জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় ‘জাতীয় ঐক্য’ গড়ার বিষয়ে কিছু ‘প্রস্তাব দিতেই’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিয়েছেন জানিয়ে কৃষক, শ্রমিক, জনতা লীগের সভাপতি আবদুল কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, ঐক্য তখনই হবে, যদি দুই পক্ষের বনিবনা হয়। খবর বিডিনিউজের।
“আমরা প্রস্তাব দিয়েছি, দেখা যাক, নিশ্চয়ই আমাদের সব প্রস্তাব সবাই মানবে না, আমাদের মানার মত প্রস্তাব কেউ স্বীকার না করলে বনিবনা হবে না। এটা একটা বিয়ের ঘটকালির মত, বিয়ে হয় উভয়ের পছন্দে, রাজনীতি হবে সে রকম।”
বৃহস্পতিবার রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদার বাড়ি গিয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা তার সঙ্গে বৈঠক করেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি জোটের বাইরে থাকা কাদের সিদ্দিকী।
জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় ‘জাতীয় ঐক্য’ গড়ে তোলার প্রয়াসে সরকারের কাছে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সরকারবিরোধী অন্য দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার এই উদ্যোগ নিয়েছেন।
ওই বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে সে বিষয়ে জানাতে শুক্রবার মতিঝিলে কৃষক, শ্রমিক, জনতা লীগের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন কাদের সিদ্দিকী।
তিনি বলেন, “খালেদার জিয়ার সাথে আমি কোনো ঐক্য করতে যাই নাই। দেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে গিয়েছিলাম। উনি একটি জাতীয় ঐক্যর ডাক দিয়েছেন, আমি বলব তিনি একটা ভাল কাজ করছেন।”
বৈঠকে প্রস্তাবের বিষয় কাদের সিদ্দিকী বলেন, “সার্বিকভাবে জাতীয় ঐক্য গঠনের প্রচেষ্টা নেওয়া দরকার, সেখানে জামায়াত থাকবে না, তেমনি বঙ্গবন্ধুর সরকারকে উৎখাতের জন্য দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য দায়ী গণবাহিনীও সেখানে থাকবে না।
খালেদা জিয়ার সাথে ‘দীর্ঘ’ আলোচনায় তাকে জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ার পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানান বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সাহচর্য পাওয়া এই রাজনীতিক।
“খালেদা জিয়াকে বলেছি, বঙ্গবন্ধু ছাড়া রাজনীতি করব না, জামাতকে নিয়ে রাজনীতি করব না। খালেদা জিয়াকে জাতীয় নেতৃত্ব দিতে হলে প্রথমে স্পষ্টভাবে বলতে হবে যে জামায়াত তার জোটে নেই।”
খালেদা জিয়া যেভাবে তার দল বিএনপি এবং ২০ দলীয় জোটের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, সে বিষয়েও কিছু পরামর্শ রয়েছে কাদের সিদ্দিকীর।
“আপনি (খালেদা) ঘর থেকে বের হন। আপনার ঘরে সবাই আসবে, আর আপনি বসে থাকলে হবে না। আপনি বের হন, আপনি অন্যের ঘরে যান। আমাদের উপরে যেমন কোনো কিছু চাপিয়ে দিলে মানব না, শুনব না; ঠিক তেমনি তাদের উপরও তেমন কিছু চাপিয়ে দিতে পারি না।”
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার দিনে খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালনেরও সমালোচনা করেন কৃষক, শ্রমিক, জনতা লীগের সভাপতি।
“বৈঠকে আমি বলেছি, বঙ্গবন্ধু আমার অস্তিত্ব। তাকে বাদ দিয়ে রাজনীতি করব না, তাকে অবহেলা করলে সেই রাজনীতিতে থাকব না। বঙ্গবন্ধুকে গালাগালি করা যাবে না; তার রাজনীতি নিয়ে যদি কোনো কথা হয়, তাহলে রাজনীতির সীমায় থেকে করবেন। ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুদিনে খালেদা জিয়ার যদি প্রকৃত জন্মদিন হয়, সেটা পালন করে চলবে না।”
অবশ্য বিএনপি নেতাদের মত কাদের সিদ্দিকীও জুমার খুতবায় জঙ্গিবাদবিরোধী বক্তব্য ঠিক করে দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
“ইসলামিক ফাউন্ডেশন কেন নিজস্ব খুতবা দেওয়ার জন্য তৎপর হয়েছে? এরাও জঙ্গির সাথে জড়িত কিনা? হাদিস কুরআন আছে, খুতবা সেইভাবে করা উচিৎ।”
ভারতের বিতর্কিত ইসলামী বক্তা জাকির নায়েকের পিস টিভির সম্প্রচার বাংলাদেশে বন্ধের পর অনুমোদনহীন পিস স্কুল বন্ধের যে নির্দেশ সরকার দিয়েছে, তারও সমালোচনা করেন কাদের সিদ্দিকী।
“সরকার বলছে দেশে শান্তি আছে, সুস্থিতি আছে। হলি আর্টিজেনের ঘটনায় সেটা একটা গোলমাল হল বলে সব বন্ধ করে দিবেন?…. স্কুল কলেজ বন্ধ করে দেওয়া, বাঙালী জাতিকে ভয় পাইয়ে দেওয়া ঠিক হবে না।”
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে জঙ্গিরা ধরা না পড়ে নিহত হওয়ার ঘটনা নিয়েও বিএনপি নেতাদের সুরেই কথা বলেছেন এক সময় আওয়ামী লীগের রাজনীতি করা কাদের সিদ্দিকী।
“আমি সেনাবহিনী ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সমালোচনা করতে চাই না তবে তারা যে সমস্ত কাজ করছেন তা প্রশংসার কাজ নয়। সবাইকে মেরে ফেলে গোপন তথ্য যাতে বের না হয় এটার জন্য আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভেতরে এদের লোক আছে কীনা আমার মধ্যে সন্দেহ হয়।
শোলাকিয়ার হামলাকারী শফিউল ইসলামসহ দুজন ময়মনসিংহে র্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “গতকাল নান্দাইলে যে ঘটনা ঘটল, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে আসামি গেলে তার যদি জীবন রক্ষিত না হয়, তাকে যদি প্রটেকশন না দিতে পারে, তাহলে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা তাদের কাছে নিরাপদ এটা কীভাবে ভাবতে পারি। শেখ হাসিনাকে হারিয়ে আরেকবার ১৫ অগাস্টের বেদনা উপভোগ করতে চাই না।”
দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের প্রধান শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার দিকে ইংগিত করে কাদের সিদ্দিকী বলেন, “বাংলাদেশে মাত্র দুইজন পুরুষ, আর সবাই অন্য লিঙ্গের মানুষ।”
আর এ কারণে তিনি মনে করেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই দেশের ক্রন্তিকাল থেকে উত্তরণের চেষ্টা করা উচিৎ, তবে তা খালেদা জিয়াকে ‘বাদ দিয়ে নয়’।
“বঙ্গবন্ধু যেমন অবিসংবিদিত নেতা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে সেই অবস্থানে এসেছেন। তিনি বাংলদেশর প্রধান জাতীয় নেতা।
“শেখ হাসিনাকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশ চিন্তা করা অবাস্তব। ঠিক তেমনি খালেদা জিয়াকে বাদ দেওয়াও অবাস্তব। এ রকম কাজ পাকিস্তানের সময় আইয়ুব-ইয়াহিয়ারা করেছেন কারণ তারা বঙ্গবন্ধুকে ধর্তব্যের মধ্যে আনেননি, যার পরিণতিতে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়ে পাকিস্তান খণ্ডিত হয়েছে।”