অখ্যাত গ্রাম নয় মেরংলোয়া:
বিধাতার নামে বিক্রি হয় মূলাবাদী অষুধের মিহি শিশি
তারই উছিলায় ঠগবাজ-প্রতারক-পীর-সাধু মিশামিশি
বিধাতার নাম করে পুড়ে তারই ঘর
বেশুমার গুড়ো হয় মনুষ্য-অন্তর
মানবিকতার খরাদীর্ণ রোদে বিধা তাই কাঁদে ঝরঝর
পুণ্যভূমি মেরংলোয়া ভস্ম-গ্রামে বাংলাদেশ কাঁদছে অঝোর
পোড়া প্যাগোডার থামে মাথা ঠেকিয়েছে বিধা বড়ুয়ার বয়েসী শ্বশুর
বিধাতা বেদম নয়, অধম দমের শিশু বোধহীন, মানুষই অসুর
দানবিক দোপেয়ের দায়ী পায়ে সইবে না সুরের নূপুর।
০২.
ঝড় ওঠে, থামে ফের
মনোঘরে দীপশিখা নির্বাপনে নিজেকে হারায়
হঠকারী খড়কুটো ঝড়ে উড়ে ধায়
নীরব-নিবিড়ে বেড়ে পোড়া পচা ক্ষত হতমানে নিয়ত ছড়ায়
অপয়া তা-বতাপ মানব মূর্তিকে পুড়ে ছাইভস্মে বিবেক ওড়ায়।
০৩.
পূর্ব মেরংলোয়া আর পশ্চিম মেরংলোয়াকে সকলে চেনেন
সুখ-দুঃখে পাশাপাশি শতবর্ষে গৃহবাসী তারা দুই বোন
এক পাক্ষিক অপ্রেমে দুজনের ভেঙে গেছে প্রশান্তির স্নিগ্ধ মনোকোণ।
০৪.
ভাঙা মূর্তির বাঁ পাশে পড়ে আছে ঘৃণাহীন মহাপ্রাণ বুদ্ধের নির্বাণ
ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা শিলাখ- জ¦লাবেই চেতনার শিখা অনির্বাণ
মুক্তির মুরলী শুনি জমিনের মহা কোল জুড়ে
বৃক্ষ ও লতায় ফুল ধরে, ফুল ঝরে
ঋতু বদলের সাথে জমে-মোছে মেঘভেলা, কর্মঠ ও কুঁড়ে
দু-ই থাকে বৃক্ষবাঁকে, খোড়লে ও ডালে
তাই বলে সাপহীন জঙ্গলের খোঁজ কোথা পাই এ উড়ালে
এমত দৃশ্যের পাশে অনায়াসে
রাজা শুদ্ধোধনপুত্র মহাত্মা সিদ্ধার্থ পুনর্বার গাট্টি-বোচকা কাঁধে তুলে
ম্লান জোছনায় ভিজে বেরিয়ে গেলেন বোধিবৃক্ষের আড়ালে
০৫.
এবার সকলে চলো জোট বেঁধে মেরংলোয়া গ্রামে
শ্রমিক-মজুর আর কৃষকের মিলিত সংগ্রামে
নেভাবো আগুন
ষড়যন্ত্রী দাবানলে কিছুতেই পুড়বে না বহুশত বছরের গৃহ
ঝড় সে-তো সাময়িক, যদিও-বা দান তার দন্তপেশা অনন্ত নিগ্রহ
পোড়ে না ফাগুন
সম্যক সমাধি পেয়ে নির্বাপিত মহামতি বুদ্ধের বেদিতে
এবার সকলে চলো, জোট বেঁধে অর্ঘ্য দেব চিরস্থির শান্তির পেশিতে
বিধা বড়ুয়ার এতে মত নাই, ইচ্ছা নাই কৃপণ পিরিতে
বিধাতারও সায় নাই কেউ এসে বাগড়া দিলে বাগানের বৈচিত্র্য-রীতে।
০৬.
মোক্ষের কুহক ডাকে
পতঙ্গেরা ঝাঁপ দেয় আগুনের অনর্থ চিতায়
মোক্ষ নিজ কক্ষে থাকে
অপদেবতার ছায়া দীর্ঘ হয় সাজানো ছুতায়
গঙ্গাস্রোত ধুয়ে নেয় অগণন সনাতন পাপ
অশুচি হয় না জল, নাই তার প্রাণেও সন্তাপ,
এ সামান্য নিবেদন পেশ করে দেখি
চারিদিকে ফণাখোলা বিষধর সাপ
তাদের দুচোখে মেকি
ব্যর্থতার বানানো চালাকি
মোক্ষের মোহন সুধা খুঁজে নিতে চেয়ে
আড়ালের হাতগুলো দৃশ্যমান বেশি সবচেয়ে,
বিধা বড়ুয়ার হৃদি মর্মরিত আজ মিশকালো মেঘে ছেয়ে।
০৭.
শত শতকের স্মৃতি প্রীতি-সুতোয় সতত গেঁথে
এনেছ স্মরণ-ধারা
মহাভারতের ছেঁড়া পাতা জুড়েছ আঠার প্রেমে
ও সুকন্যা মেরংলোয়া, জাদী ও প্যাগোডা
রোরুদ্যময়ী বিধা বড়ুয়া
ক্ষমা চাই শর্ত মেনে, ক্ষমা কর বেদনার চূড়া থেকে নেমে
তোমার মহত্ব হেনে রুখো এই পাশবিক ভাষা
অপার ক্ষমার জোরে আমাকে ফিরায়ে দাও কৃষাণের মৃত্যুহীন আশা।
০৮.
উন্মাদের সূচিপত্রে ক্রোধান্ধ আক্রোশ চিরকালই
জীয়ন-জায়েজ
সর্ব বাঁকে মাথা তোলে মাথামোটা কবন্ধ কপট
সর্ব শূন্যে পাখা মেলে লোভী তস্করের ক্রূর হাত
ইতিহাস ঘুমায় না
পশু-পক্ষী আর ঘনঘোর সংঘ অঘোরে ঘুমিয়ে গেলে
বাঁশি ফুকে কালের প্রহরী
ইতিহাস তন্দ্রাচ্ছন্ন হয় না কখনো
রাজা মহারাজাদের তখতের তলায় মাঝেমধ্যে দিশাহীন
কুঁকড়ে গোঙায়
উন্মাদের দেশে জুতা সেলাইয়ের কাজ করে নেক বান্দা খোয়াজ খিজির!
০৯.
মধ্যরাতে বায়বীয় মদ্যপায়ীগণ মাঠ দখল করেন
রাস্তার পুরোনো পিচে মিশে রয় বলদের বলদর্পী খুড়ি
খুন-চাপা শুয়োরেরা খুঁড়ে তোলে সভ্যতার প্রাচীন ঢালাই
নির্বোধের পৃথিবীতে ভাববিশ্বে ফেঁপে বাড়ে নিষ্ফলা আকাল
আল্লাহর রাজত্বে তারা অযাচিতে নিজেরাই বনে ভুয়া স্বয়ম্ভূ শাসক
পৌরুষ ফলাতে চেয়ে রাত ভর ডানা ঝাপটায় বাদুড়-পেঁচা
ত্রস্ততায় বাড়ায় সন্ত্রাস
দুহাতে মৌলকুড়াল
কুপথে উড়াল
ধর্ম তার
কখনো আরশের নিচে মরলোক ভূঁয়ে নামে না মূঢ়ের খোদা
পর মা’র অপমানে ইহাদের মনোভূমে বধিরের কালো থাবা ফোটে।