্তার লোক লজ্জায় ভিক্ষার ঝুলি না নিলেও আর্থিক অভাবে মানবেতর জীবন যাপন করে আসছেন।
শেষ জীবনে এসে তার প্রশ্ন প্রাণের মায়া ছেড়ে যুদ্ধ করেও কেন তিনি মুক্তিযোদ্ধা তালিকার বাইরে। কে দেবে এই প্রশ্নের উত্তর? এ নিয়ে মহেশখালী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ছালে আহমদের দৃষ্টি আর্কষন করলে তিনি আমাদের রামু ডটকমকে জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আব্দু ছত্তার গাজীর বিষয়ে তিনিও যোগাযোগ করেছেন। তবে সংশোধিত তালিকার সুযোগ না আসা পর্যন্ত আইনি জটিলতা থাকায় বাদ পড়া মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা যাচ্ছেনা।