নঈম আল ইস্পাহান:
ফেসবুক আগমনের অনেক আগে।রং নাম্বারের পরিচয়ে মিরা ও কবিরের দীর্ঘদিন মোবাইলে কথা হয়েছে।ভাল বন্ধুত্ব হয়েছে।বন্ধুত্ব থেকে প্রেম।কিন্তু,কেউ কাউকে দেখেনি।না দেখেই দুজন,দুজনকে প্রচন্ড ভালবাসে।কবির দেখা করার জন্য অনেকবার চেষ্টা করেছে।মিরা,রাজি হয়নি।না দেখে প্রেম ভয়ংকর হয়।মনের মানুষটি যদি দেখতে মনের মত না হয় তাহলে সমস্যার শুরু!হয়তো ছেলেটির মেয়েটিকে পছন্দ হয়না।নতুবা মেয়েটির ছেলেটিকে পছন্দ হয়না।পছন্দ না হওয়ার পর ও প্রেম চালিয়ে যাওয়াকে আমাদের প্রচলিত ভাষায় “বলিদান” বলে।
কবির বুঝতে পারল সে দিন,দিন মিরার প্রতি খুব দূর্বল হয়ে যাচ্ছে।নিজেকে কন্ট্রোল করাও সম্ভব হচ্ছেনা।তার চলাচলের রিমোট মিরার হাতে।মিরা যেভাবে খুশি সেভাবে চ্যানেল পাল্টাতে পারে।এই সমস্যার একটাই সমাধান;দেখা করা।
আজ মিরার সাথে কবিরের প্রথম ডেটিং।খুব সকাল,সকাল কবির মিরার সাথে দেখা করতে চার ঘন্টার রাস্তা বাসে চড়ে মিরার কলেজ থেকে একটু দূরের গ্রীন ক্যাফেতে অপেক্ষা করছে।আসার পথে কবির,মিরাকে বার,বার রিকুয়েস্ট করেছে সে যেন একা আসে।কোন বান্ধবী না আনতে কবির,সাফ মানা করেছে।বাসে চার ঘন্টা যাত্রার কারণে কবির একটু বিরক্ত হয়ে আছে।মিরা ও আসছেনা।কল দিলে বার,বার কেটে দিচ্ছে।
আচ্ছা,মিরা কী আসবেনা?সে কি আমার সাথে বেঈমানি করল?হিন্দী সিনেমার নায়িকাদের মত সিমটাই খোলে ফেলে দিবে?যাতে করে কখনো কবির কল কিংবা মেসেজ দিতে না পারে।সবাই বলেছিল,রং নাম্বারে কোন মেয়েকে বিশ্বাস না করতে।কবিরের মন খুব খারাপ হয়ে গেল।প্রায় ঘন্টা খানেক মত বসে থাকার পর কবির চলে যাওয়ার জন্য দাঁড়াতে যাবে তখনই মিরার কল।মিরার কল দেখে কবির প্রাণ ফিরে পেল।
:কবির,তুমি কোথায়?
:-আমি গ্রীন ক্যাফেতে অনেকক্ষণ ধরে বসে আছি।তুমি কল কেটে দিচ্ছ কেন?
