নজিরবিহীন জঙ্গি হামলার পর ঢাকায় আসা যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল বাংলাদেশের নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনার জন্য ভারতীয় হাই কমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার সঙ্গে বৈঠক করেছেন।খবর বিডিনিউজের।
দুই দিনের সফরে শনিবার ঢাকা এসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী ও পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুলের হকের সঙ্গে বৈঠকে সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে বাংলাদেশকে সহযোগিতার প্রস্তাব দেন বিসওয়াল।
পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের বাসায় বিসওয়ালের সঙ্গে শ্রিংলার বৈঠক হয় বলে একটি কূটনৈতিক সূত্র বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।
প্রায় এক ঘণ্টার ওই বৈঠকে সন্ত্রাস ও সহিংস চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নানা দিক নিয়ে তারা আলোচনা করেন বলে ওই সূত্র জানায়।
এর আগে গত মে মাসে সমকামী অধিকারকর্মী জুলহাজ মান্নান খুন হওয়ার পরও ঢাকায় এসে হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার সঙ্গে নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করেন বিসওয়াল।
সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট বলেন, পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে বিসওয়ালের দক্ষিণ এশিয়া দেখভালের দায়িত্ব থাকায় তিনি শ্রিংলার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস চরমপন্থা বিরোধী লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও বাংলাদেশ ‘একই অবস্থানে’ বলে মন্তব্য করেছিলেন তিনি।
গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় ১৭ বিদেশিসহ অন্তত ২২ জন নিহত হন। এরপর এক সপ্তাহ না হতেই বৃহস্পতিবার শোলাকিয়ায় ঈদ জামাতের আগে পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে হামলা ও গোলাগুলিতে দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ তিনজন নিহত হয়েছেন।
গুলশানে নিহতদের মধ্যে নয় ইতালীয়, সাত জাপানির পাশাপাশি ভারতের এক নাগরিক ছিলেন। ওই নিহত এক বাংলাদেশির যুক্তরাষ্ট্রেরও নাগরিকত্ব ছিল।
এই হামলার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করে জঙ্গি দমনে যে কোনো সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
পরে ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে হামলা তদন্তে সহযোগিতার জন্য দেশটির বোমা বিশেষজ্ঞদের একটি দল বাংলাদেশ আসছে বলা হলেও হাই কমিশন তা ‘গুজব’ বলে নাকচ করে।
এদিকে হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার পক্ষ থেকে শোক ও সমবেদনা জানান।
জঙ্গিবিরোধী লড়াইয়ে বাংলাদেশকে যে কোনো ধরনের সহায়তা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তুত বলেও শেখ হাসিনাকে জানান কেরি।
পরে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেকে লেখা এক শোক বার্তায়ও সন্ত্রাস ও জঙ্গিবিরোধী লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলে জানান ওবামা।
এরমধ্যে গত মাসে ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ অংশীদারিত্ব সংলাপে যুক্তরাষ্ট্রের কাউন্টারটেরোরিজম পার্টনারশিপস ফান্ডে বাংলাদেশের যোগ দেওয়ার ঘোষণা প্রকাশ হয়েছে শনিবার।
পরদিন ঢাকায় এসে ‘সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক মানের’ তদন্তের জন্য বাংলাদেশকে সহযোগিতার প্রস্তাব দিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিসওয়াল।
ঢাকা ছাড়ার আগে সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালের সঙ্গে বৈঠক করবেন যুক্তরাষ্ট্রের এই কর্মকর্তা।