মিয়ানমার থেকে আসা উদ্বাস্তু সঙ্কটের একটি স্থায়ী সমাধান খুঁজতে দেশটির নতুন নেতৃত্বের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহের কথা জাতিসংঘে তুলে ধরেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার জাতিসংঘে শরণার্থী বিষয়ে আয়োজিত এক বৈঠকে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন বলে তার প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানান।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার উদ্যোগে জাতিসংঘের ট্রাস্টিশিপ কাউন্সিল চেম্বারে ‘লিডার্স সামিট অন রিফিউজি ইস্যু’ শীর্ষক এই আলোচনার আয়োজন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, শরণার্থী সমস্যার স্থায়ী সামাধানের জন্য তার সরকার প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করতে চায়। খবর বিডিনিউজের।
মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অং সান সু চির সঙ্গে ইতোমধ্যে এ বিষয়ে আলোচনার কথাও তিনি বক্তৃতায় তুলে ধরেন।
শেখ হাসিনা বলেন, তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ মিয়ানমার থেকে আসা বিপুল সংখ্যক উদ্বাস্তুকে আশ্রয় দিয়ে আসছে।
তিনি বলেন, নিজেদের সীমিত সম্পদ নিয়েও বাংলাদেশ এই শরণার্থীদের জন্য দায়িত্ব পালন করে আসছে। স্থানীয় বাসিন্দারা প্রতিবেশী দেশের এই উদ্বাস্তুদের নিরাপত্তার জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। আর তা করতে গিয়ে অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও পরিবেশগতভাবে নানা চ্যালেঞ্জর মোকাবিলা করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই শরণার্থী শিবিরগুলোতে নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকারের বিনিয়োগ অব্যানহত থাকবে। তাদের জন্য উন্নত আবাসনের ব্যবস্থা করা এবং তাদের স্বনির্ভর করে তুলতে দক্ষতা উন্নয়নের বিষয়টিও বাড়তি গুরুত্ব পাবে।
# মিয়ানমারে জাতিগত ও রাজনৈতিক কারণে নিপীড়নের শিকার মুসলিম রোহিঙ্গারা দুই দশক আগে ব্যাপক হারে বাংলাদেশে ঢোকা শুরু করে। বাংলাদেশ সরকার এই শরণার্থীদের ফিরিয়ে নিতে আহ্বান জানিয়ে এলেও মিয়ানমারের দিক থেকে সাড়া মেলেনি।
# ২০১২ সালে মিয়ানমারে নতুন করে জাতিগত দাঙ্গা শুরু হলে সীমান্তে রোহিঙ্গাদের চাপ বাড়ে। দীর্ঘদিন ধরে শরণার্থীদের ভার বহন করে আসা বাংলাদেশ সে সময় নতুন করে কাউকে ঢুকতে না দেওয়ার অবস্থান নেয়।
# কক্সবাজারের কুতুপালং ও নয়াপাড়ায় বর্তমানে রোহিঙ্গাদের দুটি শরণার্থী শিবির রয়েছে। এতে নিবন্ধিত ৩৪ হাজার শরণার্থী থাকলেও এর বাইরে পাঁচ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে রয়েছে বলে সরকারের হিসাব।
# বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে রোহিঙ্গারা বিদেশে বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। মিয়ানমার হয়ে মাদক ও মানব পাচারসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও গোয়েন্দাদের দাবি। অন্যদিকে শরণার্থী শিবিরের এই অবস্থান বাংলাদেশের প্রধান পর্যটন কেন্দ্রের জন্য হুমকি হিসেবে দেখেন অনেকে।
# পর্যটন শহর কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরগুলো নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলাটির চরাঞ্চলের ৫শ’ একর জায়গায় নেওয়ার পরিকল্পনা হচ্ছে বলে গতবছর বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
মিয়ানমার থেকে আসা উদ্বাস্তুর প্রকৃত সংখ্যা জানতে সম্প্রতি একটি জরিপ পরিচালনার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার প্রতিবেশী দেশের এই শরণার্থীদের পরিচয়পত্র দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে, যাতে তারা স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ বিভিন্ন সেবা এবং বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যায় না পড়ে।
শরণার্থী সঙ্কটের সমাধানে আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে মানুষের নিয়মতান্ত্রিক, নিরাপদ ও দায়িত্বশীল অভিবাসনের সুযোগকে আমাদের এগিয়ে নিতেই হবে।”
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ, পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হকও এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
শরণার্থী বিষয়ক এই বৈঠকে অংশ নেওয়ার আগে দুপুরে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুনের দেওয়া ভোজসভায় অংশ নেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।