লাইফস্টাইল ডেস্কঃ
দ্রুত ছড়াতে পারে তবে রোগের তীব্রতা কম; তারপরও ওমিক্রন হতে পারে ক্ষতিকর। করোনাভাইরাসের বিভিন্ন ধরন বা ‘ভ্যারিয়েন্ট’য়ের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানতে বিশ্বব্যাপি গবেষকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন।
‘সুপার স্প্রেডার ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন’ এখন তুমুল আলোচনায়। অনেককিছু জানা গেছে ঠিক। তবে আরও জানার আছে বাকি।
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের গবেষকদের তথ্য একত্রিক করে করোনাভাইরাসের এই ধরন সম্পর্কে এখন পর্যন্ত যা জানা গেছে তা তুলে ধরা হয় ‘টাইমস অফ ইন্ডিয়া’র এক প্রতিবেদনে।
‘ওমিক্রন’য়ের সংক্রমণের গতি
১৮ জানুয়ারি বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, “দ্রুত গতিতে ‘ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট’য়ের জায়গা দখল করে নিচ্ছে ‘ওমিক্রন’। এই মহামারীকালে এখন পর্যন্ত এতটা সংক্রমণের গতি দেখা যায়নি কোনো ধরনে।”
‘ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট’য়ের সংক্রমণ হার সম্পর্কে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার ‘কোভিড-১৯ টেকনিকাল লিড এবং ‘এপিডেমিওলজিস্ট’ মারিয়া ভ্যান কেরখোভ বলেন, “করোনাভাইরাসের এই নয়া ধরনের বিশেষ ‘মিউটেশন’য়ের কারণে এটি মানবকোষের সঙ্গে জুড়ে যেতে পারে খুব সহজে। এর সংক্রমণের হার বেশি হওয়া এটাই প্রথম কারণ।”
“দ্বিতীয় কারণ হল শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ফাঁকি দেওয়ার ক্ষমতা। অর্থাৎ যারা টিকা নিয়েছেন এবং যারা একবার হলেও আগে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন তারাও পুনরায় আক্রান্ত হতে পারেন।”
সংক্রমণের হার বেশি হওয়ার পেছনে আরেকটি কারণ তুলে ধরেন কেরখোভ।
“আপার রেসপিরাটরি ট্র্যাক্ট’ বা শ্বাসতন্ত্রের উপরিভাগে এই নয়া ‘ভ্যারিয়েন্ট’ নিজের নকল তৈরি করতে পারে। অন্য কোনো ‘ভ্যারিয়েন্ট’য়ে এই বৈশিষ্ট্য দেখা যায়নি। আর শ্বাসতন্ত্রের এই অংশে থাকার কারণে ভাইরাস শরীরে ছড়িয়ে পড়াও সহজ হয়।”
‘ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া লস অ্যাঞ্জেলস’য়ের ‘প্যাথলজি অ্যান্ড ল্যাবরেটরি মেডিসিন’য়ের সহকারী অধ্যাপক শ্যাংজি ইয়্যাং বলেন, “যে দূর্বার গতিতে ‘ওমিক্রন’ মানুষকে গ্রাস করছে তা আসলেই অভূতপূর্ব। শুরুতে বিশ্বব্যাপি করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ১ শতাংশের মাঝে ছিল ‘ওমিক্রন’। মাত্র দুই সপ্তাহে তা পৌঁছে যায় ৫০ শতাংশে। আর এক মাসে শতভাগ। কোনো ভাইরাস এত সংক্রমণক্ষম হতে পারে তা আমাদের ধারণার বাইরে ছিল।”
যে কারণে ‘সুপার স্ট্রেডার’
বার্লিংটন’য়ের অবস্থিত ‘ইউনিভার্সিটি অফ ভেরমন্ট’য়ের ‘ভাইরোলজিস্ট’ এমিলি ব্রুস বলেন, “করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া এবং টিকা নেওয়ার কারণে শরীরে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে ‘অ্যান্টিবডি’ তৈরি হয়। কিন্তু ‘ওমিক্রন’য়ের জিনগত গঠন এমনই যে ওই ‘অ্যান্টিবডি’ একে শনাক্ত করতে পারে না। ফলে ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।”
অসুস্থতার মাত্রা কম কেনো?
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, “করোনাভাইরাসের এই ধরন নিয়ে প্রাথমিক গবেষণায় দেখা যায়, ফুসফুসের কোষকে সংক্রমিত করার ক্ষমতা এর কম। এ কারণেই হয়ত মানুষ এতে আক্রান্ত হলেও অসুস্থতা তীব্র পর্যায়ে পৌঁছায় না।”
ভারতের লোক নায়েক হাসপাতালের ‘মেডিকাল ডিরেক্টর’ ডা. সুরেশ কুমার বলেন, “‘ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট’য়ের সঙ্গে তুলনা করলে ‘ওমিক্রন’ শরীরে যেমন দ্রুত ছড়ায় তেমনি শরীর থেকে বের হয়েও যায় দ্রুত। আর টিকা নেওয়ার কারণেও মানুষের অসুস্থতার তীব্রতা কমছে।
‘ইউনিভার্সিটি অফ ম্যাসাচুসেটস’য়ের ভাইরাস বিশেষজ্ঞ জেরেমি লুবান বলেন, “করোনাভাইরাসের রূপ বদলানো গতি বেড়ে গেছে এমনটা ভাবার কারণ নেই। যেখানেই হোক এই ধরন এতদিন তৈরি হচ্ছিল শুধু আমাদের সামনে আসেনি। ‘ওমিক্রন’ প্রাণঘাতি নয় ঠিক। তবে এর মারাত্মক সংক্রমণ গতির কারণে আগামি কয়েক বছর এটি আমাদের মাঝে থাকবে।”
গ্লাডস্টোন ইন্সটিটিউট অফ ভাইরোলজি’র সাবেক পরিচালক এবং বর্তমান ‘সিনিয়র ইনভেস্টিগেটর’ ডা. ওয়ার্নার গ্রিন বলেন, “সবচাইতে দারুণ ব্যাপার হবে যদি করোনাভাইরাসের এই ধরন এতোটাই দুর্বল হয়ে যায় যে তা নিজেই টিকাতে পরিণত হয়। তখন এটি দ্রুত ছড়াবে ঠিকই কিন্তু কোনো শারীরিক অসুস্থতা তৈরি করবে না। এমন পরিস্থিতিতে মহামারীও তার তাণ্ডব হারাবে।”
তখন শুধু তারাই অসুস্থ হবেন যারা টিকা নেননি এবং কখনই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হননি।
সূত্রঃ বিডিনিউজ