:সব এসে বলব।
মিরা কথা রাখেনি।তার পাঁচজন বান্ধবী সাথে এসেছে।কবির এত মেয়েকে একসাথে দেখে রীতিমত ভড়কে গেছে।মিরার উপর তৎক্ষণাৎ খুব রাগ হল।কিন্তু,পাঁচজনের মধ্যে কে মিরা তা না জেনে কবির কার সাথে রাগ করবে বুঝে উঠতে পারছেনা।
ছয়জন মেয়ের সাথে ক্যাফেতে একজন ছেলে বসে আছে।কবিরের দিকে ক্যাফের অন্যান্য মানুষজন তাকাচ্ছে।কবির কিছুটা বিব্রত বোধ করছে।ছয়জন মেয়ের মধ্যে তিন,চারজন কবিরের সাথে কথা বলছে।বাকি দুজন চুপচাপ।সবাই মনে হয় প্ল্যান করে এসেছে।যদি শুধুই একজন চুপচাপ থাকত তাহলে তাকেই মিরা বলে ধরে নেয়া যেত।
তিনজন নেকাব করেছে।বাকি তিনজনের মুখ দেখা যাচ্ছে।যাদের মুখ দেখা যাচ্ছে সে তিনজনের তুলনায় কবিরের নেকাব পরা মেয়েদের সুন্দরী মনে হচ্ছে।খুব ইচ্ছে করছে মিরা কে?তা জানতে।কিন্তু,কেউই কে মিরা তা বলতে নারাজ।আচ্ছা,সবাই এমন করছে কেন?যারা কথা বলছে তাদের সাথে মিরার ভয়েস মিলছেনা।তার মানে মিরা নেকাব পরে আছে।তাকে দেখতে চাইলে সবাইকে নেকাব খুলতে হবে এবং কথা বলতে হবে।কথা বললেই কবির,মিরা কে চিনে নিবে।
কবির চালাকি করে খাবারের অর্ডার দিল।খেতে গেলে অবশ্যই নেকাব খুলতে হবে।তখন কবির সবার চেহারা দেখে ফেলবে।নির্দিষ্ট সময়ে ওয়েটার সবার জন্য খাবার নিয়ে এল।কবির সবাইকে খেতে অনুরোধ করল।সব মেয়েরা একে অন্যের সাথে চোখাচোখি করতে থাকে।তারা হয়তো ভাবছে এবার বুঝি তাদের সব প্ল্যান ভেস্তে গেল।কবির সবাইকে আবার অনুরোধ করল,খাওয়া শুরু করতে।যারা নেকাব পরেনি তারা নিজের দিকে খাবারের প্লেট টেনে নিচ্ছে।নেকাব করা তিনজনের মধ্যে দুজন নেকাব খুলছে।তাদের দুজনেই সুন্দরী।
বাকি একজন মুখ খুলছেনা এবং চুপচাপ।যে দুজন নেকাব খুলেছে তারা মিষ্টি হেসে কবিরের সাথে কথা বলছে।এদুজনের ভয়েসের সাথেও মিরার ভয়েস মিলছেনা।কবিরের বুঝতে বাকি রইলোনা নেকাব পরা মেয়েটিই তার মিরা।চোখ দুটো দেখা যাচ্ছে।কবিরের দিকে মাঝে মধ্যে তাকাচ্ছে।কিন্তু নেকাব খুলছেনা।কবিরের আর সহ্য হচ্ছেনা।কবির সমস্ত লজ্জাকে উপেক্ষা করে নেকাব পরা মেয়েটি কে লক্ষ করে বলল মিরা,তুমি কিছু খাবেনা?সব ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে তো!
মিরার বান্ধবীরা অবাক।তাদের সমস্ত প্ল্যান এক নিমিষে ভেস্তে গেল।তারা সবাই কবিরকে এক বাক্যে জিজ্ঞেস করল,আপনি মিরাকে কিভাবে চিনলেন?
কবির মুচকি হেসে বলল,যাকে এত ভালবাসি তাকে চিনতে পারবনা?
বাইরে ঝুমঝুম বৃষ্টি হচ্ছে।প্রকৃতি শীতল হয়ে গেছে।মিরার বান্ধবীরা কবিরের সাথে আড্ডা দিচ্ছে।ক্যাফেতে মানুষজন আগের মত নেই।দুয়েকজন ওয়েটার,কবির,মিরা ও তার বান্ধবীরা।মিরা আস্তে আস্তে নেকাব খুলছে।কবির আড়চোখে মিরার নেকাব খোলার দৃশ্য দেখছে।কবির যেমনটা ভেবেছিল মিরা ঠিক তেমনি।কবিরের,কল্পনায় আঁকা ছবির মত।যার সাথে জন্ম জন্মান্তর বৃষ্টিতে ভিজা যায়।আচ্ছা,এক্ষনি কি মিরার সাথে ক্যাফের বাইরে গিয়ে বৃষ্টিতে ভিজবে?কবির মনে মনে ভাবছে মিরার নেকাব খোলার দৃশ্য যেন কখনো শেষ না হয়।কেন শেষ হবে?এ যে পরম সুখের।যে সুখের নেই বিশ্রাম।