হাফিজুল ইসলাম চৌধুরী, কক্সবাজার থেকে:
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ রুখতে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত সব শ্রেণিপেশার মানুষ ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন শুরু করেছে। সারাদেশে জঙ্গি প্রতিরোধ কমিটি ও জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন-সমাবেশ হচ্ছে। জঙ্গিবাদ নিয়ে তৃণমূলের মানুষ আজ অনেক সচেতন।
শুক্রবার ৫ আগষ্ট সকাল ১১টায় কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশে কোন আইএস বা জঙ্গি নেই, স্বাধীনতা বিরোধীরাই ভিন্নরূপে এ নাম ব্যবহার করছে বলে দাবি করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
মন্ত্রী বলেছেন, স্বাধীনতার সময় এ দেশে একটি চক্র গুপ্তহত্যা, ধর্ষণ, লুন্ঠন চালিয়েছে। পঁচাত্তরের পর একই চক্রটি হাতের রগ, পায়ের রগ কেটে আত্মপ্রকাশ করে। এরা ৬৩ জেলায় একসঙ্গে বোমা মারলো, বিচারককে হত্যা করলো। তারপর জেএমবি, হুজি বিভিন্ন নাম ধারণ করে এরা নানাভাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। ‘এরা সবাই এক। এখন নানাভাবে এরাই নিজেদের আইএস দাবি করতে শুরু করেছে। ’
তিনি আরো বলেন, দেশের মানুষ গুটিকয়েক লোকের হাতে জিম্মি হতে পারে না। এই গুটিকয়েক লোকের জন্য বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ দমনে সরকার কঠোর। জঙ্গিদের ঠাঁই এ দেশে হবে না।
সব ধর্মের একই কথা মানুষ হত্যা মহাপাপ। জঙ্গিবাদ জান্নাত নয় বরং জাহান্নামে যাওয়ার পথ উল্লেখ করে তিনি বলেন, জঙ্গিবাদের কোন রাষ্ট্র বা সীমানা নেই। আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, আমাদের দেশে কোন জঙ্গিবাদের আস্তানা করতে দেব না। বিচ্ছিন্নবাদীদের এক ইঞ্চি মাটিও ব্যবহার করতে দেব না।
দেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে জঙ্গিবাদের কারণে যাদের ধরা হয়েছে তারা সবাই এদেশের নাগরিক। বাইরে থেকে কেউ আসেনি। যদিও বিভিন্ন সময় বিদেশিরা এদেশে আইএস আছে বলে দাবি করে আসছে। কিন্তু তার কোন প্রমাণ নেই।
অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সন্তানদের সময় দিন। সন্তানেরা কোথায় যাচ্ছে, কী করছে, তার খোঁজখবর নিন। সন্তানেরা জঙ্গিবাদে চলে গেলে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করুন।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘আমরা সবাইকে ভালোবাসা দিয়ে শান্তিতে রাখার পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাই। বাংলাদেশে আর গুলশান ট্র্যাজেডি দেখতে চাই না।’
ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা উল্লেখ করে সরকারের প্রভাবশালী এই মন্ত্রী বলেন, পাসপোর্টসেবা জনগণের দূরগোড়ায় পৌঁছে দিতে বর্তমান সরকার কাজ করছে। এ পর্যন্ত ১ কোটি ৪৫ লাখ ডিজিটাল পাসপোর্ট জনগনের হাতে পৌছে দিতে সক্ষম হয়েছে। দেশের ৬৫ জেলার মধ্যে ৬৬টি পাসপোর্ট স্থাপন করা হয়েছে। এখন মানুষ খুব সহজেই ডিজিটাল পাসপোর্ট পাচ্ছে।
তিনি বলেন, বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে ই-পাসপোর্ট তৈরীর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। অনলাইনেই পাসপোর্টের সব তথ্য যোগ করা হচ্ছে। আবেদনপ্রক্রিয়াও অনলাইনে হচ্ছে। এ সময় মন্ত্রী পাসপোর্ট করতে এসে কোন মানুষ যাতে হয়রানির শিকার না হয়, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রতি কড়া নির্দেশ দেন। এর আগে মন্ত্রী ফিতা কেটে ও মোনাজাত করে কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয় উদ্বোধন করেন।
পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাসুদ রেজওয়ানের স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, উখিয়া-টেকনাফের সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদি, মহেশখালী-কুতুবদিয়ার সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক ও চকরিয়া-পেকুয়ার সংসদ সদস্য মোহাম্মদ ইলিয়াছ।
আলোচনা সভার শুরুতে কোরআন তেলাওয়াত করেন কক্সবাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি মাওলানা সোলাইমান কাসেমী।
অনুষ্ঠানে বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ পিএসসি জিহ প্লাস, কক্সবাজার জেলা পরিষদের প্রশাসক মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, জেলা প্রশাসক মো: আলী হোসেন, পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান চেয়ারম্যানসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও সরকারি শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পাসপোর্ট কার্যালয় উদ্বোধন শেষে মন্ত্রী বান্দরবানের উদ্দেশ্যে কক্সবাজার ত্যাগ করেন।