আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
শ্রীলঙ্কায় ২১ এপ্রিল সিরিজ বোমা হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়েছিল বাট্টিকালোয়ার জিওন চার্চও। সেদিন সেখানে প্রাণ হারাতে হয় ২৮ জনকে। তবে হামলাকারীর ব্যাপারে আগেই টের পেয়ে তাকে গির্জার ভেতরে প্রবেশ করতে দেননি রমেশ রাজু নামের এক শ্রীলঙ্কান নাগরিক। আর তা করতে গিয়ে নিজের জীবন হারালেও বাঁচিয়ে দিয়ে গেছেন বহু মানুষের প্রাণ। উল্লেখ্য, হামলার সময় ওই গির্জার ভেতরে সাড়ে চারশো মানুষ অবস্থান করছিলো।
ঘটনার দিন বাট্টিকালোয়া শহরের জিওন চার্চের প্রবেশপথের কাছে পরিবারের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছিলেন রমেশ রাজু। ইস্টার সানডে’র প্রার্থনা শুরুর অপেক্ষায় ছিলেন তিনি। হঠাৎই দেখতে পান, এক সন্দেহজনক ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত হয়েছে। তার গায়ে সাধারণ পোশাক ছিল। একটি বড় ব্যাকপ্যাক নিয়ে একা একা ঘুরে বেড়াচ্ছিলো সে।
রমেশের স্ত্রী ক্রিশানথিনি বিবিসির কাছে বর্ণনা করেছেন, কিভাবে তার স্বামী ওই আত্মঘাতী হামলাকারীকে গির্জায় প্রবেশ করা থেকে প্রতিহত করেছিলেন। নিজের জীবন বাজি রেখে অনেকের জীবন বাঁচিয়েছেন।
ক্রিশানথিনি বলেন, ‘আমার স্বামী বুঝতে পেরেছিল কিছু একটা গোলমাল হতে যাচ্ছে।’ তিনি জানান, তার স্বামী ওই ব্যক্তির কাছে জানতে চাচ্ছিলো কেন সে গির্জায় এসেছে। ওই ব্যক্তি তখন দাবি করে, তার ব্যাকপ্যাকের ভেতরে একটি ভিডিও ক্যামেরা আছে এবং সেটি দিয়ে সে প্রার্থনারতদের ছবি ধারণ করবে। এ ব্যাখ্যা শুনে সন্তুষ্ট হতে পারেননি রমেশ। শুরুতে তিনি ওই ব্যক্তিকে বলেন, এ কাজ করতে গেলে তাকে অনুমতি নিতে হবে। এরপর ওই লোককে বের হয়ে যেতে বলেন রমেশ।
ক্রিশানথিনি জানান, রমেশ ও ওই ব্যক্তির মধ্যে যখন তর্ক চলছিলো, তখন তিনি তার দুই সন্তান রুশিকা (১৪ বছর) ও নিরুবানকে (১২ বছর) নিয়ে গির্জার ভেতরে প্রার্থনায় যোগ দেন। ভাবছিলেন, তার স্বামী কিছুক্ষণ পরই সেখানে আসবে। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রচণ্ড বিস্ফোরণে পুরো ভবন কেঁপে ওঠে। গির্জায় প্রবেশ করতে না পেরে আত্মঘাতী হামলাকারী বাইরেই বোমা বিস্ফোরণ করেছে। সেখানে অল্প কয়েকজন মানুষ ছিল। গির্জার ভেতরে বিস্ফোরণ হলে অনেক বেশি মানুষের মৃত্যু হতো। সেদিন অন্য মানুষদের জীবন বাঁচাতে গিয়ে নিজের জীবন উৎসর্গ করেন রমেশ। বাট্টিকালোয়ার বিস্ফোরণে সেদিন রমেশসহ নিহত ২৮ জনের মধ্যে ১২ জনই শিশু।
যে জায়গায় স্বামীকে জীবিত অবস্থায় শেষ দেখা দেখেছিলেন, সেখানেই তার মৃতদেহ খুঁজে পান স্ত্রী ক্রিশানথিনি। সোমবার (২২ এপ্রিল) তাকে সমাহিত করা হয়। বিবিসিকে ক্রিশানথিনি জানান, তার জীবনে এমন হৃদয়বিদারক ঘটনা এটাই প্রথম নয়। এর আগে রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধে মা-বাবাকে হারিয়েছেন। আর ২০০৪ সালে বক্সিং ডে সুনামিতে মারা যায় তার খালা।
জিওন গির্জার যাজক গণেশমুরথি থিরুকুমারান বলেছেন, বিস্ফোরণের আগে বোমা হামলাকারীর সঙ্গে তারও দেখা হয়েছিল। সে নিজের নাম উমর বলেছিল। জানিয়েছিল, সে পাশের শহরের বাসিন্দা। গণেশমুরথি বলেন, ‘তার পরিচয় জানতে চেয়েছি, কেন সেখানে দাঁড়িয়ে আছে তা জিজ্ঞেস করেছি। এরপর তাকে আমি গির্জার ভেতরে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। ভেবেছি, আমাদের গির্জায় আসা নতুন মানুষদেরই একজন সে। সেকারণে তাকে কোনও সন্দেহ করিনি।’
সূত্রঃ বাংলা ট্রিবিউন