স্পোর্টস ডেস্ক,
বৃষ্টির চোখ রাঙানির পাশাপাশি ছিল আলোকস্বল্পতার হুমকিও। এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরোধ ভেঙে প্রথম টেস্টে দারুণ এক জয় পেয়েছে শ্রীলঙ্কা। প্রথম ইনিংসে ১১৭ রানে গুটিয়ে যাওয়া দলটিই শেষ পর্যন্ত জিতল ১০৬ রানে।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্টে এটি শ্রীলঙ্কার মাত্র দ্বিতীয় জয়। ১৯৯৯ সালের সেপ্টেম্বরে ক্যান্ডিতে অরবিন্দ ডি সিলভা, অর্জুনা রানাতুঙ্গা, সনাথ জয়াসুরিয়া, মাহেলা জয়াবর্ধনে, মুত্তিয়া মুরালিধরন, চামিন্দা ভাসের মতো গ্রেটদের সমন্বয়ে গড়া দলটি প্রথমবারের মতো হারিয়েছিল স্টিভ ওয়াহর দলকে।
আরেকটি জয় পেতে প্রায় ১৭ বছর অপেক্ষা করতে হল শ্রীলঙ্কা। এর মধ্যে দেশের হয়ে অসাধারণ সব ইনিংস খেলে অবসরে চলে গেছেন কুমার সাঙ্গাকারা। এই কিংবদন্তি জিততে পারেননি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কোনো টেস্ট।
জয়াবর্ধনে-সাঙ্গাকারার বিদায়ের পর পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় থাকা অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের এই দলটির জয় হয়ত আরও বড় অর্জন। ৮৬ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে এক সময়ে ৬ রানে দুই উইকেট হারিয়ে ইনিংস হারের শঙ্কায় পড়েছিল দলটি।
ম্যাচ সেরা কুসল মেন্ডিসের ১৭৬ রানের দারুণ এক ইনিংসে লড়াইয়ের পুঁজি পাওয়ার পর বাকি কাজটুকু সেরেছেন সেই জয়ের সময় ক্যান্ডির ড্রেসিংরুমে অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা রঙ্গনা হেরাথ। এই ম্যাচ দিয়ে অভিষেক হওয়া চায়নাম্যান স্পিনার লাকসান সান্দান ও অফ স্পিন অলরাউন্ডার ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার কাছ থেকে দারুণ সহায়তা পেয়েছেন তিনি।
অভিষেক টেস্টে ৭ উইকেট নিয়েছেন সান্দকান। ম্যাচ জুড়ে অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানদের জন্য হুমকি হয়ে থাকা হেরাথ নিয়েছেন ৯ উইকেট। এর মধ্যে দ্বিতীয় ইনিংসে ৫৪ রানে ৫ উইকেট নিয়ে যথারীতি আক্রমণের নেতৃত্বে ছিলেন অভিজ্ঞ এই বাঁহাতি স্পিনারই।
পাল্লেকেলে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ৩ উইকেটে ৮৩ রান নিয়ে খেলা শুরু করে অস্ট্রেলিয়া। বৃষ্টির জন্য দেরিতে খেলা শুরু হওয়া পঞ্চম ও শেষ দিন জয়ের জন্য শেষ ৭ উইকেট দরকার ছিল শ্রীলঙ্কার। স্পিনাররা সহায়তা টার্ন-বাউন্স পাচ্ছেন, বল থেমে আসছে এমন উইকেটে আরও ১৮৫ রান সংগ্রহ করা ভীষণ কঠিন ছিল।
পারেনি অস্ট্রেলিয়া, দ্বিতীয় ইনিংসে গুটিয়ে গেছে ১৬১ রানে। তবে প্রায় এক বছরের মধ্যে টেস্টে দলের প্রথম হার এড়াতে প্রাণপণ চেষ্টা ছিল অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথের। ১২৫ বলে মাত্র ১ চারে ৫৫ রান করে অবশ্য নেতৃত্বে আসার পর অস্ট্রেলিয়ার প্রথম হার ঠেকাতে পারেননি তিনি।
স্মিথের উইকেট নেওয়ার আগে অ্যাডাম ভোজেস ও মিচেল মার্শকে বিদায় করেন হেরাথ। লক্ষ্য তাড়ায় অস্ট্রেলিয়া একমাত্র স্বস্তিতে ছিল যখন এই বাঁহাতি স্পিনার আক্রমণে ছিলেন না। তবে ম্যাথিউস অতিথিদের বেশিক্ষণ সেই স্বস্তিতে থাকতে দেননি।
পাল্লেকেলের এই টেস্টে কোনো দিনই শেষ বেলায় খুব একটা খেলা হয়নি। তৃতীয় সেশন পর্যন্ত খেলা নিতে পারলে একটা পথ পেয়েও যেতে পারত অতিথিরা। কিন্তু মিচেল স্ট্যার্ক আর নাথান লায়নকে দ্রুত ফিরিয়ে সান্দাকান খুব একটা সুযোগ রাখেননি।
হ্যামস্ট্রিং চোটের জন্য বল করতে না পারা স্টিভ ও’কিফের সঙ্গে পিটার নেভিলের প্রতিরোধে আশা জেগে উঠে অতিথিদের। চোটের জন্য দৌড়াতে পারেননি ও’কিফ। কিন্তু স্বাগতিকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলানোর কাজটা ঠিকই করেছেন। নবম উইকেটে নেভিলের সঙ্গে ১৭৮ বলে গড়েন ৪ রানের জুটি।
একমাত্র স্কোরিং শট ছিল ও’কিফের একটি চার। চা-বিরতির মিনিট ত্রিশেক আগে স্বাগতিক শিবিরে স্বস্তি নিয়ে আসেন অভিষিক্ত ধনাঞ্জয়া। এই অফস্পিনারের বলে নেভিল উইকেটরক্ষকের গ্লাভসবন্দি হলে ভাঙে অতিথিদের প্রতিরোধ। ১১৫ বলে ৯ রান করেন অস্ট্রেলিয়ার উইকেটরক্ষক।
এরপর আর বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি শ্রীলঙ্কাকে। ও’কিফকে (৯৮ বলে ৪) বোল্ড করে দলকে দারুণ এক জয় এনে দেন হেরাথ।
এই জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে এগিয়ে গেল শ্রীলঙ্কা। আগামী বৃহস্পতিবার গলে শুরু হবে দ্বিতীয় টেস্ট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ১১৭
অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: ২০৩
শ্রীলঙ্কা ২য় ইনিংস: ৩৫৩
অস্ট্রেলিয়া: (লক্ষ্য ২৬৮) (চতুর্থ দিন শেষে ৮৩/৩) ৮৮.৩ ওভারে ১৬১ (বার্নস ২৯, ওয়ার্নার ১, খাওয়াজা ১৮, স্মিথ ৫৫, ভোজেস ১২, মার্শ ২৫, নেভিল ৯, স্ট্যার্ক ০, লায়ন ৮, ও’কিফ ৪, হেইজেলউড ০*; হেরাথ ৫/৫৪, সান্দকান ৩/৪৯, ধনাঞ্জয়া ১/১২, দিলরুয়ান ১/৩০)
ফল: শ্রীলঙ্কা ১০৬ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: কুসল পেরেরা।
তথ্য: বিডিনিউজ