শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারে দীর্ঘদিন ধরে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা আবুল মাল আবদুল মুহিত অবসরে যেতে পারেন বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। নির্বাচনে আর অংশ না নেওয়ার ঘোষণার পর তার পরিবারের সদস্যরাও চাইছেন তিনি যেন কাজের চাপ থেকে নিজেকে অব্যাহতি দিয়ে অবসরে যান। তার বয়সের কারণে প্রশ্নটি জোরেশোরেই সামনে এসেছে।
মুহিতের বয়স এখন ৮৩। চলতি মাসের ৫ তারিখ সচিবালয়ে সিলেট বিভাগের উন্নয়ন বিষয়ক এক সভায় তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, আগামীতে আর কোনও সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবেন না। তবে মুহিত নির্বাচনে অংশ না নিলেও বর্তমান সরকারের মেয়াদ রয়েছে আরও প্রায় আড়াই বছর। সে সময় পর্যন্ত তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকবেন কি না, তা এখনও পরিষ্কার নয়।
নবম সংসদে আওয়ামী লীগের অর্থমন্ত্রী থাকার সময় আবদুল মুহিত বলেছিলেন, তিনি জাতীয় সংসদের নির্বাচন করলেও মন্ত্রী হবেন না। কিন্তু ১০ম সংসদের সিলেট-১ আসন থেকে বিজয়ী হলে শেখ হাসিনা তাকে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর মন্ত্রী না হওয়ার প্রতিশ্রুতি মনে করিয়ে দিলে মুহিত বলেন, ‘তিনি (শেখ হাসিনা) চাইলে কি না বলা যায়?’ কিন্তু এবারের বিষয়টি একেবারেই ভিন্ন।
অর্থমন্ত্রী হিসেবে আওয়ামী লীগ সরকারের টানা ৮টি বাজেট উপস্থাপন করেছেন মুহিত। বাংলাদেশের ইতিহাসে এ রেকর্ড শুধুই তার।
অর্থমন্ত্রী সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়ে দেশে বিদেশে গবেষণা, সামাজিক সংগঠন ও পরে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। ৮৩ বছরের বর্ণাঢ্য জীবনে বিশ্রাম পেয়েছেন খুব সামান্যই। স্ত্রী ছেলে মেয়েসহ পরিবারের সবাই এবার তাকে বিশ্রাম দিতে চান। চিকিৎসকরাও বলেছেন, এই বয়সে এতো ঝক্কি ঝামেলা শরীর পারমিট করে না। এসব তথ্য জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রীর বড় ছেলে সাহেদ মুহিত।
সাহেদ বলেন, ‘এই লোকটি জীবনে বিশ্রাম নেননি। সারাজীবন কাজ করেছেন। এই বয়সেও রাতে না ঘুমিয়ে সরকারি ফাইল ওয়ার্ক করেন, এটা আমরা আর সইতে পারছি না। আমরা রাতে ঘুমাই, আর তিনি রাত জেগে কাজ করেন। যে বয়সে তার বিশ্রামে থাকার কথা, সে বয়সে তিনি কাজ করছেন। আমরা পরিষ্কার বুঝতে পারছি, যে তার শরীর আর চলে না। কিন্তু তিনি সেটা মুখে প্রকাশ করেন না। কাজের প্রতি দয়িত্বশীল বলেই তিনি দিনরাত কাজ করেন। প্রধানমন্ত্রী নিজেও তাকে কাজ কমিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা? অর্থমন্ত্রী হিসেবে এর চেয়ে নাকি আর কম কাজ করা যায় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘এবার যে আসলেই বিশ্রাম প্রয়োজন তা তিনি নিজেও উপলব্ধি করেছেন। আর নির্বাচন করবেন না, মন্ত্রীগিরি তো নয়ই।’
তাহলে কবে থেকে বিশ্রামে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী মুহিত? এই প্রশ্নের উত্তর জানতে সরকারের একাধিক মন্ত্রী এবং দলীয় একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিপরিষদের সবার কাছে গ্রহণযোগ্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। দেশে বিদেশে সমান গ্রহণযোগ্য অর্থমন্ত্রীকে প্রধানমন্ত্রী নিজেও খুব পছন্দ করেন। তার রাজনৈতিক দূরদর্শিতারও প্রশংসা করেন।
জানা গেছে, দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক যখন বাংলাদেশের পদ্মাসেতু প্রকল্প থেকে তাদের সহায়তা প্রত্যাহার করে নেয়, তখন অর্থমন্ত্রী মুহিতই নিজেদের অর্থে পদ্মাসেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীকে সাহস যুগিয়েছিলেন। সরকারের মর্যাদা ও ইমেজ প্রতিষ্ঠায় এটি ছিল কঠিন সিদ্ধান্ত। আর তা ফলপ্রসূও হয়। প্রধানমন্ত্রী তার অগ্রসর কর্মকাণ্ডের কথা মনে রেখেই তাকে অর্থমন্ত্রীর পদ থেকে সরাতে চান না। তবে অর্থমন্ত্রী নিজের শারীরিক সীমাবদ্ধতার কারণে অবসরে যেতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘মুহিত ভাই একজন যোগ্য অর্থমন্ত্রী। তিনি সবার সিনিয়র। অভিভাবকের মতো। তিনি এ পদে আছেন, থাকবেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তার পরিচিতি ব্যাপক। এ পদে যদি তিনি না থাকতে চান সে বিষয়টি দেখবেন প্রধানমন্ত্রী।’
[বাংলা ট্রিবিউন]