খালেদা জিয়ার ডাকে আলোচনায় গেলেও জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে কোনো উদ্যোগে শামিল হবেন না বলে জানিয়ে এসেছেন কৃষক, শ্রমিক, জনতা লীগের সভাপতি আবদুল কাদের সিদ্দিকী।খবর বিডিনিউজের।
বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সাহচর্য পাওয়া এই রাজনীতিক বলেছেন, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্রেও তিনি জড়িত হবেন না, বরং আঁচ পেলে তা ঠেকাবেন তিনি।
সরকারের কাছে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় ‘জাতীয় ঐক্য’ গড়ে তোলার প্রয়াসে সরকারবিরোধী অন্য দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
গুলশানে খালেদার বাড়ি ‘ফিরোজা’য় রাত ৮টা থেকে দুই ঘণ্টা আলোচনা করেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি জোটের বাইরে থাকা দলটির এই নেতা।
বের হওয়ার পরে কাদের সিদ্দিকী সাংবাদিকদের বলেন, “তার (খালেদা জিয়া) বহু কথায় আমি খুশি হয়েছি। মতের অমিল থাকলেও খুশি হয়েছি। জাতীয় প্রশ্নে, জাতির স্বার্থের প্রশ্নের তার সঙ্গে আমার খুব একটা বেশি অমিল নেই।
“আমি জামায়াতের সঙ্গে রাজনীতি করব না। বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি নিয়ে আমি মরতে চাই।”
গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলার প্রেক্ষাপটে জঙ্গিবাদবিরোধী এই উদ্যোগ সফল করতে বিএনপির ২০ দলীয় জোটসঙ্গী জামায়াতকে বাদ দেওয়ার কথা এর আগে খালেদা জিয়ার পরামর্শকদের মধ্য থেকেও উঠেছে।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর হাতে অস্ত্র তুলে নেওয়া কাদের সিদ্দিকী বলেন, “জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র অথবা তাকে ধবংস করার ষড়যন্ত্রে আমি জড়িত হব না। যদি সে সমস্ত ষড়যন্ত্র সম্পর্কে জানতে পারি, তাহলে জীবন দিয়ে তা রোধ করব। তাকে রক্ষা করার চেষ্টা করব।”
“একইভাবে একজন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী বিএনপি প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্র কিংবা তাকে কোনো অপমান সহ্য করব না এবং তার প্রতিকারের চেষ্টা করব,” বলেন বীরউত্তম খেতাবধারী এই মুক্তিযোদ্ধা।
দুই দশক আগে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে আলাদা দল নিয়ে চলা কাদের সিদ্দিকী তার সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে তার ভাই আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর সমালোচনায়ও পড়েছিলেন।
কাদের সিদ্দিকী বলেন, “জাতীয় সঙ্কটের সময়ে এখানে এসেছি। একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়ে, আরেকজন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী অথবা দেশের সরকারের বিরুদ্ধে সবচাইতে জনপ্রিয় দলের আমন্ত্রণে তার সঙ্গে দেখা করতে আসায় এত বাধা, এত আপত্তি আমি কখনোই ভাবি নাই।
“সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে দীর্ঘ দুই ঘণ্টা সময় ধরে আলোচনা হয়েছে। কিছু সময় একান্ত আলোচনাও হয়েছে।”
তিনি জানান, খালেদা জিয়ার সঙ্গে আলোচনার বিষয়বস্তু ও ভবিষ্যতে নিজের দলের করণীয় জানাতে শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১টায় মতিঝিলে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করবেন তিনি।
“সেখানে আমি সব প্রশ্নের জবাব দেব,” সাংবাদিকদের বলেন তিনি।
বৈঠকে থাকা বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, “যে সন্ত্রাস ও উগ্রবাদের সৃষ্টি হয়েছে-এই অবস্থা কীভাবে নিরসন করা যায়, সেক্ষেত্রে গোটা জাতিকে কিভাবে ঐক্যবদ্ধ করা যায়, পরামর্শ নেওয়ার জন্য প্রাথমিকভাবে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করার জন্য বেগম খালেদা জিয়া আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।
“আমরা তার আমন্ত্রণ বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর কাছে পৌঁছিয়ে দিয়েছিলাম। তারা জাতীয় সঙ্কটময় মুহূর্তে এগিয়ে এসেছেন।”
এক প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, ২০ দলীয় জোটনেত্রী হিসেবে নন, খালেদা জিয়া বিএনপি চেয়ারপারসন হিসেবে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন।
কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে তার স্ত্রী ও দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নাসরিন সিদ্দিকী, সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক ইকবাল সিদ্দিকী ও শফিকুল ইসলাম ছিলেন।
বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ছাড়াও ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজউদ্দিন আহমেদ ও আবদুল্লাহ আল নোমান।
গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে গত ১ জুলাই জঙ্গিদের হামলায় ১৭ বিদেশিসহ ২২ জন নিহত হওয়ার পর উগ্রবাদ মোকাবেলায় দলমত নির্বিশেষে জাতীয় ঐক্য গড়তে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন খালেদা।
তবে বিএনপি-জামায়াতকে জঙ্গি মদদ দেওয়ার জন্য দায়ী করে আওয়ামী লীগ সেই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে।
এরপর বিএনপি সরকারবিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে এই উদ্যোগে আনতে সক্রিয় হয়েছে।
এর অংশ হিসেবে কৃষক, শ্রমিক, জনতা লীগ, গণফোরাম, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সঙ্গে যোগাযোগ করেছে তারা।
খালেদা জিয়া দলগুলোর নেতাদের ‘চা-চক্রে’ আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তারই অংশ হিসেবে কাদের সিদ্দিকীর এই বৈঠক হল।