দৈনিকশিক্ষা রিপোর্ট:
ঢাকা ও চট্টগ্রামের বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আয়-ব্যয় ও সম্পদের তথ্য সংগ্রহের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সম্প্রতি এ বিষয়ে এনবিআরে একটি চিঠি পাঠিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আয়-ব্যয়ে ও সম্পদ বৃদ্ধিতে অস্বাভাবিকতা পাওয়া গেলে জরুরি ভিত্তিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানাতে বলা হয়েছে। তাঁদের স্ত্রী বা স্বামীর বিষয়েও খোঁজ নিতে বলা হয়েছে।
গত মঙ্গলবার থেকে এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছে এনবিআর। বুধবার সাত সদস্যের টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি একটি খসড়া তালিকা করেছে। চূড়ান্ত তালিকা করতে সব কর অঞ্চলে আগামী সপ্তাহে চিঠি পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে কমিটি।
গতকাল বৃহস্পতিবার চিঠির খসড়া তৈরি করে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমানের কাছে পাঠানো হয়েছে। তিনি অনুমতি দেওয়ার পর তা চূড়ান্ত করা হবে।
টাস্কফোর্সের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করে বলেন, কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কিছু শিক্ষক-শিক্ষিকা শিক্ষার্থীদের ধর্মের কথা বলে জঙ্গি কার্যক্রমে অংশ নিতে প্ররোচিত করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী তাঁদের মোটা অঙ্কের অর্থ দিচ্ছে। জঙ্গি দমনের অংশ হিসেবে এনবিআর বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ওপর নজরদারি বাড়িয়েছে।
এনবিআরের টাস্কফোর্স কমিটি ওই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের সহায়তায় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নামের তালিকা করবে। তাঁদের নাম, পদ, বেতনের পরিমাণ, সর্বশেষ বেতন বৃদ্ধির পরিমাণ, গত তিন বছরের আয়কর রিটার্নের তথ্য, কোন কর অঞ্চলে রিটার্ন দাখিল করছে, কোন স্কুল, কলেজ,
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা শেষ করেছে, বিদেশে কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়তে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে কি না—এসব তথ্য জোগাড় করা হবে। শিক্ষক-শিক্ষিকা দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণ নিয়েছে কি না, মেয়াদ কত দিন ছিল, প্রশিক্ষণের ব্যয় নিজে বহন করেছে নাকি কোনো প্রতিষ্ঠান করেছে—এসব তথ্যও সংগ্রহ করা হবে। চলতি, সঞ্চয়ী, এফডিআরসহ ব্যাংক হিসাবের যাবতীয় তথ্যও সংগ্রহ করা হবে। স্কুল কর্তৃপক্ষকে ছাত্রছাত্রীদের বেতনের বাইরে আয়ের অন্য উৎস আছে কি না, গত তিন বছরের আয়ের তথ্য ব্যাংক হিসাবের সঙ্গে মিলিয়ে জানাতে হবে; বিদেশে কারো জমি বা প্লট আছে কি না তাও জানাতে হবে। শিক্ষক বা শিক্ষিকার স্ত্রী বা স্বামীর সব তথ্যও কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে।
সূত্র জানায়, টাস্কফোর্স কমিটির প্রথম বৈঠকে কিছু স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি খসড়া তালিকা করা হয়। এ তালিকায় সানিডেল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ঢাকা (আইএসডি), গ্রিন জেমস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, স্কলাসটিকা, অস্ট্রেলিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, ম্যাপললিফ, ইস্টওয়েস্ট ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, আগা খান স্কুল, লন্ডন ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, কানাডিয়ান ট্রিলিনিয়াম স্কুল ঢাকা, এসএফএক্স গ্রিন হেরাল্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, আহসান উল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, প্রাইম ইউনিভার্সিটি রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আয়-ব্যয় ও সম্পদের হিসাব খতিয়ে দেখা মানে কাউকে অভিযুক্ত করা নয়। এটা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা। জঙ্গি দমনের অংশ হিসেবে এ কাজ করা হচ্ছে।